অনবরত বাংলাদেশিদের হত্যার পরেও, সীমান্ত হাটের প্রস্তাব দিয়েছে ভারত

0
1276

বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য জোরদারের জন্য ত্রিপুরা রাজ্যের সীমান্তে আরো তিনটি সীমান্ত হাট বসানোর প্রস্তাব দিয়েছে ভারত। গত বুধবার আগরতলায় ত্রিপুরার তিন জেলা মেজিস্ট্রেট ও বাংলাদেশের চার জেলার ডিসি’দের মধ্যে বৈঠকে ওই প্রস্তাব দেয়া হয়।

বৈঠকের পর পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার মেজিস্ট্রেট সন্দীপ মহাত্মে সাংবাদিকদের জানান যে প্রস্তাবিত হাটগুলোর জন্য বেশ কিছু নতুন স্থান চিহ্নিত করা হয়েছে। দুই দেশের কর্মকর্তারা ২৬ ফেব্রুয়ারি যৌথভাবে স্থানগুলো পরিদর্শন করবেন। এরপর চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর কাছে পাঠানো হবে।

চিহ্নিত স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে খোয়াই জেলার পাহাড়মুড়া, পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার বামুতিয়া ও সিপাহীজালা জেলার জগৎরামপুর। এগুলোর বাংলাদেশের পাশ হবে যথাক্রমে হবিগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও কুমিল্লা। সিপাহীজালা ও দক্ষিণ ত্রিপুরা জেলার শ্রীনগরে দুটি সীমান্ত হাট এরই মধ্যে কার্যক্রম শুরু করেছে।

এছাড়া বৈঠকে পাচার, চোরাচালান ও নাগরিকদের অবৈধ পারাপারের বিষয়ে আলোচনা হয়। পাশাপাশি আগরতলা-আখাউড়া রেললাইনের কাজ, উন্মুক্ত সীমান্ত এবং সমন্বিত চেকপোস্ট স্থাপনের জন্য নতুন স্থান চিহ্নিতকরণ নিয়েও আলোচনা হয় বলে মহাত্মে উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, আগরতলা-আখাউড়া রেললাইনের কাজের মেয়াদ ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

বৈঠকে খোয়াই, সিপাহীজালা ও পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার মেজিস্ট্রেট এবং বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার জেলার ডিসি’রা অংশ নেন। এছাড়া ত্রিপুরার সব জেলার পুলিশ সুপার এবং বিজিবি ও বিএসএফ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

ভারতীয় পক্ষে নেতৃত্ব দেন সন্দীপ মহাত্মে ও বাংলাদেশ পক্ষে কুমিল্লার ডিসি মো. আবুল ফজল মীর।

এদিকে ভারত বাণিজ্য বাড়ানোর জন্য যতই চেষ্টা চালাক এবং দুই দেশের বন্ধুত্ব সর্বকালের ঘনিষ্ঠ বলে উল্লেখ করুক না কেন, সীমান্তে ভারতীয় সীমান্ত রক্ষা বাহিনী (বিএসএফ)’র হাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যা অব্যাহতভাবে চলছে। মিডিয়ার খবরে বলা হয়েছে যে, এই হত্যাকাণ্ড ২০১৯ সালে তিনগুণ বৃদ্ধি পায়। সীমান্তে হত্যার জন্য ভারতীয় পক্ষ গরু চোরাচালানকে দায়ি করে। কিন্তু গরু চোরাচালান উল্লেখযোগ্যভাবে কমলেও হত্যাকাণ্ড কমছে না।

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন-ও-সালিশ কেন্দ্র জানায়, ২০১৯ সালে বিএসএফ অন্তত ৪৩ বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে।

আট বছর আগে বিএসএফের গুলিতে ১৫ বছরের কিশোরী ফেলানী নিহত হয়ে কাঁটাতারের বেড়ায় ঝুলে ছিলো। তার এই ছবি সীমান্তে বিএসএফের হত্যাকাণ্ডের প্রতীকে পরিণত হয়। এই ঘটনা বাংলাদেশে ব্যাপক বিক্ষোভের জন্ম দেয়। এই ঘটনায় বিচারও হয় কিন্তু ফেলানীরা ন্যায়বিচার পায়নি। আর হত্যাকাণ্ড চলছে অব্যাহত গতিতে।

হাট আর বাণিজ্য সম্পর্ক মানুষের জীবনের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ কিনা সেই প্রশ্ন বাংলাদেশের জনগণের। এ ব্যাপারে কঠোর অবস্থান গ্রহণের জন্য সরকারের কাছে দাবি তাদের। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী জাহান আরা বলেন, বন্ধুত্ব ভালো, কিন্তু জীবনের বিনিময়ে নয়। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের মনোভাবও একই।

এদিকে, নতুন বছর ২০২০ সালেও সীমান্তে বাংলাদেশিদের রক্ত ঝরছে। জানুয়ারির প্রথম ২৩ দিনে বিএসএফ অন্তত ১০ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীও ‘উদ্বেগ’ প্রকাশ করেছেন। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি ও ক্যামেরা বসানোর কথা বলেছেন। কিন্তু সীমান্ত হাট ও নিরাপত্তা জোরদার করা হলেও বাংলাদেশিদের রক্তঝরা কমছে না কিছুতেই, চলছে অব্যাহত গতিতে।

 

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধসরকারি জমির মাটি কেটে বিক্রি করলেন সন্ত্রাসী আ.লীগ নেতা
পরবর্তী নিবন্ধআফগান ইউনিফর্ম পরিহিত অজ্ঞাত ব্যক্তির গুলিতে ২ মার্কিন সন্ত্রাসী নিহত