‘ধর্মীয় বিভাজনে বেশি নজর দেয়ায় অর্থনৈতিক দুর্দশায় ভারত, আর্থিক সংস্কারের সদিচ্ছা নেই মালাউন মোদির

0
930

গত ছয় বছরে আর্থিক প্রবৃদ্ধির সর্বনিম্ন রেকর্ড নিয়ে ভারতের অর্থনীতি এই মুহূর্তে নাজুক অবস্থায় রয়েছে। দেশটির প্রধানমন্ত্রী মালাউন নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকারের আর্থিক নীতির সমালোচনা করে মার্কিন অর্থনীতিবিদ স্টিভ হ্যাঙ্ক এর কারণ হিসেবে ধর্ম, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে প্রাধান্য দেওয়ার বিষয়টিকেই উল্লেখ করলেন। হ্যাঙ্ক বলেন, ‘মোদি সরকার দুটি বিষয়ের ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে : ঐতিহ্য এবং ধর্ম। যা আসলে ধ্বংসাত্মক ও বিস্ফোরক।’

তার মতে, কঠিন ও প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্কারের সদিচ্ছা নেই মোদি সরকারের। এ কারণে ২০২০ সালে জিডিপি বৃদ্ধি ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে ভারতকে হিমশিম খেতে হবে। তার অন্যতম কারণ হিসেবে মূলধনের অভাব এবং ঋণ সঙ্কোচনের কথাও বলেছেন হাঙ্ক।

গত জুলাই-সেপ্টেম্বর ত্রৈমাসিকে জিডিপি বৃদ্ধির হার নেমে দাঁড়িয়েছে ৪.৫ শতাংশ, যা ছ’বছরে সর্বনিম্ন। এই ফলাফল আসার আগে থেকেই অবশ্য অর্থনীতির ঝিমুনির ইঙ্গিত মিলছিল। গাড়ি শিল্পে সঙ্কট, নতুন শিল্প বিনিয়োগে ভাটা, বেকারত্ব বৃদ্ধি তথা নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি না হওয়া, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমে যাওয়ার মতো বিষয়গুলি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছিল ক্রমেই। তিন মাস পরেও সেই পরিস্থিতির খুব একটা রদবদল হয়নি। অদূর ভবিষ্যতে ঘুরে দাঁড়ানো যাবে, এমন ইঙ্গিতও নেই শিল্পমহলে। অর্থনীতিবিদদের অনেকেই মনে করেন, বড় কোনও সংস্কারমুখী দাওয়াই ছাড়া এই পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দুষ্কর।

কিন্তু অর্থনীতিবিদ তথা প্রাক্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আর্থিক উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য হ্যাঙ্ক মনে করেন, মোদী সরকারের সেই সদিচ্ছাই নেই। দ্বিতীয়বার বিপুল জনসমর্থন নিয়ে সরকার গড়েছে বিজেপি। সংখ্যার চাপও নেই। কিন্তু তার পরেও সংস্কারমুখী বড় কোনও পদক্ষেপ করেনি মোদী সরকার। হ্যাঙ্কের ব্যাখ্যা, ‘‘তার পরিবর্তে মোদী সরকার দু’টি বিষয়েই গুরুত্ব দিচ্ছে: ঐতিহ্য এবং ধর্ম, যা আসলে ধ্বংসাত্মক ও বিস্ফোরক।’’

জন হপিকন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত অর্থনীতি বিষয়ে অধ্যাপনার সঙ্গে যুক্ত হ্যাঙ্কের মতে, ‘‘ভারতে আর্থিক মন্দা ‘ক্রেডিট স্কুইজ’ ঋণ সঙ্কোচনের সঙ্গে সম্পর্কিত, যা আসলে ধারাবাহিক একটি সমস্যা, পরিকাঠামোগত নয়। আর সেই কারণেই ২০২০ সালে জিডিপি বৃদ্ধির হার ৫ শতাংশে নিয়ে যেতে অনেক লড়াই করতে হবে।’’

এই ঋণ সঙ্কোচনের অর্থ হল, ব্যাঙ্কগুলি শিল্পক্ষেত্রে ঋণ দিতে চাইছে না, বা দিলেও মাত্রাতিরিক্ত সুদ দিতে হচ্ছে। এমনিতেই নন পারফর্মিং অ্যাসেট বা এনপিএ-র ভারে ন্যুব্জ ব্যাঙ্কগুলি। বিশেষ করে সরকারি ব্যাঙ্কগুলির অবস্থা খুবই খারাপ। সেই এনপিএ আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় ব্যাঙ্কগুলি শিল্পপতি-বিনিয়োগকারীদের ঋণ দিতে চাইছে না। ফলে অবিশ্বাস ও ভয়ের বাতাবরণ ব্যাঙ্কিং মহলে। আর ঋণ না পেয়ে মুলধনের অভাবে নতুন শিল্প স্থাপনে আগ্রহ দেখাচ্ছে না শিল্পমহলও। তাই অর্থনীতিতে গতি আসছে না।

ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের শঙ্কা ও অবিশ্বাসের বাতাবরণ কাটাতে সিবিআই তদন্তের দাওয়াই দিয়েছেন নির্মলা সীতারামন। ব্যাঙ্ক কর্তাদের আশ্বস্ত করতে সিবিআই কর্তাদের সঙ্গে ব্যাঙ্ক কর্তাদের এক টেবিলে নিয়ে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। হাঙ্কের মতে, এই সব পদক্ষেপে কাজ হবে না। দরকার সাহসী ও আমূল সংস্কারমুখী সিদ্ধান্ত। মোদী সরকার সেটাই করছে না বলে তোপ দেগেছেন হ্যাঙ্ক। যদিও এ নিয়ে অর্থমন্ত্রক বা সরকারের অন্য কোনও প্রতিনিধির কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস সংবাদ সমগ্র || ডিসেম্বর, ২০১৯ ঈসায়ী ||
পরবর্তী নিবন্ধমালাউনদের জনসংখ্যা রেজিস্ট্রারে বাদ পড়ল ভারতীয় মুসলিমদের উৎসব তালিকা