অনলাইনে ইসলামপন্থীদের মধ্যে বহুল আলোচিত-সমালোচিত
মুভ ফাউন্ডেশের বিভিন্ন সেমিনার, মত বিনিময় সভা ইত্যাদিতে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে কওমি মাদ্রাসাকেন্দ্র
আসলে মুভ ফাউন্ডেশন কী? এদের কি এতোই ক্ষমতা যে এর সমালোচনা করলে জেল-যুলুম অত্যাচার নেমে আসবে? মুভ নিয়ে আলোচনা করতে গেলে আগে আমাদের ২টি বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকতে হবে।
১) মুভ ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠান হিসাবে বড় কোন খেলোয়াড় না। কিন্তু তাদের পিছনে বড় খেলোয়াড় আছে। তাই আলাদা করে মুভ নিয়ে চিন্তা না করে, তাদের পিছনের বড় খেলোয়াড় ও তাদের এজেন্ডা নিয়ে চিন্তা করতে হবে। মুভ ফাউন্ডেশন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না। কিন্তু মুভ এজেন্ডা গুরুতর একটি বিষয়।
২) আল ওয়ালা ওয়াল বারা। যদি ইসলামী আকিদাহর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ বিষয়টি সম্পর্কে কেউ অজ্ঞ হয় তাহলে মুভ এজেন্ডার বিরুদ্ধে সে টিকে থাকতে পারবে না। মুভকে কেবল প্রাচ্যবাদী কিংবা আধুনিকতাবাদীদের
এ ভূমিকার পর আসুন সংক্ষেপে মুভ ফাউন্ডেশনের ব্যাপারে জেনে নেওয়া যাক।
মুভ ফাউন্ডেশন- প্রতিষ্ঠা ২০১৩ সালে।
এটি একটি এনজিও। সামনে তরুণদের রেখে কাজ করে। তরুণদের দ্বারা পরিচালিত তরুনদের জন্য, এই ধরণের একটি গল্প নিয়ে তারা সমাজে কাজ করে। বিশেষভাবে তাদের আগ্রহ হল মাদ্রাসার ছাত্রদের নিয়ে। মুভের ভাষ্য মতে তারা মাদ্রাসা ছাত্রদের সামাজিক বিচ্ছিন্নতা দূর করতে আগ্রহী। তারা বলে যে তারা শ্রদ্ধা, সম্প্রতি, শান্তির প্রচার ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে। কিন্তু তাদের মূল কাজের জায়গা হল CVE – Countering violent extremism বা সহিংস উগ্রবাদের মোকাবেলা।
সহিংস উগ্রবাদের মোকাবেলা – এ কথাটি শুনতে ভালো। তবে সচেতন মুসলিম পাঠককে বুঝতে হবে যে ২০০১ এর বরকতময় হামলার পর ইসলামের বিরুদ্ধে আমেরিকার সর্বাত্মক যুদ্ধের বিষয়টি সকলের সামনে উন্মুক্ত হয়ে গেলে, আমেরিকা তাদের কৌশল পরিবর্তন করে। নব্য আমেরিকান কৌশল অনুযায়ী ‘সহিংস উগ্রবাদের মোকাবেলা’ শব্দের অর্থ হল ইসলামের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধের মোকাবেলা করতে চাওয়া এবং ইসলামী শাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাওয়া মুসলিমদের চিহ্নিত করা এবং আমেরিকান আগ্রাসন মোকাবেলার সকল কার্যকরী পথ বন্ধ করে দেওয়া। সহজ ভাষায় বর্তমানে যেসব কাশ্মীরি যুবক ইন্ডিয়ার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে অস্ত্র ধরে কাশ্মীরের মাটিতে ইসলামের ঝান্ডা উঁচু করতে চায় আমেরিকার ভাষ্যমতে তারা সশস্ত্র উগ্রবাদী। কওমি মাদ্রাসা কেন্দ্রিক যুবকরা যেন ইসলামের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে আমেরিকার আগ্রাসনের বিরোধিতা না করে, ইসলামী শরীয়াহ বাস্তবায়নের চেষ্টা না করে গণতন্ত্র এবং এসিরুমের এক্টিভিজম নিয়ে ব্যস্ত থাকে তা নিশ্চিত করাই হল মুভের এজেন্ডা।
মুভ ফাউন্ডেশনের পিছনের খেলোয়াড় কারা? এ প্রশ্নের জবাব নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বেশ জলঘোলা করার চেষ্টা চলছে। কাজেই এ বিষয়টি সম্পর্কে স্পষ্টভাবে জানা সকল সচেতন মুসলিমের জন্য জরুরী।
মুভ ফাউন্ডেশনের বিদেশী পার্টনারদের মধ্যে আছে
১) জার্মান দূতাবাস
২) কাউন্টার টেরোরিজম কেপাসিটি বিল্ডিং প্রোগ্রাম অব গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডা
৩) আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে তাদের সম্পর্ক আছে – ২০১৮ এর অক্টোবরে তারা সোনারগা হোটেলে অনুষ্ঠান করেছে। এ প্রোগ্রামের পার্টনার ছিল, আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্ট। অনেকে দেশীয় সুশীল এতে উপস্থিত ছিল। ইসলামী অঙ্গনের অনেকেও উপস্থিত ছিল এই অনুষ্ঠানে। মূল বক্তা এসেছিল আমেরিকা থেকে। এই অনুষ্ঠানের মূল বিষয় ছিল সম্ভবত নির্বাচনকে সামনে রেখে ফেক নিউজের ব্যাপারে।
এই সবগুলো তথ্য নেওয়া হয়েছে মুভ ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট থেকে। যে কেউ গুগল থেকে এ তথ্যগুলো সন্দেহাতীতভাবে যাচাই করে নিতে পারবেন। এখান থেকে স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে, উভ ফাউন্ডেশনের ঘোষিত দুটি পার্টনার হল জার্মান সরকার এবং কানাডা সরকার। কারণ বাংলাদেশের জার্মান দূতাবাস এবং কানাডা সরকারের অংশ ‘গ্লোবাল এফেয়ার্স কানাডা’ কোন এক দুইজন ব্যক্তি চালায় না। এরা সরকারের নির্দেশেই চলে। এছাড়া আমেরিকান স্টেট ডিপার্টমেন্টও আমেরিকান সরকার চালায়। তাহলে বুঝা গেল, আমেরিকা, জার্মানী এবং কানাডা – এই তিন ক্রুসেডার রাষ্ট্র হল মুভ ফাউন্ডেশনের ঘোষিত পৃষ্ঠপোষক। মুভ ফাউন্ডেশন এদের এজেন্ডাই বাস্তবায়ন করে। আর এদের এজেন্ডা কী, সেটা আশা করি সুস্থ বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন কোন মুসলিমের বুঝতে বেগ পেতে হবে না। এদের অন্যান্য পার্টনাদের মধ্যে আছে – UNDP। বাংলাদেশের যুব মন্ত্রনালয় বা এ জাতীয় কোন একটা মন্ত্রনালয়ের সাথে সমন্বয় করেও এর কাজ করছে। এছাড়া সিটিটিসি এর সাথে এদের খুব খাতির। এরকম হওয়া অত্যন্ত স্বাভাবিক, কারণ উল্লেখিত সকলে বাস্তবে ক্রুসেডার-জায়নবাদীদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে।
এর বাইরে মুভ ফাউন্ডেশন বিভিন্ন ধরণের লোককে ব্যবহার করছে। এর মধ্যে আছে আওয়ামী লীগের মাহবুব হানিফ, বিএনপির শামা ওবায়েদ থেকে শুরু করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের
মুভ ফাউন্ডেশনের ব্যাপারে যেসকল তথ্য দিলাম তার সবই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। অধিকাংশ তথ্য খোদ মুভের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া। মুভের সাইটেই দেওয়া আছে যে তাদের পার্টনার হল জার্মানী আর কানাডা। তাদের সাইটেই ছবি আছে যে আমেরিকার স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাথে মিলে তারা অনুষ্ঠান করেছে। মুভ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা হিসাবে যাকে সামনে রাখা হয়েছে তার সাথে বাংলাদেশে অবস্থিত বিভিন্ন ইউরোপীয় দূতাবাসের সম্পর্কের বিষয়টি তার ফেসবুক টাইমলাইনে দেওয়া যাছে। মুভের বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রোফাইলে দেওয়া আছে যে তারা CVE বা ‘সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলা’র জন্য কাজ করে।
এছাড়া বর্তমান বিশ্বে আমেরিকার পরিচালিত ‘সহিংস উগ্রবাদ মোকাবেলা’ কী? সেটা স্পষ্ট। উইকিলিক্স থেকে শুরু করে, পশ্চিমা বিশ্বের অনেক নিরপেক্ষ, বিবেকবান গবেষক, মুসলিম এক্টিভিস্টসহ অনেকে এই CVE কার্যক্রমের বাস্তবতা উন্মোচন করেছেন। বিস্তর লিখালিখি এ নিয়ে হয়েছে। এটি যে ইসলামের বিরুদ্ধে আমেরিকা ও ইস্রাইলের যুদ্ধের একটি অংশ সেটি এখন খোদ পশ্চিমে স্পষ্ট। এমনকি পশ্চিমের বামপন্থীরা খুলাখুলি এ নিয়ে কথা বলে। আর একজন মুসলিম যার আকিদা সঠিক, যার অন্তরে ব্যাধি প্রবল হয়ে যায়নি তার কাছে এটি দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। তারপরও দেখা যায় প্রতিবার মুভ ফাউন্ডেশনের অনুষ্ঠানে যাবার পর যখন বিতর্ক হয়, তখন অনেকে বলেন, মুভ কী করে আমার জানা নেই। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের কোন সত্যতা আমি পাইনি – ইত্যাদি। এধরণের কথা কি আদৌ গ্রহণযোগ্য? এরা কি অজ্ঞান? নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে না জানার ভান করা মিথ্যাবাদী?
বস্তুত এ ধরণের মানুষেরা উম্মাহর সাথে গাদ্দারি করছে। ইসলামের বিরুদ্ধে মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধে ক্রুসেডার আমেরিকা, জার্মানি, কানাডাসহ অন্যান্যদের সহযোদ্ধা হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে। অতঃপর সগর্বে এরা এসব অনুষ্ঠানের ছবি প্রকাশ করছে এবং ছেলেভুলানী নানা অজুহাত দিয়ে নিজেদের কাজকে জায়েজ করছে। বাস্তবতা হল, বুঝে হোক না বুঝে হোক এরা গাদ্দারি করছে। দুঃখজনক বিষয় হল একসময় উপমহাদেশে ইসলামী ঘাঁটি হিসাবে পরিচিত কওমি মাদ্রাসার আজ বাংলাদেশে এমন অধঃপতন হয়েছে যে এই গাদ্দাররা কোন রাখঢাক ছাড়া এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কথা বললেও কওমি অঙ্গন থেকে কেউ এর বিরোধিতা করছে না। বরং নানা ধরণের ধার করা বুলি দিয়ে সাফাই গাওয়া হচ্ছে। এই গাদ্দারদের চিনে রাখা, তাদের পরিচয় সকলের সামনে প্রকাশ করা, তাদের সামাজিকভাবে বয়য়কট করা এবং মুভ এজেন্ডার বিরোধিতা করা সকল ইমানদার মুসলিমের দায়িত্ব।
উৎস: রামযি ইউসুফের ব্লগ ফেসবুক পেজ।