চলতি বছরের আগস্টে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদি কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন-বিষয়ক সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৭০ বাতিল করে। ওই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আগে থেকেই বিপুলসংখ্যক ভারতীয় মালাউন সন্ত্রাসী বাহিনী মোতায়েন থাকা ওই অঞ্চলে আরো প্রায় ৪০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করা হয় মোদির দমন ও অবৈধ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠা লোকজনকে ‘শান্ত’ করতে (পড়ুন: আরো নির্যাতন চালাতে)। ওই এলাকায় যাওয়া বা বের হওয়া নিষিদ্ধ করা হয়, এমনকি সাংবাদিকদের পর্যন্ত প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়। সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়, কাশ্মীরে স্বজন বা পরিবার সদস্য বা বন্ধুদের অবস্থা জানার কোনো উপায় থাকেনি বাইরের লোকজনের জন্য।
কাশ্মীরী জনগণের ওপর ভারতের বর্ধিত নির্যাতন থেকে তাদের রক্ষা করতে না পারলেও ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের দীর্ঘ দিন ধরে চলা নির্মম নির্যাতনের সাথে এর মিল দেখা যাচ্ছে। আর এই তুলনা ভারত সরকারের দৃষ্টি এড়ায়নি। ১৬ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কে একটি বেসরকারি অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে নিউ ইয়র্ক সিটির ভারতের কনস্যাল জেনারেল সন্ত্রাসী মালাউন সন্দীপ চক্রবর্তীর মন্তব্যে বিষয়টি বেশ ভালোভাবেই প্রকাশ হয়ে পড়ে। সে কাশ্মীরী হিন্দু ও ভারতীয় লোকজনকে বলেছে যে ইসরাইলি মডেল অনুসরণ করে কাশ্মীরে বসতি স্থাপন করবে ভারত। সে বলেছে, আমি বিশ্বাস করি যে সেখানকার নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হবে, ফলে হিন্দু পণ্ডিতরা ফিরে যেতে পারবে। আপনাদের জীবদ্দশাতেই আপনারা ফিরে যেতে পারবেন। আর আপনারা সেখানে নিরাপত্তা দেখতে পাবেন। কারণ বিশ্বে এ ধরনের একটি মডেল রয়েছে। ইসরাইলি লোকজন তা পারলে আমরাও পারব।
কাশ্মীরী জনগণের ওপর মোদির নির্যাতন বাড়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বেশির ভাগই এর নিন্দা করছে। তবে অন্যান্য ঘটনার আড়ালে চলে যেতে পারে নির্যাতনের খবর। কিন্তু কাশ্মীরী জনগণের দুর্ভোগ অব্যাহতই থাকবে।
মালাউন চক্রবর্তী ইসরাইলের উদাহরণ তুলে ধরেছে, যারা বিশ্ব কুফ্ফারদের প্রকাশ্য মদদে ফিলিস্তিনকে বিভক্ত করতে, এর জনগণকে নির্যাতন চালাতে, অবৈধ বসতি স্থাপনকে ব্যবহার করতে, ভূমি বাজেয়াপ্ত করতে, বর্ণবাদ চালাতে, সম্ভব সব ধরনের সন্ত্রাসবাদ চালাতে, অপহরণ করতে, খুন করতে, মুসলিম জাতিকে ধ্বংস করতে সব ধরনের নির্মম পন্থা অবলম্বন করতে সক্ষম হয়েছে। এগুলো আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন, মানবতাবিরোধী অপরাধ। আর এতে অর্থায়ন করে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। অন্য বেশির ভাগ লোক বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে না। মাঝে মাঝে কেবল নিন্দাসূচক কিছু কথা বলেই দায়িত্ব শেষ করছে। ইসরাইল যদি নৃশংসতা চালিয়ে পার পেতে পারে, তবে ভারত কেন পারবে না?
কানাডায় একটি ইহুদি সংগঠন একটি অনুষ্ঠানে দুজন বক্তাকে উপস্থাপন করে। এদের একজন ছিল এক হিন্দু পুরোহিত এবং অপরজন ছিল এক রক্ষণশীল ভাষ্যকার। এমনটা করা হয়েছিল কানাডিয়ানদের কাছে এই বিষয়টি প্রমাণ করতে যে জর্জ ওরওয়েলের ‘সাদা হলো কালো’ এবং ‘উঁচু হলো নিচু’ পূর্বাভাস নিশ্চিতভাবে ফলপ্রসূ হওয়ার প্রমাণ দিতে। অনুষ্ঠানে বলার চেষ্টা করা হয় যে ইসরাইল হলো চরমপন্থার বিরুদ্ধে। অথচ জায়নবাদের কথা চিন্তা করলে এর চেয়ে হাস্যকর আর কী হতে পারে। কারণ যে জায়নবাদের ওপর ভিত্তি করে ইসরাইল প্রতিষ্ঠিত হয়েছে সেটিই চরমপন্থী, বর্ণবাদী দর্শনভিত্তিক। ইসরাইল সৃষ্টি হয়েছে এই ধারণার ভিত্তিতে যে দেশটি হবে কেবল ইহুদি জনসংখ্যার দেশ। অথচ কানাডার জায়নবাদী গ্রুপটি আমাদের অন্য কথা শেখাচ্ছে।
২০১৪ সালে গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের নৃশংস ও প্রাণঘাতী বোমা হামলার সময় একটি ইসরাইলি প্রকাশনার সম্পাদকীয়তে বলা হয়েছিল, বিশেষ পরিস্থিতিতে গণহত্যাও গ্রহণযোগ্য হতে পারে। ইসরাইল-ফিলিস্তিন সঙ্ঘাতের মধ্যে এ ধরনের মন্তব্য করার মাধ্যমে আসলে ফিলিস্তিনিদের ওপর গণহত্যা চালানোকে গ্রহণযোগ্য হিসেবেই স্বীকার করে নেয়া হয়েছে। অবশ্য তীব্র আপত্তির কারণে ওই সম্পাদকীয়টি প্রত্যাহার করে নেয়া হলেও জায়নবাদীদের মধ্যে বিরাজমান অভিন্ন মানসিকতার সাথে পরিচিত হয়েছে ফিলিস্তিনিরা।
এখন এই রোগ ভারতের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে। অন্তত সরকারি সন্ত্রাসী কর্মকর্তাদের মধ্যে গণহত্যার ধারণা দানা বেঁধে ওঠছে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে সাধারণভাবে মুক্ত বিশ্বের নেতা হিসেবে দেখার ধারণা বিরাজ করছে। কিন্তু বিশ্ব কুফ্ফারদের লিডার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কিন্তু ইসরাইলের সমর্থনে অটল রয়েছে। সে সম্ভব সব উপায়ে ইহুদি দেশটির প্রতি সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের মতো সন্ত্রাসী লোকেরা ইসরাইল প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুকে যেভাবে সমর্থন দিয়েছে, এখন একইভাবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সন্ত্রাসী নরেন্দ্র মোদিকেও দেবে।
সূত্র: সাউথ এশিয়ান মনিটর/ কাউন্টার পাঞ্চ