নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের প্রতিবাদে উত্তপ্ত গোটা ভারত। আন্দোলন ঠেকাতে শক্ত দমননীতি গ্রহণ করেছে দেশটির উত্তরপ্রদেশ মালাউন সরকার। মেরুট, সম্ভল, কানপুর, ফিরোজাবাদ, লাখনৌসহ বিভিন্ন জায়গায় তল্লাশি চালাচ্ছে রাজ্য পুলিশ। আন্দোলন ঠেকাতে ইতোমধ্যে ৪৯৮ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করা হয়েছে। সরকারি সম্পত্তি ভাঙচুরের মিথ্যা অভিযোগে পুলিশি হেফাজতে নেয়া হয়েছে পাঁচ হাজারের বেশি বিক্ষোভকারীকে। গ্রেফতার হয়েছেন এক হাজার ২৪৬ জন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরও চলছে কড়া নজরদারি। উত্তরপ্রদেশ পুলিশ সূত্র জানায়, প্রায় ২১ হাজার পোস্টকে আপত্তিকর হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ১০ হাজার ৩৮০ টুইট, ১০ হাজার ৩৩৯ ফেসবুক পোস্ট এবং ইউটিউবের ১৮১টি ভিডিও। সামাজিক মাধ্যমে আপত্তিকর পোস্ট করার অভিযোগে ৯৫টি মামলা করা হয়েছে।
সন্ত্রাসী প্রশাসনের এই অপতৎপরতায় বাহবা জানিয়েছে মালাউন যোগীর দফতর। সরকারি সম্পত্তির ক্ষতিপূরণ অনেকাংশে আদায় করা গেছে বলে প্রশাসনের তরফে দাবি করা হয়। বুলন্দশহরে প্রায় ছয় লাখের বেশি টাকা তোলা হয়েছে। এক ভিডিওতে দেখা গেছে, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নাগরিকরা সেই অঙ্কের ডিমান্ড ড্রাফট তুলে দিচ্ছেন সরকারি অফিসারের হাতে। জানা গেছে, বিশিষ্ট মুসলিম সমাজের প্রতিনিধি দল সরকারের হাতে মোট ৬.২৭ লাখ টাকার একটি চেক তুলে দেন।
পাকিস্তানে চলে যান, হুমকি পুলিশের
উত্তরপ্রদেশের বিক্ষোভে গত শুক্রবার মুসলিম বিক্ষোভকারীদেরকে সরাসরি পাকিস্তানে চলে যাওয়ার হুমকি দিয়েছেন মিরাটের পুলিশ সুপার। গোটা ঘটনার ভিডিও প্রকাশ পেয়েছে। নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর নতুন করে শহরে বিক্ষোভ শুরু হয়। সেই বিক্ষোভকে সামাল দিতে গিয়েই ওই মন্তব্য করে পুলিশকর্তা, যা ধরা পড়েছে ভিডিওতে। মোবাইল ফোনে রেকর্ড করা ভিডিওটিতে দেখা গেছে, মিরাটের পুলিশ সুপার অখিলেশ নারায়ণ সিং একটি মুসলিম প্রধান এলাকায় সরু গলির মধ্যে আরো কয়েকজন পুলিশকর্মীকে নিয়ে ঢোকেন। রায়ট গিয়ার পরে তাদের গলিতে হাঁটতে দেখা যায়।
সেখানে মাথায় টুপি পরা কয়েকজনকে অখিলেশ বলেন, ‘কোথায় যাবে তোমরা? এই গলিতো আমি এবার ঠিক করব।’ সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক স্থানীয় বাসিন্দা তখন বলেন, তারা শুক্রবারের নামাজ পড়ছিলেন। তার উত্তরে অখিলেশ বলেন, ‘সে তো ঠিক আছে। কিন্তু হাতে এসব কালো আর নীল ব্যাজ যারা লাগিয়েছে, তাদের বলে দাও পাকিস্তানে চলে যেতে।’
পুলিশ সুপার আরো বলে, ‘এ দেশে থাকতে না চাইলে চলে যাও। থাকবে এখানে আর গান গাইবে অন্য জায়গার?’ এর উত্তরে এক মুসলিম বলেন, ‘আপনি ঠিকই বলছেন।’ প্রত্যেক ঘর থেকে প্রত্যেককে বের করে জেলে ঢুকিয়ে দেয়ার হুমকিও দেয় ওই পুলিশ সুপার।
উল্লেখ্য, উত্তর প্রদেশে বিক্ষোভের জেরে মৃত্যু হয়েছে কমপক্ষে ১৯ জনের। এক তৃতীয়াংশ জায়গায় ইন্টারনেট সেবা বন্ধ রয়েছে। উত্তরপ্রদেশ আর্মড কনস্ট্যাবুলারির ১২ হাজার সেনা এবং তিন হাজারের বেশি আধা সন্ত্রাসীবাহিনী টহল দিচ্ছে যোগীর রাজ্যে।