জাকির মূসা রাহিমাহুল্লাহু শুধু ভারতের জন্যই নয় বরং পাকিস্তানের জন্যেও মাথা ব্যাথার কারণ ছিলেন। এমনটাই মন্তব্য করছেন কাশ্মীরীরা।
আব্দুল্লাহ কাশ্মীরী বলেন, কেননা পাকিস্তান শুরু থেকেই কাশ্মীরকে নিজেদের আওতাভুক্ত করার চেষ্টারত ছিল। আর এটাকে বাস্তবায়ন করতে পাকিস্তান সরকার নিজেদের মত করে কিছু জিহাদি দলকে সাজায় যেই দলগুলোকে বিভিন্ন ধরণের সহায়তা করতো পাকিস্তান। যেমন জামাতুত দাওয়াহ, জাঈশে মুহাম্মদ, হরকাতুল মুজাহিদিন, হিজবুল মুজাহিদিন, আল বদর ইত্যাদি।
সংগঠন গুলোকে সরকারিভাবেই উদ্ধুদ্ধ করা হতো, তারা যখনই পকিস্তান সরকারের অনুমতি পেত তখনই কেবল হামলা পরিচালনা করতো, যখন অনুমতি হতনা তখন হামলাও করা হতনা। মোটকথা পাকিস্তান সরকার নিজ সার্থের জন্যই এই দলগুলোকে ব্যববহার করতো এবং এই দলগুলোর মাধ্যমেই “কাশ্মীর বনেগা পাকিস্তান” স্লোগান দিতে উদ্ধুদ্ধ করা হত সাধারণ কাশ্মীরীদেরকে।
শহিদ বুরহান ওয়ানী রহ. ছিলেন হিজবুল মুজাহিদীন এর প্রধান, তিনি চেয়েছিলেন কাশ্মীরকে প্রকৃত জিহাদ চালু করতে, চেয়েছিলেন পাকিস্তানের অধিনে জিহাদ পরিত্যাগ করে আল্লাহর অধীনে ও আল্লাহর জন্যই জিহাদ করতে, কিন্তু তিনি এটাও ভালো করে জানতেন যে, তিনি ও তার কয়েকজন সাথী ছাড়া বাকি অধিকাংশ কমান্ডারই মডারেট, তাই তিনি কৌশলে কাজ করতে শুরু করেন। কিন্তু তিনি বেশিদেন এই লক্ষ্যে আর কাজ করতে পারননি। ভারতীয় বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত অবস্থাতেই তিনি শাহাদাত বরণ করেন। তার শাহাদাতের পর হিজবুল মুজাহিদীন এর দায়িত্বে আসেন জাকির মুসা। প্রায় একবছর তিনিও কৌশলে কাজ করতে থাকেন, এরপর একদিন এক অডিও বার্তায় তিনি ঘোষণা করলেন কাশ্মীর বনেগা দারুল ইসলাম। এই ঘোষণা ছিল পাকিস্তান এবং তাদের অনুগত সকল দল ও ব্যাক্তির গালে সরাসরি চপেটাঘাত। যা সহ্য করতে পারেনি তারা। শুরু হয় জাকির মুসার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরণের ষড়যন্ত্র। হিজবুল মুজাহিদীনের দায়িত্বে তিনি বেশি দিন আর থাকতে পারেননি, কারণ এখানে তিনি ও বুরহান ওয়ানির কয়েকজন সাথী ছাড়া অধিকাংশ কমান্ডাররাই ছিল পাকিস্তান/ মডারেট পন্থি। এমতাবস্থায় তিনি হিজবুল মুজাহিদীনের আমিরত্ব ছেড়ে দিয়ে মাত্র ২০ জন মুজাহিদ সাথীকে নিয়ে নতুন দল ঘোষণা করলেন।
জাকির মূসা রাহিমাহুল্লাহু হিজবুল মুজাহিদীন ছেড়ে দিয়ে যখন ময়দানে সাহসী ভূমিকা পালন করতে শুরু করলেন, তখন থেকে গোটা কাশ্মীরের সাধারণ জনগণ জাকির মূসা রাহিমাহুল্লাহু এর নেতৃত্বে আসতে লাগলেন, আর তিনি আনসার গাযওয়াতুল হিন্দ নামে একটি নতুন তাঞ্জিম গঠন করলেন এবং ঘোষণা দিলেন, এই তাঞ্জিমের লক্ষ্য হচ্ছে কাশ্মীরকে দারুল ইসলাম বানানো এবং তাগুতের অধিনে জিহাদ ত্যাগ করে আল্লাহর অধিনে জিহাদ করা। কাশ্মীরকে পাকিস্তান কিংবা ভারতের কোন অংশ বানানোর জন্য আমাদের এই যুদ্ধ না।।
তিনি নিজ অডিও বার্তায় আরো বললেন, আমরা যেই গনতান্ত্রিক তাগুতি সিস্টেম থেকে স্বাধীনতা চাচ্ছি, সেই সিস্টেম তো পাকিস্তানে বিদ্যমান, তাহলে কাশ্মীরকে স্বাধীন করার উদ্দেশ্যেই বা কী হল!!
জিহাদের ভিত্তি জাতীয়তাবাদ নয়, বরং আল্লাহর শরিয়তের প্রতিষ্টা হওয়া চাই, আমরা কাশ্মীরকে পাকিস্তানের অংশ নয় বরং ইসলামী রাষ্ট বানাতে চাই, কেননা এটাই শহিদ আফজাল গুরু ও শহিদ বুরহান ওয়ানী রাহিমাহুল্লাহু এর স্বপ্ন ছিল।
বাস্তবতা হচ্ছে এটাই যে শহিদ আফজাল গুরু ও বুরহান রাহিমাহুল্লাহু শরিয়ত প্রতিষ্টার আকাঙ্ক্ষা করতেন আর শুধু আমরাই নই বরং পুরো কাশ্মীর শরিয়ত চায়।
এই অডিও বার্তার মাধ্যমে প্রায় ৭০ বছর কাশ্মীর যুদ্ধে সর্বপ্রথম কোন দল কাশ্মীরকে দারুল ইসলাম বানানোর ঘোষণা করলো।
এই বার্তার পর জাকির মুসা রহ. কে বলা হল, আপনি আমাদের একতাকে নষ্ট করে দিয়েছেন।
এমন অভিযোগের জবাবে এই মহান বীর বলেছিলেন- যদি তোমাদের এই একতা আমাকে এবং কাশ্মীরীদেরকে সত্যকে প্রত্যাখ্যান করতে বলে, তাহলে আমিই সর্বপ্রথম এই একতার বিরুদ্ধে অবস্থান করবো, আমি এমন একতাকে প্রত্যাখ্যান ও ছুড়ে ফেলবো। আর এজন্য যদি আমাকে একাও এই পথে চলতে হয় তবুও, আমি সত্যের অনুগামী হয়েই সামনে বাড়বো।
এরপর হিজবুল মুজাহিদীন ও জামাতুত দাওয়াহসহ বিভ্রান্তসৃষ্টকারীরা জামা’আত “আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ” কে বিভিন্ন অপবাদ দিতে শুরু করে। কেউ কেউ তাদেরকে ইন্ডিয়ার দালাল বলতেও দ্বিধা করেনি! আমির জাকির মূসা রাহিঃ এর প্রতিউত্তরে বলেছিলেন, ইনশাআল্লাহ্ আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ, আমি ও আমার সাথীরা আল্লাহর রাহে নিজেদের রক্ত দিয়েই এসব অপবাদের মোকাবেলা করবো।
কিন্তু ঐ লোকেরা নিজেদের আচলকে কিভাবে পবিত্র করবে, যারা জাতীয়তাবাদের কথা বলে, যারা তাগুত শাসকদেরকে খোদার আসনে বসিয়ে নিয়েছে ও মদ্যপ আর্মি জেনারেলদেরকে ফেরশতা মনে করে! তাদের ও সামেরির মাঝে কী পার্থক্য!!
আর আল্লাহ তার বান্দাকে তার দাবীর উপর সত্য (জাকির মুসা রহ এর শাহাদাতের মাধ্যমে) প্রমাণিত করেছেন, এছাড়া জাকির মূসা রাহিমাহুল্লাহু পাকিস্তান ও পাকিস্তান রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে জিহাদরত জিহাদি তাঞ্জিমগুলো অর্থাৎ হিজবুল আহরার ও তাহরিকে তালেবান পাকিস্তানকে সসমর্থণ করতেন। জাকির মূসা রাহিমাহুল্লাহু তার এক বয়ানে পাকিস্তান জনসাধারণকে তাহরিকে তালেবান পাকিস্তান ও হিজবুল আহরারকে সমর্থন দেওয়ার আহবান করেন এবং টিটিপি ও হিজবুল আহরারকে পরস্পরের মাঝে ঐক্যের পরামর্শ দেন।
এছাড়াও আল-হুর মিডিয়া হতে প্রচারিত মহান এই বীর তাঁর সর্বশেষ বার্তাতে বলেছিলেন-
আমার প্রিয় ভাইয়েরা! এই বিষয়টি কি এখন পরিষ্কার নয় যে, যখন পাকিস্তান সরকারের উপর আঘাত লাগল, তখন সে একদিনের মধ্যেই ভারতের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তত হয়েগেল!
আর যদি আমাদের অবস্থা দেখি, যখন কাশ্মীরে প্রতিমুহূর্তে আমাদের মায়েরা আঘাতপ্রপ্ত হচ্ছেন, আমাদের প্রিয় ও সম্মানীত বোনেরা আঘাতপ্রাপ্ত হচ্ছে, যখন আমাদের ভাইদের শরীরে আঘাত প্রাপ্ত হচ্ছে, তখন এই দেশ (পাকিস্তান) ভারতের সাথে বন্ধুত্বতার সম্পর্ক করতে থাকে। এমন কোন বিষয়, যার কারণে পাকিস্তানের যুদ্ধবিমানগুলো ভারতের আকাশসীমায় প্রবেশ করেনা! যখন আমাদের কলিজার টুকরা আসিয়া ও নিলুফারদের রক্তে ভিজে গিয়েছিল এই জমিন!
পাকিস্তানকে কে বাধা দিলো ভারতে প্রবেশ করতে, যখন শোপিয়ান এবং কুলগামে মুজাহিদদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন ও আগুনে ঝলশে যাওয়া লাশ তাদের আপনদের কাছে এসেছিল!?
যখন ২০০৮,২০১০ ও ২০১৬ তে আমাদের শিশুরা পাথর নিয়ে আন্দোলন করছিল, তখন সেসময় তাদের শরিরগুলো হিন্দুদের গুলিতে ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়েছিল।
মনে রাখবেন! আপনাদের জন্য এদের কোন ভালোবাসা নেই, যেমনটা আমার প্রিয় সাথী ও সহযোগী শহিদ কমান্ডার রিহান খান রহ. বলেছেন যে, এদেশের (পাকিস্তান) সরকারের তো ইমান ও বিশ্বাস নেই, তারা শুধু তাদের ভুখন্ডের চিন্তায় চিন্তিত।
[আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে পাকিস্তানী হুকুমত ও হিন্দুস্তানী কাফেরদের ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা করুন।]
সবশেষে জাকির মুসা রহ./আনসার গাজওয়াতুল হিন্দ ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের নিকট বায়াতবদ্ধ একটি জামা’আত হয়েই কাশ্মীরে কাজ করছেন।