কমিউনিস্ট চীন থেকে শুরু হওয়া করোনা ভাইরাস বা কোভিড-১৯ (মহান রবের পক্ষহতে প্রেরিত আযাব) ছড়িয়ে পড়ছে বিশ্বজুড়ে, ক্রমেই ভয়ঙ্কর হয়ে উঠা এই ভাইরাসটি এখন পর্যন্ত বিশ্বের ২০৯টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। ভাইরাসটিতে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা এখন পর্যন্ত সাড়ে ১৩ লাখ ছাড়িয়েছে। এতে মারা গেছে প্রায় ৭৬ হাজারেরও বেশি মানুষ। এই ক্রমবর্ধমান ভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আফগানিস্তানেরও অনেক এলাকায়, বিশেষ করে দেশটির কাবুল ও হেরাত প্রদেশে ভাইরাসটির প্রভাব ব্যাপক আকার ধারণ করেছে।
আফগান ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম “আযম” কর্তৃক প্রকাশিত রিপোর্ট হতে জানা যায় যে, দেশটিতে এখন পর্যন্ত ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়েছেন ৪২৩ জন, নিহত হয়েছেন ১৮ জন আর সুস্থাতার জিবন ফিরে পেয়েছেন ১১ জন। দেশটির হেরাত প্রদেশে মুরতাদ সরকার নিয়ন্ত্রিত এলাকাটিতেই ভাইরাসটি সবচাইতে বেশি প্রভাব ফেলেছে, প্রদেশটিতে বর্তমান আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২৫৭ জন, নিহত হয়েছেন ৫ জন। এরপর দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে রাজধানী কাবুল।
দেশটির এমন পরিস্থিতিতে মুরতাদ সরকারি বাহিনীর তুলনায় সংক্রমণ রোধে অগ্রগামী ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের জানবায তালেবান মুজাহিদিন, ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে একের পর এক কর্মশালা করে যাচ্ছে তালেবান সদস্যরা।
তালেবান মুজাহিদিন ভাইরাস প্রতিরোধ বিষয়ক কর্মশালাগুলোতে সম্পূর্ণ মেডিকেল পিপিই (ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম) পরিধান করে সাধারণ মানুষের মাঝে সচতেনতা তৈরি করে যাচ্ছেন।
তালেবান মুজাহিদিন গত কয়েক সপ্তাহ যাবৎ এ জাতীয় সচেতনতামূলক প্রচার চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা মানুষকে মুখোশ এবং গ্লাভস ব্যবহার করতে বলছেন, সাবান দিয়ে হাত ধোয়ার বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন” ফ্রীতে এসব বস্তু তাঁরা সাধারণ মানুষের মাঝে বিতরণ করে চলছেন।
তাঁরা সমস্ত জনসমাগম, বিবাহ-অনুষ্ঠান বাতিল করে দিয়েছেন এবং লোকদের বাড়িতে বেশি নামাজ পড়তে বলেছেন। চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় সকল আসবাব পত্র ও তাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তাও দিয়ে যাচ্ছে ইমারতে ইসলামিয়া। পাশাপাশি তালেবান তাদের নিয়ন্ত্রিত লকডাউনকৃত এলাকাগুলোতে গরিব ও অসহায় পরিবারগুলোর মাঝে প্রয়োজনীয় খাদ্য সরবারহ করে যাচ্ছেন।
তালেবানদের অফিসিয়াল “আল ইমারাহ মিডিয়া ফাউন্ডেশন” কর্তৃক প্রকাশিত এমন অনেক ছবিই হয়তো আমরা লক্ষ্য করেছেন যেখানে তালেবান মুজাহিদিন তাদের সচতেনতা মূলক প্রচারণাগুলো তুলে ধরেছে। তালেবান বারবারই বলে আসছে করোনাভাইরাস রোধে “নির্বিশেষে যে কেউ বা যে কোন গোষ্ঠী সাধারণ আফগানীদের সহায়তা করবে, আমরা তাদেরকে স্বাগত জানাই এবং তাদের নিরাপত্তা ও একাজে তারা আমাদের থেকে সম্পূর্ণ সহায়তা পাবে”
করোনভাইরাস রোধে তালিবান ও তাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোর ডাক্তাররা সাদা মেডিকেল গিয়ার এবং মাস্ক পরে মানুষের বাড়ি বাড়ি, হাটবাজার ও দোকান-পাটে গিয়ে গিয়ে জীবাণুনাশক স্প্রে করছে। প্রতিটি জেলায় ভাইরাস প্রতিরোধে দশটি করে শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল-ক্লিনিকসহ কয়েকটি করে স্বাস্থ্যকেন্দ্রও তৈরি করেছে তালেবান। তালেবান “স্বাস্থ্য কমিশন” শুধু বাগলান প্রদেশের জন্যই ৯৫০ টি kits সরবরাহ করেছে, এভাবে তারা তাদের নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি প্রদেশে প্রয়োজনীয় সরঞ্জামাদি সরবারহ করে চলছে।
করোনভাইরাস এড়ানোর বিষয়ে তালেবান কর্তৃক নির্দেশনার বড় পোস্টারগুলি ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে বাজার শহর ও গ্রামে। তালিবানদের “জনস্বাস্থ্যে নিয়োজিত কমিশন”এর জারি করা মুদ্রিত পোস্টারগুলোতে নিয়মিত গুরুত্বের সাথে নামাজ আদায় করা, “হালাল” খাওয়ার পাশাপাশি চিকিৎসার পরামর্শ সহ লোকদেরকে যেসকল বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত তা তালিকাভুক্ত করা দেওয়া হয়েছে এবং সেই তালিকাগুলো মানুষের বাড়িবাড়ি গিয়ে ঝুলিয়ে দিয়েছে তালেবান সদস্যরা।
খাবারের তালিকায় তালেবান কর্তৃপক্ষ গ্রামবাসীদের কি খাবে আর কি খাবেনা এর পাশাপাশি শাকসবজির একটি তালিকাও যুক্ত করেছে, যাতে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে প্রচুর ভিটামিন সি রয়েছে,”
তালেবানদের “স্বাস্থ্য কমিশন” জানায় যে, চিকিৎসার মান পূরণ করতে না পারলেও আমাদের চিকিৎসা কর্মীরা সব প্রদেশে একযোগে তাদের সম্পূর্ণ মেহনত দিয়ে তারা কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। এছাড়াও ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানে করোনাভাইরাস বিস্তার রোধে কাজ করা স্বাস্থ্যকর্মী ও আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিকেও তাদের এলাকায় স্বাগত জানিয়েছেন, এবং তাদেরকে নিরাপত্তা দেওয়ার কথাও জানিয়েছেন।
ইমারতে ইসলামিয়া এর পক্ষহতে আরো বলা হয় যে, আমরা সরকারী স্বাস্থ্যকর্মী বা এনজিওগুলিকে আমাদের নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতেও সেবার জন্য আসার অনুমতি দিচ্ছি ও সমর্থন করছি যারা আমাদের অঞ্চলে গ্রামবাসীদের সহায়তা করতে পারবে। এক্ষেত্রে তাদের যা করার দরকার তা হল, আসার আগে আমাদের অনুমতি চাইতে হবে, যাতে আমরা তাদের মূল্যায়ন করতে পারি, এবং আমরা এখানে তাদেরকে নিরাপত্তার সাথে কাজ করতে পারার সুযোগ করে দিতে পারি।
যেই মুহুর্তে তালেবান মুজাহিদিন অভিযানের পরিমাণ কমিয়ে এনে জনসেবা মূলক কার্যক্রম ও সচেতনতা মূলক কার্যক্রমের প্রতি গুরুত্ব দিচ্ছেন, সেই মুহুর্তেও সাধারণ মানুষের উপর হামলা ও তাদের বাড়িঘর লুট করে তাদেরকে অজানা স্থানে বন্দী করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। তাই অনেক ক্ষেত্রে বাধ্য হয়েই আফগান মুরতাদ বাহিনীর উপর হামলা চালাচ্ছেন তালেবান মুজাহিদিন।