বিদ্যুৎ-পানির মূল্যবৃদ্ধি অবশ্যই জনজীবনে প্রভাব ফেলবে

0
955

১০ বছরে ৮ বার বিদ্যুতের খুচরা মূল্য বাড়ল। এতে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের কষ্ট বেড়েছে। হতদরিদ্রদের কথা বাদ দিলাম, তারা গণনার মধ্যে থাকে না। বিদ্যুৎ আর পানির মূল্যবৃদ্ধি নিয়ে যখন চারপাশে অসন্তোষ তখন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বললেন, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধি জনজীবনে প্রভাব ফেলবে না। জনজীবন যদি হয় শুধু সরকারি কর্মকতা-কর্মচারী, উচ্চবিত্ত, ঋণখেলাপি, কালো টাকার মালিক, ক্যাসিনো ব্যবসায়ী কিংবা রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় কোটিপাতি, টাকার গুদামের মালিক, তাহলে তো প্রভাব ফেলতে পারবে না।

কিন্তু জনজীবন যদি হয় উল্লিখিত শ্রেণিগোষ্ঠীর বাইরে বাকি জনগণ, তাহলে প্রভাব ফেলার অনেক কিছুই আছে।

বেশ কয়েক মাস ধরে নিত্যপণ্যের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বেড়েছে। চালের দাম বেড়েছে কয়েক দফায়। অথচ কৃষক তার ন্যায্য দাম পাননি। কৃষকের ঘরে দেখা গেছে হতাশা। ডাল, ভোজ্যতেল, পেঁয়াজ, রসুনের দাম বেড়েছে। খাদ্যবহির্ভূত পণ্যের দামও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে। জীবনের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার এমন এক ভারসাম্যহীন ও হিমশিম খাওয়া অবস্থায় বাড়ানো হল বিদ্যুৎ ও ঢাকা ওয়াসার পানির দাম। সরকার বিন্দুমাত্র দ্বিধান্বিত না হয়ে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের সংসার খরচ বাড়িয়ে দিল।

শহর এলাকায় বসবাসরত মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্তের খবর কতটুকু রাখেন বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী, জানা নেই। শহরে ঘর ভাড়া, খাওয়া-পরা, সন্তানদের লেখাপড়া, যাতায়াত, চিকিৎসা ও সামাজিকতার রয়েছে অনেক খরচ। কারও কারও ক্ষেত্রে আয়ের চেয়ে দ্বিগুণ বা বহুগুণ খরচ। যদিও নিত্যব্যবহার্য সামগ্রীর দাম বাড়ার পরও জনগণ সেসব পণ্য কেনেন। পরিমাণের মাত্রাটা চাহিদার থেকে ছোট করে তাকে কিনতে হয়। শর্তটা হল বেঁচে থাকা। এমন অবস্থায় কেউ যদি ভেবে আশ্বস্ত হন যে, দাম বাড়লেও তো মানুষ কিনছে।

বেড়ে যাওয়া দাম মানুষকে কেনা থেকে তো বিরত রাখছে না, সুতরাং দাম বাড়ানোটা কোনো সমস্যাই নয়, তাহলে তাদের উদ্দেশে দুটি কথা বলার প্রয়োজনবোধ করছি। চাল, ডাল, তেল, পেঁয়াজ, রসুন খেয়ে এবং বিদ্যুৎ ও পানি ব্যবহার করে যেহেতু মানুষকে বেঁচে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করতেই হবে, সেহেতু তারা তা নিশ্চিত করেন।

কীভাবে, প্রশ্নটা সেখানেই। ব্যক্তির আয় যদি ক্রয়ক্ষমতার নিচে থাকে তাহলে ব্যক্তিকে আরও অধিক পরিশ্রম করতে হয়। যদি কেউ তা না করেন তাহলে দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে তার ক্রয়ক্ষমতা বাড়াতে তিনি বাড়তি আয়ের জন্য অসৎ পথ খোঁজেন, দুর্নীতির আশ্রয় নেন। সোজা কথায়, দুর্নীতিবাজ হন। ফলে নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধি একদিকে কারও কারও স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ, অন্যদিকে কারও কারও জন্য দুর্নীতির মতো পথ খোঁজার সুযোগ সৃষ্টি করছে।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিপুল পরিমাণ কয়লা লুট
পরবর্তী নিবন্ধআদালতের কার্যতালিকা থেকে বাদ সাগর-রুনি হত্যা মামলা