প্রাণঘাতী নভেল করোনাভাইরাসের কারণে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু সচেতনতা সৃষ্টি হয়েছে। এর ভয়াবহতা আঁচ করে ব্যক্তি ও সামাজিক জীবনে পরিবর্তনও নিয়ে আসছে অনেক মানুষ। পথের চা-পানের টঙ দোকানে বসে-দাড়িয়ে অযথা আড্ডায় রাজা উজির মারার দৃশ্য দেখা যায় না।
আগের মতো আয়েশ করে চা পান বা সিগারেটে সুখটানের দৃশ্য চোখে পড়ে না। তবে এই সচেতনতার মধ্যেও স্বল্প ও ক্ষুদ্র আয়ের কিছু মানুষ পড়েছেন বিপাকে। তারা চোখে অন্ধকার দেখছেন। এই অবস্থায় নিত্যপণ্যের মূল্যবুদ্ধিও তাদের হতাশ করেছে। এখন নিত্যপণ্য ও ওষুধের দোকান বন্ধের নির্দেশনায় তারা আরো ভেঙ্গে পড়েছেন। এই অবরুদ্ধ অবস্থায় এসব মানুষ সহযোগিতা দাবি করেছেন। কালের কন্ঠের রিপোর্ট
সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে সরেজমিন সুনামগঞ্জ জেলা শহরের স্বল্প ও ক্ষুদ্র আয়ের বেশ কিছু মানুষের সঙ্গে কথা হয়। দেখা গেছে রিকশা্, অটোরিকশায় যাত্রী কম। সেলুনেও ভিড় নেই। ভিড় কমেছে ছোট বড় কাপড়ের দোকান, প্রসাধনী, হোটেল রেস্টুরেন্টসহ স্বল্প ও ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের জীবন চালানোর নানা মাধ্যমে। তাছাড়া ছোট প্রতিষ্ঠান গুলিতে মালিকদের আয় কমে যাওয়ায় শ্রমিকদের নিয়ে টেনশনে আছেন ব্যবসায়ীরা।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টা। পৌর মার্কেটে সিড়ির নিচে দীর্ঘ একযুগ ধরে চায়ের দোকান দিয়ে সংসার নির্বাহ করেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী সুজন মিয়া। এই আয়েই তার সংসার চলে। তার দোকানে আরো দুইজন কর্মচারী আছে দিনমজুর হিসেবে।
সুজন মিয়া জানান, গত এক সপ্তাহে তার বিক্রি কমে এসেছে। এখন দোকানে ভিড় নেই। সিঁড়ির নিচে আড্ডাও জমছে না। চা, পানের চাহিদাও কমেছে। এই অবস্থায় চলা মুশকিল। এখন দোকান বন্ধের সরকারি নির্দেশনায় চোখে অন্ধকার দেখছেন সুজন। তাছাড়া চালডাল ও নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণেও জীবন নিয়ে নাভিশ্বাস উঠেছে তাদের।
সুজন মিয়া বলেন, আমার চলার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। আমার দোকানের দুই দিন মজুরের অবস্থাও আরো খারাপ। তারা দিনমজুর হিসেবে শ্রমমূল্য পেতো। এখন দোকান বন্ধ থাকায় তারাও বেকার। আমাদের কারই আয় রোজগার নেই। নিত্যপণ্যের দোকানেও জিনিষের দাম বেশি। তিনি ও তার দোকান শ্রমিকদের সহায়তা প্রয়োজন বলে জানান সুজন মিয়া।
পৌর মার্কেটেরই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী মানবেন্দ্র কর। তার ছোট্ট দোকানে কাপড় ও বইয়ের যৌথ ব্যবসা। কর্মচারী তিনজন। এখন বিক্রি একেবারে কমে গেছে তার দোকানে। ক্রেতা আসছেন না আগের মতো। সবাই এক রুদ্ধশ্বাস সময় অতিবাহিত করছেন।
মানবেন্দ্রকর বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে শহরে আগের তুলনায় মানুষের উপস্থিতি কমেছে। জীবন বাঁচানো নিয়ে সবাই যেখানে শঙ্কিত সেখানে নতুন কাপড় চোপরের প্রতি স্বাভাবিকভাবেই আগ্রহ কমেছে। আমাদের বিক্রি বাট্টা কমে যাওয়ায় এবং দোকান বন্ধের নির্দেশনায় এখন চোখে অন্ধকার দেখছি। কিভাবে যে দিনগুলো অতিবাহিত করবো সেটা নিয়ে চিন্তিত।
বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী জ্যোতিষ বৈদ্য বলেন, বাজারে মানুষের উপস্থিতি কম। আগের তুলনায় বিক্রিও কম। এভাবে চলছে দোকানভাড়া ও বিদ্যুৎ বিল পরিশোধ করাই কঠিন হবে। সহযোগিতা আমাদের প্রয়োজন। তিনি বলেন, একেবারে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আমি। যে পণ্য বিক্রি করি তা এখন বেশি দামে কিনতে হচ্ছে।
রিকশাচালক আমিরুল ইসলাম শহিদ মুক্তিযোদ্ধা জগৎজ্যোতি পাবলিক লাইব্রেরির সামনে রিকশা থামিয়ে সিটে বসে ঝিমুচ্ছিলেন। তার মুখে মাস্ক লাগানো। তিনি জানালেন, একটি সংগঠন তাকে একটি মাস্ক ও সাবান উপহার দিয়েছে। এই মাস্ক লাগিয়েই তিনি এখন রিক্সা নিয়ে বের হন।
আমিরুল বলেন, রিকশা নিয়ে বের হলে কি হবে আগের মতো প্যাসেঞ্জার মিলে না। তাই রিকশাভাড়া ৬০ টাকা পরিশোধ করে যা আয় হয় তা দিয়ে পরিবারের ভরণ পোষণ চলে না। তাছাড়া পরিবহন বন্ধের নির্দেশনা ও মানুষকে ঘর থেকে বের হওয়ার সরকারি নির্দেশনার কারণে তিনি করবেন ভেবে ওঠতে পারছেননা। আমিরুল এই অবস্থায় সহযোগিতা দাবি করলেন।
শহরের কার্লস হেয়ার একটি ব্যস্ত সেলুন। তিনজন কারিগরের সবাই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ব্যস্ত থাকেন। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ৩-৪টি করে কাজ করতে পারেন একেকজন। দৈনিক আয়ের ওপর নির্ভরশীল ক্ষৌরকাররা এখন বিপাকে পড়েছেন।
এই সেলুনের কারিগর রাজু বলেন, আমি প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকি। কিন্তু গত এক সপ্তাহ ধরে ৩-৪টি কাজ করছি। মানুষ সেলুনে আসছে না।
তিনি বলেন, এই আয়েই আমার ৫ সদস্যের সংসার চলছে। এখন দোকান বন্ধের নির্দেশনায় মনটা খারাপ হয়ে গেছে। তিনি বলেন, আমরা যারা নিম্ন ও স্বল্প আয়ের মানুষ তাদেরকে সহায়তা দেওয়া উচিত।
Bhai post ti onek valo lagece
Thanks