জমিয়তে উলামা হিন্দের পশ্চিমবঙ্গ সভাপতি মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেছেন, কেন্দ্রীয় সরকার আমাদের অস্তিত্বের ওপরে আঘাত হানার চেষ্টা করছে। তিনি নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর গভর্নমেন্ট কলেজ ময়দানে সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ), জাতীয় নাগরিকপঞ্জি (এনআরসি)ও জাতীয় জনসংখ্যা নিবন্ধন (এনপিআর)-এর বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখার সময় ওই মন্তব্য করেন।
মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘মানুষ একবেলা না খেয়ে থাকতে পারে। ভালো কাপড় না পরেও বাঁচতে পারে। কিন্তু অস্তিত্বের ওপরে আঘাত কোনোদিন কেউ মেনে নেবে না। আমাদের দুর্ভাগ্য, আমরা হতভাগ্য যে, আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী, দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, দিল্লিতে সরকারে যারা আছে তাঁরা ভারতবর্ষের ১৩০ কোটি মানুষের মাথা হেঁট করে দিয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা পড়েছি শিশুকালে ‘সদা সদ্য কথা বলিব। কদাচ মিথ্যা কথা বলিব না। আর প্রধানমন্ত্রী কী বলছেন? সদা মিথ্যা কথা বলিব। কদাচ সত্য কথা বলিব না! এরকম মিথ্যাবাদী প্রধানমন্ত্রী ভারতবর্ষের ১৩০ কোটি মানুষ দেখেনি। তিনি বুঝতে পারছেন মিথ্যা বলছেন। গোয়েবলসীয় তত্ত্বকে হারিয়ে দিচ্ছেন। পৃথিবীতে ৫০/৬০টি দেশে ভারতবর্ষের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হচ্ছে। উনি ৫৬ ইঞ্চি ছাতি ফুলিয়েছিলেন, কিন্তু এখন বেলুন চুপসে যাচ্ছে! নিজেকে ভাবছিলেন, আমি হলাম পরবর্তী মহাত্মা গান্ধী। কিন্তু এত মিথ্যাবাদী যে, এখন কম্পিউটারের যুগে সবটাই ধরা পড়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ভারতবর্ষের ৯০ শতাংশ মানুষ এনআরসি ও সিএএ-এর বিরুদ্ধে। ১০ শতাংশ মানুষ ওদের পক্ষে। এখন যদি ভোট হয় ওরা গো-হারা হেরে যাবে।’
কেন্দ্রীয় সরকারকে সতর্ক করে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, ‘ফেরাউনকে আল্লাহ্ ধ্বংস করেছেন। নমরুদকে আল্লাহ্ ধ্বংস করেছেন। অত্যাচারী শাসকদেরকে ধ্বংস করেছেন। আমরা চাইব কেন্দ্রের মোদি সরকার একটু ভাবুন। তা না হলে উপরওয়ালার শাস্তি অনিবার্য। কারণ মানুষের প্রতি অবিচার উপরওয়ালা চান না।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বলছেন, ভারতের কোথাও ডিটেনশন ক্যাম্প হয়নি তো! আমি জানিই না। এত কাঁচা কাঁচা মিথ্যা বাচ্চা ছেলেরাও মনে হয় বলে না! পরের দিন অসমের এক প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বলছেন, আমাকে ৪৬ কোটি টাকা দিয়েছেন অসমের গোয়ালপাড়ায় ডিটেনশন ক্যাম্প বানানোর জন্য। মুখটা থাকল এতে? তিন হাজার বন্দি সেখানে থাকবেন। এই কারণে জনগণ যাতে জেগে ওঠে, বাড়ি বাড়ি মায়েরা যাতে জেগে ওঠেন সেজন্য আজ নারীদের আনার প্রয়োজন ছিল।’
মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ বলেন, ‘মায়েদের বলে দেবেন কোনও ধরণের বৈধ কাগজ ভোটার পরিচয়পত্র, প্যান কার্ড, আধার কার্ড, রেশন কার্ড, জন্মের প্রমাণপত্র, স্কুলের সার্টিফিকেট, কোনও দলিল কোনও সময়ে কাউকে দেবেন না, দেবেন না, দেবেন না। মায়েদের কানে কানে এটা বলে দেবেন। সকালে কাজ করতে বাড়ি থেকে বেরোবেন, আর ওই বেইমান আরএসএস-বিজেপি বাড়িতে ঢুকবে। গলায় দরকার হলে ঘুঁটের মালা তাঁদের গলায় চড়িয়ে দেবেন। জুতোর মালা পরিয়ে দেবেন। কারও বাড়ির কাগজ নেয়ার অধিকার তোমাকে কে দিয়েছে? প্রয়োজনে জেরক্স কপি করবেন। এ নিয়ে অবহেলা করবেন না।’
তিনি বলেন, ‘ভারতের কোনও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যখন এনআরসির বিরুদ্ধে মুখ খুলতে পারেননি তখন আমাদের রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সর্বপ্রথম এনআরসির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। এটা অতি সত্য কথা। এরপরেই ভারতের অন্য রাজ্য বুকে সাহস পেয়েছে।’
আজকের ওই সভা শেষে মাওলানা সিদ্দিকুল্লাহ চৌধুরী আল্লাহ্র উদ্দেশ্যে বিশেষ মুনাজাতে বলেন, আল্লাহ্ আমাদের সকলের নিরাপত্তা দান করুন। অত্যাচারী কেন্দ্রীয় সরকারের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করুন। মানুষে মানুষে ভ্রাতৃত্বের মেলবন্ধন যাতে জোরালো হয় সেই বিষয়েও তিনি প্রার্থনা করেন।
সূত্র : পার্সটুডে