ভারতের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ তেলেঙ্গানার রাজধানী হায়দ্রাবাদে এক পশু চিকিৎসক তরুণীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ ও হত্যার পর নৃশংসভাবে তার মরদেহ পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।
কলকাতাভিত্তিক আনন্দবাজার পত্রিকার এক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, হত্যার প্রায় ৩ ঘণ্টা আগে ওই তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণের পর হত্যার ছক কষা হয়েছিল। নৃশংস এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় দেশটিতে তীব্র ক্ষোভ এবং শোকের ছায়া নেমে এসেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী তরুণীর স্কুটারের চাকা ফুটো করে দিয়েছিল ঘাতকরা। চাকা ঠিক করে দেওয়ার কথা বলে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সেই স্কুটার। তারপর চারজন মিলে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করেছিল তাকে। শেষে খুন করে পেট্রল-ডিজেল ঢেলে পুড়িয়ে দিয়েছিল তরুণীর মরদেহ।
তেলঙ্গানায় গত বুধবারের এই ঘটনায় শিউরে উঠেছে পুরো ভারত। শুক্রবার ২৬ বছরের ওই তরুণীর আধপোড়া দেহাংশ উদ্ধার করা হয়েছে। মোহাম্মদ আরিফ (২৬), জল্লু শিবা (২০), জল্লু নবীন (২০) এবং চিন্তকুন্ত চেন্নাকেশভুলু (২০) ট্রাকের কর্মী। হায়দ্রাবাদের কাছে শামশাবাদ টোল প্লাজায় গত বুধবার রাতে ট্রাকের এই কর্মীদের আচরণ সন্দেহজনক মনে হওয়ায় নিজের বোনকে ফোন করে ওই তরুণী বলেছিলেন, ‘কয়েকজন অচেনা লোক ঘুরে বেড়াচ্ছে এখানে। আমার সঙ্গে কথা বলতে থাক।’
কল্লুরু গ্রামের একটি পশু-হাসপাতালে কাজ করতেন ওই তরুণী। ঘটনার দিন সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পথে প্রথমে গোচিবাওলিতে এক চর্মচিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন তিনি। নিজের স্কুটারটি শামশাবাদ টোল প্লাজার কাছে রেখে ট্যাক্সি নিয়ে ওই চিকিৎসকের কাছে যান তিনি। ফিরে এসে দেখেন, স্কুটারের পেছনের চাকাটি পাংচার।
হায়দ্রাবাদ শহর থেকে শামশাবাদ প্রায় ৫০ কিলোমিটার দূরে। তরুণী ওই টোল প্লাজা থেকে রাত সোয়া ৯টার দিকে বোনকে ফোন করে বলেন, দুই ট্রাকচালক তাকে সাহায্য করবে বলছে। তার আপত্তি সত্ত্বেও টায়ার সারিয়ে দেবে বলে স্কুটার নিয়ে চলে গেছে একজন। বোন তাকে পরামর্শ দেন, স্কুটারটি রেখে ট্যাক্সি ধরে চলে আসতে। সে-ই শেষ কথা। পৌনে ১০টার দিকে বোন আবার চেষ্টা করে সেল ফোন বন্ধ পান ওই তরুণীর। পরের দিন সকালে শামশাবাদের আউটার রিং রোডের আন্ডারপাসের নিচে ওই চিকিৎসকের পোড়া দেহাংশ মেলে।
হায়দ্রাবাদ পুলিশ বলছে, বুধবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে টোল প্লাজায় তরুণী চিকিৎসককে স্কুটার রাখতে দেখেই তাকে ধর্ষণের ছক কষেছিল চার অভিযুক্ত। সেখানে বসে মদ পান করছিল তারা। তরুণী ট্যাক্সিতে চলে যেতেই স্কুটারের চাকা ফুটো করে দেয় নবীন। ওই তরুণী ফিরে আসার পরে আরিফ চাকা সারিয়ে দেওয়ার প্রস্তাব দেয়। স্কুটার নিয়ে শিবা চলে যায়। তখন আরিফ, নবীন এবং চিন্তকুন্ত টোল প্লাজার কাছেই একটি ঘরে টেনে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে তরুণীকে।
চাকা সারিয়ে ফিরে এসে ধর্ষণ করে শিবাও। তরুণীর মুখ চেপে ধরে আরিফ। এর পর স্কুটারটি নিয়ে কয়েক বোতল পেট্রল কেনে দু’জন। অন্য দু’জন আরিফের লরিতে করে দেহ নিয়ে যায় আন্ডারপাসে। কিছু ডিজেল বের করা হয় তরুণীর স্কুটার থেকেও। এরপর আন্ডারপাসের এক কোণে মরদেহ নামিয়ে তেল ঢেলে আগুন জ্বালিয়ে দিয়ে পালায় তারা। পরের দিন ভোরে এক দুধ-বিক্রেতা সেখানে দেহটি জ্বলতে দেখে পুলিশে খবর দেয়।