দিল্লির নিজামুদ্দিনে তাবলীগ জামাতের সমাবেশে যোগ দিতে আসা ১২৯ জন বিদেশী মুসলিমকে চেন্নাইয়ের একটি বন্দী শিবিরে আটকে রাখা হয়েছে। জামিন পাওয়া সত্ত্বেও আটক তাবলীগ সদস্যদের ছাড়া হয় নি বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভারতে প্রায় সাড়ে তিন হাজার বিদেশী তবলীগ সদস্য আটক আছেন, কিন্তু চেন্নাইয়ের মতো বন্দী শিবিরে তাদের রাখা হয়নি কোথাও।
চেন্নাইয়ের পুল্লাল কারাগারের ভেতরেই একটি ভবনকে বন্দী শিবির নাম দেওয়া হয়েছে। যেখানে ৯টি দেশের ১২৯ জন তাবলীগ জামাতের সদস্য আটক আছেন।
গত মার্চের শুরুর দিকে তামিলনাড়ুর বিভিন্ন জায়গা থেকে এই ১২৯ বিদেশি তাবলীগ জামাত সদস্যকে গ্রেপ্তার করা। এদের মধ্যে ১২ জন নারীও আছেন।
গ্রেফতারের পর তাদেরকে চেন্নাইয়ের দুটি কারাগারে রাখা হয়েছিল। কিন্তু পরবর্তীতে পুল্লাল জেলখানার চত্বরেই একটি ভবনকে ডিটেনশান সেন্টার বা বন্দী শিবির বানিয়ে সেখানে রাখা হয় তাদেরকে।
‘তামিলনাডুর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও তাদের সবাইকে চেন্নাইয়ের পুল্লাল জেলের শিশু-কিশোর বন্দীদের থাকার জন্য একটি ভবনে রাখা হয়।
মাঝে একবার সবাইকে সইদাপেট জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। এখন আবার পুল্লাল জেলে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।
আইন অনুযায়ী বিদেশি নাগরিকদের শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ৫টি বন্দীশালাতেই আটক রাখা যায়। যে কোনও জেলে তাদের রাখার নিয়ম নেই। এখন আবার তাদের চেন্নাই জেলের সেই শিশু-কিশোর বন্দীদের ভবনে ফিরিয়ে আনা হয়েছে, কিন্তু জেলের ভেতরে হলেও বিশেষ আদেশ বলে সেটিকে বন্দী শিবির বা ডিটেনশান ক্যাম্প নাম দেওয়া হয়েছে। সেখানেও আইন ভাঙ্গা হয়েছে’ – বলছিলেন আইনজীবি মি. জাওয়াহিরউল্লাহ।
৮ নারীসহ ৯৮ তাবলীগ সদস্যকে জামিন দিয়েছে বিভিন্ন আদালত। জামিন পাওয়ার পরেও তাদের বন্দী শিবির থেকে ছাড়া হয়নি।
আর বাকি ৩১ জন তাবলীগ সদস্যকে শর্তসাপেক্ষে জামিন দিয়েছিল মাদ্রাজ হাইকোর্টের মাদুরাই বেঞ্চ। কিন্তু তাদেরকেও পুলাল জেলের আরেকটি ভবনে রাখা হয়েছে, যেটিকে বিশেষ নাম দিয়ে বন্দী শিবির বানানো হয়েছে।
এম এইচ জাওয়াহিরউল্লাহ বলছিলেন, ‘একটি ভবনে বড়জোর ৩০ কি ৪০ জন থাকতে পারে। কিন্তু সেখানে ৯৮ জনকে রাখা হয়েছে। আইন অনুযায়ী নারীদের আলাদা রাখার ব্যবস্থা করার কথা, সেটা মানা হয় নি।’
‘পানীয় জলের সমস্যা আছে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশের ঐ শিবিরে। জেলের অন্য বন্দীদের যে খাবার দেওয়া হয়, সেই একই খাবার তাবলীগ সদস্যদেরও দেওয়া হয়।’
‘বাকি যে ৩১ জন, তাদেরকে এই ভবনটিতে আর রাখা হয় নি – সেটা সম্ভব হত না। তাই অন্য একটি ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। প্রতিটা ব্যাপারেই তামিলনাডু সরকার আইন ভঙ্গ করেছে।’
বিদেশি তাবলীগ জামাতের সদস্যদের বিষয়টি এখন সুপ্রীম কোর্টে পৌঁছেছে।
শীর্ষ আদালত প্রশ্ন তুলেছে ওই বিদেশি নাগরিকদের যদি কালো তালিকাভুক্ত করে ভিসা বাতিল করে দেওয়া হয়ে থাকে, তাহলে তাদের কেন এখনও ভারতে রেখে দেওয়া হয়েছে? কেন তাদের নিজেদের দেশে ফেরত পাঠানো হয় নি।
বিবিসি বাংলা।