২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের হুবেই প্রদেশের রাজধানী উহান থেকে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। ১১ মার্চ দুনিয়াজুড়ে মহামারি ঘোষণা করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)। করোনাভাইরাস বৈশ্বিক মহামারিতে এ পর্যন্ত বিশ্বের ১৮৫টি দেশ ও অঞ্চল আক্রান্ত হয়েছে। বিভিন্ন দেশের সরকারি হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ১৯ লাখ ১৯ হাজার ৯১৩। এরমধ্যে এক লাখ ১৯ হাজার ৬৬৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। বেশিরভাগ আক্রান্ত দেশগুলোতে জারি করা হয়েছে লকডাউন। এতে করে স্থবির হয়ে পড়েছে বিশ্ব অর্থনীতি।
আইএমএফ’র প্রধান অর্থনীতিবিদ গীতা গোপিনাথ বলেন, চলমান সংকটে আগামী দুই বছরের মধ্যে বৈশ্বিক জিডিপি কমে যেতে পারে ৯ লাখ কোটি ডলার।
গোপিনাথ সতর্ক করে বলেছেন, মহামন্দার পর এই প্রথম উন্নত ও উন্নয়নশীল উভয় ক্যাটাগরির দেশই আর্থিক মন্দায় পতিত হতে যাচ্ছে।
গোপিনাথ আরও বলেন, বর্তমানের ‘মহালকডাউন’ নীতিনির্ধারকদের সামনে ‘এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা’ তুলে ধরেছে। তারা এই সংকটের মেয়াদ ও আঘাতের তীব্রতা নিয়ে অনিশ্চয়তায় ভুগছেন। উন্নত দেশগুলোর পক্ষেও ২০২২ সালের আগে ভাইরাস-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাওয়া সম্ভব হবে না।
আইএমএফ’র সর্বশেষ ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক প্রতিবেদনে জার্মানি, ব্রিটেন, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো দেশগুলোতে করোনায় সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবিলায় নেওয়া পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়েছে। তবে তাতে এটিও বলা হয়েছে যে, কোনও দেশই আসন্ন সংকট থেকে রক্ষা পাবে না।
আইএমএফ জানিয়েছে, করোনা মহামারি যদি চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে তাহলে আগামী বছর বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ৫.৮ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
আইএমএফ’র পূর্বাভাস অনুসারে, করোনা ভাইরাসের কারণে বিশ্বের শীর্ষ আর্থিক শক্তি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনীতি চলতি বছর ৫.৯ শতাংশ সংকুচিত হবে। বেকারত্বের হার ১০.৪ শতাংশে পৌঁছতে পারে দেশটিতে। ২০২১ সালের দিকে দেশটির অর্থনীতি আংশিক ঘুরে দাঁড়াতে পারে। তবে বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম আর্থিক শক্তি চীনের প্রবৃদ্ধি হবে মাত্র ১.২ শতাংশ। ১৯৭৬ সালের পর এটিই দেশটির সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি। বড় সংকটে পড়বে অস্ট্রেলিয়ার অর্থনীতিও।
সংস্থাটির মতে, এই বছঠর ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধি কমবে অবিশ্বাস্য রকম। বিশ্ব ব্যাংক চলতি আর্থিক বছরে ভারতের আর্থিক প্রবৃদ্ধি ১.৫ শতাংশ থেকে ২.৮ শতাংশ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিলেও আইএমএফ বলছে তা হবে ১.৯ শতাংশ। ১৯৯১ সালের পর সবচেয়ে কম প্রবৃদ্ধি এটি।
আইএমএফ বলছে, ভাইরাসটি নিয়ন্ত্রণে বেশি বিলম্ব হলে বা ২০২১ সালে দ্বিতীয় দফায় এটি ছড়িয়ে পড়লে বৈশ্বিক জিডিপি ৮ শতাংশ কমে যেতে পারে।
সংস্থাটি আশঙ্কা করছে, এই সংকটে ঋণগ্রস্ত দেশগুলোর পরিণতি আরও খারাপ হতে পারে। বিশেষ করে এসব দেশগুলোকে বিনিয়োগকারীরা ঋণ দিতে চাইবেন না। ফলে ঋণের ব্যয়ও বেড়ে যাবে।
সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন