বাংলাদেশের ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ কোন নৈতিক আদর্শবান দল নয়। খুন, ধর্ষণ, হত্যা, রাহাজানি, মাদকব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জমি দখল, ভবন দখল এমনকি ব্যাংক দখলের সাথেও জড়িয়ে আছে এ দলের নাম। আওয়ামী লীগ এমন একটি দল যারা সবসময় মাঠদখল এবং লাঠালাঠির রাজনীতি করে আসছে। গত ১১ বছরে বাংলাদেশের বিপুল পরিমাণ অর্থ ও সম্পদ তারা শুষে নিয়েছে। শেয়ারবাজার কেলেঙ্কারি থেকে শুরু করে বাংলাদেশের ব্যাংকের অর্থ চুরি, অসংখ্য ঘটনায় তারা হাতিয়ে নিয়েছে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকা। এসব অপরাধের কোনটারই বিচার হয়নি। হবার কথাও না। কারণ এসব অপরাধের সাথে জড়িত আওয়ামী লীগের তৃণমূল পর্যায়ের লোকজন থেকে শুরু করে মন্ত্রী পরিষদের সদস্য এবং হাসিনা নিজে। এগুলো বাংলাদেশের ওপেন সিক্রেট।
তবে, এবারে ঘটেছে ভিন্ন ঘটনা! চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা আর টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে নিত্যদিনের অভিযোগ হলেও, এবার এসব অভিযোগেই ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করলো শেখ হাসিনা! এতদিনের অপকর্মের পর হঠাৎ কি জেগে উঠলো আওয়ামী লীগের নৈতিকতা? এতো রাতের বেলা সূর্য উদিত হওয়ার মত অসম্ভব ব্যাপার। যে অপরাধের কারণে ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্বকে বিদায় করা হলো, সেই একই অপরাধে অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের ছোট-বড় প্রায় সকল নেতা। তাহলে কেন এই রদবদল?
ছাত্রলীগের ঘটনার রেশ কাটার আগেই শুরু হল যুবলীগের নেতাদের বিরুদ্ধে অভিযান। বহু বছর যাবৎ প্রশাসনের প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য মদদে,সংসদ সদস্য ও ক্ষমতাসীন দলের উচ্চপদস্থ নেতাকর্মীদের নেতৃত্বে চলে আসা ঢাকার বেশ কয়েকটি জুয়ার আড্ডাখানার বিরুদ্ধে হঠাৎ কেন অভিযোগ-অভিযান? কেন আজ হঠাৎ যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা গ্রেফতার? হঠাৎ হাসিনার এ পরিবর্তনে বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ হয়ে যুবলীগ চেয়ারম্যান সংবাদ সম্মেলনে তো বলেই ফেললো, এতদিন কি এগুলো কেউ জানতো না? হঠাৎ কেন ধরপাকড় চলছে? প্রশ্নটা আসলে আমারও!
যে ছাত্রলীগ আর যুবলীগ দিয়ে ক্যাম্পাস আর রাজপথ দখল করে রেখেছে হাসিনা, আজ কেন তাদের বিরুদ্ধে লেলিয়ে দেয়া হল হুকুমের গোলাম র্যাব আর পুলিশ বাহিনীকে? আবার গ্রেফতার যুবলীগ নেতা শামীমের সাথে র্যাব প্রধান বেনজিরের দহরম মহরমের খবরও ফাঁস হয়েছে। বেনজিরের মাধ্যমেই র্যাব হেডকোয়ার্টারের ৫০০ কোটি টাকার কাজ পেয়েছিল শামীম। সব মিলিয়ে সৃষ্টি হয়েছে এক ঘোলাটে পরিস্থতির। মানুষের মনে ঘুরছে নানা প্রশ্ন।
এসব প্রশ্নের সম্ভাব্য জবাব হিসাবে বাজারে রটেছে বেশ কিছু গুজব।
এক ভাষ্যমতে শেখ হাসিনা ক্যান্সারে আক্রান্ত। হাসিনার পর ক্ষমতায় কে আসবে তা নিয়ে দ্বন্দ্ব চলছে শেখ পরিবারে। হাসিনার সাথে তার বোন রেহানার চলছে ঠাণ্ডা লড়াই। ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে লীগের অনেকেই ঝুঁকছে রেহানার দিকে। ছাত্রলীগের সর্বোচ্চ নেতৃত্বে রদবদল, যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার- এগুলো সেই দ্বন্দ্বেরই প্রতিক্রিয়া বলে দাবি অনেকের! এভাবে রেহানাপন্থীদের সরিয়ে দেয়া হচ্ছে বলেও অনেকেই মন্তব্য করেছেন।
এসব গুজবের সত্য-মিথ্যা নির্ণয় করা কঠিন। সময়ই একসময় বলে দিবে এগুলোর বাস্তবতা। তবে সবমিলিয়ে তাগুত সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে যে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে, বিবাদ চলছে, তা স্পষ্ট।
এ ঘটনাগুলো শুনে মনে পড়ছে প্রায়ই সংবাদপত্রের পাতায় দেখা এক শিরোনামের কথাঃ ‘আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের দু’গ্রুপের সংঘর্ষ!’। ঐ ঘটনাগুলো আঞ্চলিক। কিন্তু, এবার সম্ভবত আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বেও আধিপত্য বিস্তারের দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। যেকোনমূল্যে ক্ষমতা অর্জনের আদর্শে যারা বিশ্বাসী তারা ক্ষমতার জন্য দলীয় নেতাকেও ‘সরিয়ে দিতে’ দ্বিতীয়বার ভাববে বলে মনে হয় না।
পুরো পরিস্থিতিকে আরো ঘোলাটে করে কিছু আওয়ামী নেতার বক্তব্য। যেমন হাসিনা সরকারের ধর্ম(!) প্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ বলেছে, ‘শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ষড়য্ন্ত্র হলে গেরিলা যুদ্ধ করে প্রতিহত করা হবে।’ গেরিলা যুদ্ধ তো করে বৃহৎ শক্তির বিরুদ্ধে অপেক্ষাকৃত দুর্বল প্রতিপক্ষ। বাংলাদেশে আজ সবচেয়ে বড় খেলোয়ার আওয়ামী লীগ। পুলিশ-প্রশাসন-সেনাবাহিনী, তাদেরই হাতে। তাহলে তারা কাদের বিরুদ্ধে গেরিলা যুদ্ধ করবে? কে সেই প্রবল প্রতিপক্ষ? দেশের কেউ নিশ্চয় না। তাহলে কি ভারত?
শেখ আব্দুল্লাহরা কি মনে করছে ভারতের মদদে আওয়ামী লীগের এক অংশ হাসিনাকে সরিয়ে দেয়ার চক্রান্ত করছে? আর, সেই ষড়যন্ত্র প্রতিরোধেই কি হাসিনা সরকার অভ্যন্তরীণ ‘শুদ্ধি অভিযান’ চালাচ্ছে? রব্বানী-শোভন-খালেদ-শামীমরা কি এ চক্রান্ত দমনের অংশ হিসাবে আজ দণ্ডিত? প্রশ্ন অনেক, কিন্তু দালাল হলুদ মিডিয়াতে চেপে যাচ্ছে সবই।
অন্যদিকে, হাসিনা সরকারের অর্থের ঝুলিও খালি হয়ে পড়েছে। অর্থাভাবে আছে সরকার। সরকারী ব্যাংকগুলোর টাকা শেষ হওয়ার পর হাসিনার নজর এখন পড়েছে পেট্রো বাংলার মত বিভিন্ন স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর দিকে। ১২ই সেপ্টেম্বর প্রকাশিত প্রথম আলোর ‘টাকার খোঁজে সরকার’ শিরোনামের রিপোর্ট অনুযায়ী, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছে সোয়া ২ লাখ কোটি টাকা আছে। যার ৭৫% টাকা দিয়ে সরকারের খরচ মেটাতে একটি নতুন আইনের খসড়া অনুমোদন করেছে মন্ত্রিপরিষদ। কিন্তু, এতে আবার অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের সংগঠন ‘এবিবি’র চেয়ারম্যান। তার মতে, এভাবে টাকা তুলে নিলে ব্যাংকগুলো বড় ধরণের সমস্যায় পড়ে যাবে। আসলে শুধু ব্যাংক না, এভাবে টাকা তোলা হলে ভেঙ্গে পড়বে দেশের পুরো অর্থনীতি। কেবল গরীব না, পেটে লাথি পড়বে শহুরে মধ্যবিত্তেরও। অন্যদিকে চীনও সরে পড়ছে সরকারের পাশ থেকে। জানিয়ে দিয়েছে আপাতত নতুন কোন অর্থায়ন তারা করবে না।
কিন্তু, সরকারের অর্থ চায়। অনুগত চ্যালাচামুণ্ডাদের পুষতে বিপুল অর্থ দরকার হাসিনার। তাই, বিশাল এই অর্থ চাহিদা মেটাতে দেশ যে বড় ধরণের অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।
একদিকে সরকারের অভ্যন্তরীণ বিবাদ অন্যদিকে দেশের চরম অর্থনৈতিক বিপর্যয়। সবমিলিয়ে জটিল আকার ধারণ করছে দেশের পরিস্থিতি। আর, এরকমই একটি সুযোগের অপেক্ষায় হয়তো দিন গুণছে এদেশের শত্রু এবং মুসলিমদের শত্রু উগ্র হিন্দুরা। উগ্র হিন্দুরা প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার। কীভাবে তা প্রতিষ্ঠিত হবে তার ইঙ্গিতও সাম্প্রতিক সময়ে তারা দিয়েছে।
একদিকে, বাংলাদেশের প্রশাসনিক কার্যালয় থেকে শুরু করে সকল ক্ষেত্রে উচ্চপদস্থ জায়গায় উগ্র হিন্দুদের বসানো হচ্ছে, ইসকনের বেশে চলছে দেশে উগ্র হিন্দুত্ববাদের প্রচার, বাংলাদেশে কাল্পনিক হিন্দু নির্যাতনের নালিশ ট্রাম্পের কাছে দেয়া হচ্ছে। অন্যদিকে আবার ভারতীয় উগ্র হিন্দু নেতারা বাংলাদেশ দখলের প্রকাশ্য হুমকি দিচ্ছে। হুমকি দিচ্ছে আসাম থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ এদেশে ঠেলে দেয়ার। এরই মধ্যে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও অন্যান্য ইস্যুকে কেন্দ্র করে দিন দিন অবনতি হচ্ছে দেশের পরিস্থিতির। আর এরকম এক পরিস্থিতির অপেক্ষাতেই হয়তো রয়েছে হিন্দুত্ববাদী সন্ত্রাসীরা। হয়তো এমন কোন সুবর্ণ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে তারা আরো এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার চেষ্টা করবে উপমহাদেশে রামরাজত্ব প্রতিষ্ঠার প্রকল্পকে।
একমাত্র গাধারাই লীগ করতে পারে