বিশ্বের দীর্ঘতম লকডাউনের মধ্যে কাশ্মিরের জীবনযাত্রা যেমন

1
1292
বিশ্বের দীর্ঘতম লকডাউনের মধ্যে কাশ্মিরের জীবনযাত্রা যেমন

২০১৯ সালের আগস্টে ভারত মালাউন মোদি সরকার কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে সেখানে যখন দিল্লীর সরাসরি শাসন জারি করে, তখন সেখানে লকডাউন জারি করেছিল সরকার। ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগুরু অঞ্চলে অধিবাসীদেরকে যখন ঘরের মধ্যে বন্দী করে রাখা হয়েছিল, তখন কাশ্মিরের রাস্তায় টহল দিচ্ছিল মালাউন সন্ত্রাসী বাহিনী। দিল্লীর হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকার তখন এ অঞ্চলের ফোন ও ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করে দিয়েছিলো।

জানুয়ারির শেষ দিকে প্রায় ছয় মাস বিশ্ব থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকার পর কাশ্মির উপত্যকার মানুষ ২জি ইন্টারনেট ব্যবহারের এবং সরকার অনুমোদিত কিছু সাইট দেখার সুযোগ পায়। কিন্তু মার্চের শেষের দিকে কাশ্মিরে প্রথম করোনাভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তি ধরা পড়ার পর এ অঞ্চলে নতুন করে লকডাউন জারি করা হয় এবং চলাফেরা এবং সামাজিক মেলামেশার উপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। মসজিদগুলো সাধারণত দিনে পাঁচবার নামাজের সময় ভর্তি থাকতো। সেই মসজিদ ও বাজারগুলো খালি হয়ে যায়। ৪ মে পর্যন্ত ১২.৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার এ অঞ্চলে ৭০১ জন কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগি চিহ্নিত হয়েছে এবং আটজন মারা গেছে।
সারা বিশ্বেই যেখানে লকডাউনের সময় অনলাইনে চলে গেছে জীবনযাত্রা, সেখানে কাশ্মিরে সেটা অসম্ভব কারণ ৪জি নেটওয়ার্ক এখনও বিচ্ছিন্ন রয়েছে এখানে জীবন চালিয়ে যাওয়াটা কার্যত অসম্ভব হয়ে পড়েছে। বলা হচ্ছে স্বাধীনতাকামীরা যাতে হামলার পরিকল্পনা করতে না পারে, সে জন্য এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।

বিশ্বের যে কোন দেশের তুলনায় ভারত সবচেয়ে বেশি ইন্টারনেটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে থাকে এবং সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ভারতের এই অপকৌশল প্রয়োগের মাত্রা অনেক বেড়ে গেছে। কোন রাজ্যকেই জম্মু ও কাশ্মিরের মতো এত বেশি লকডাউন সহ্য করতে হয়নি। শুধু ২০১৯ সালেই ৫৫ বার ইন্টারনেট বন্ধ করা হয় এ অঞ্চলে। এর মধ্যে আগস্টে দিল্লী যখন লকডাউন জারি করে সেখানে, তখন রেকর্ড ২১৩ দিন পর্যন্ত একটানা সংযোগ বন্ধ রাখা হয়।

বহু মাসের লকডাউনের অবসাদ এবং কর্তৃপক্ষের প্রতি অনাস্থা সত্ত্বেও কাশ্মীরীরা মূলত এই আশায় লকডাউনকে মেনে নিয়েছে যে, এতে করে হয়তো ভাইরাসের সংক্রমণ বন্ধ হবে। ৩৪ বছর বয়সী ব্যবসায়ী তাসাদুক বললেন, “আগস্টের লকডাউনের ব্যাপারে আমাদের কোন সম্মতি ছিল না। কর্তৃপক্ষ সে সময় আমাদের বিরুদ্ধে বর্বর আচরণ করেছে”।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, ইন্টারনেটের উপর বিধিনিষেধের কারণে স্বাস্থ্যসেবার উপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। কারণ ২জি ধীর ইন্টারনেট ব্যবহার করে তারা প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য নির্দেশনা ডাউনলোড করতে পারছেন না। জেলা হাসপাতালের এক চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “কোভিড-১৯ এর ব্যাপারে সমস্ত গবেষণায় সাম্প্রতিক, এবং সেগুলো সম্পর্কে তথ্যের একমাত্র উৎস হলো ইন্টারনেট। প্রতিদিনই এই ভাইরাসের ব্যাপারে নতুন তথ্য প্রকাশিত হচ্ছে, যেগুলো আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে, কিন্তু ২জি ইন্টারনেটের কারণে আমরা সেটা করতে পারছি না।

ডাক্তাররা বলেন, সামান্য ১০ পাতার পিডিএফ ডাউনলোড হতেও কয়েক ঘন্টা লেগে যায়। “নতুন গবেষণার তথ্য পাওয়াটা আমাদের জন্য খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে”। ডাক্তাররা বলেছেন, তারা এখন হোয়াটসঅ্যাপে তাদের সহকর্মীদের সাথে যোগাযোগের মাধ্যমে তথ্য পাওয়ার চেষ্টা করছেন। যেহেতু অনেক ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি রয়েছে ইন্টারনেটে, সে কারণে এটা যাচাই করাও তাদের জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে যে কোন তথ্য সঠিক আর কোনটা ভুল।

আবার কর্তৃপক্ষ এর মধ্যেও ভিন্নমত দমন অব্যাহত রেখেছে। যে সব ডাক্তার প্রকাশ্যে সুরক্ষা সরঞ্জামের দাবি জানিয়েছিলেন, তাদেরকে জম্মুর প্রত্যন্ত হাসপাতালে বদলি করে দেয়া হয়েছে। টাইম ম্যাগাজিনকে ডাক্তাররা জানিয়েছেন, যে সব ডাক্তার তাদের উদ্বেগের কথা প্রকাশ্যে জানাবে, তাদের চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে”। এক ডাক্তার জানিয়েছেন, “আমাদের স্বাস্থ্য অবকাঠামো খুবই দুর্বল”। পর্যাপ্ত সুরক্ষা সরঞ্জাম না থাকার কারণে এক ডাক্তার ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন।

কারো কারো মতে এই দমনমূলক পদক্ষেপগুলো থেকে বোঝা যায় মহামারীর মধ্যেও কাশ্মিরের ব্যাপারে ভারত সরকারের নীতি বদলায়নি। ইন্টারনেট স্বাধীনতার জন্য প্রচারণা চালাচ্ছে সফটওয়্যার ফ্রিডম ল সেন্টার নামের একটি প্রতিষ্ঠান। এর লিগ্যাল ডিরেক্টর মিশি চৌধুরী বললেন, “যে প্রশাসন ইতিহাসের দীর্ঘতম ইন্টারনেট নিষেধাজ্ঞা জারি করতে প্রস্তুত, তারা শুধুমাত্র নিজেদের সেন্সরশিপ আর নজরদারির অধিকারেই বিশ্বাস করে”।

বিশ্বের দীর্ঘতম লকডাউন থেকে যে শিক্ষা পাওয়া যাচ্ছে, সেটা ভাইরাসের বিষয়ে ততটা নয়, যতটা গণতন্ত্রের বিষয়ে। চৌধুরী বললেন, “এমনকি একবিংশ শতাব্দীতে বৈশ্বিক মহামারীর মধ্যে যেখানে বাকি বিশ্বের কাছে ইন্টারনেট জরুরি সেবা হয়ে উঠেছে, সেখানে এ অঞ্চলের আট মিলিয়ন মানুষ ইন্টারনেট বিচ্ছিন্নতার কারণে শিক্ষা, জীবিকা, বিনোদন, এবং মানসিক স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে”। “এমনকি এসমস্ত ধোঁকাবাজির গণতান্ত্রিক দেশও সুইচ বন্ধ করে দিতে পারে এবং মানুষের সমস্ত অধিকার কেড়ে নিতে পারে”।
সূত্র: টাইম

১টি মন্তব্য

  1. আল্লাহ কাশ্মিরী মুসলিমদের হিন্দুত্ববাদী সকল চক্রান্ত থেকে হেফাজত করুন। মালাউন গোষ্টির বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়ে পাকিস্তান প্রভাবিত আন্দোলন ছেড়ে জাকির মূসার অনুসারী হয়ে জিহাদ করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস সাপ্তাহিকী || সংখ্যা : ১৮ || মে ১ম সপ্তাহ, ২০২০ ঈসায়ী ||
পরবর্তী নিবন্ধভারতে রাসায়নিক কারখানায় বিষাক্ত স্টাইরিন গ্যাস লিক করে শত শত লোক অসুস্থ, আট জনের মৃত্যু