সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলা খাদ্যগুদামের সিন্ডিকেট ব্যবসায়ী উপজেলা সন্ত্রাসী আওয়ামী লীগ নেতা আরিফুর রহমান মজুমদার দিলীপের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা এবং তা ভিন্নখাতে প্রভাবিত করা হচ্ছে। কৌশল হিসেবে ওই নেতা অনলাইন নিউজ পোর্টালের কতিপয় নামধারী সাংবাদিককে দিয়ে উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি, সাধরণ সম্পাদকসহ তাঁর (দিলীপ) বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিকদের চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার করেছেন। এমনকি একটি স্থানীয় দৈনিকের উপজেলা প্রতিনিধি খাদ্যগুদামে উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও তাঁকে চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
এর প্রতিবাদে আজ বুধবার দুপুরে উপজেলা প্রেস ক্লাবের উদ্যোগে উপজেলা পরিষদসংলগ্ন সড়কে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন স্থানীয় সাংবাদিকরা। মানববন্ধন শেষে প্রকৃত ঘটনা উদ্ঘাটনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করা হয়। এ সময় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মুনতাসির হাসান বিষয়টি তদন্ত করে দেখবেন বলে জানান।
গত রবিবার সুনামগঞ্জের শাল্লা থেকে কিনে আনা নিম্নমানের মোটা ধান অবৈধভাবে ধর্মপাশা খাদ্যগুদামে ঢোকানোর চেষ্টা চালান দিলীপ মজুমদারের ছোট ভাই সম্রাট মজুমদার। এ সময় কৃষকসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিষয়টি ধর্মপাশা উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইসহাক মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক এম এম এ রেজা পহেলসহ স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিককে জানানো হলে তাঁরা বিষয়টি দেখতে সেখানে যান। এ সময় দেখা যায়, সম্রাট মজুমদার একটি বাল্কহেড নৌকা বোঝাই করে ৫৬ জন কৃষকের ধান নিয়ে এসেছেন। ৫৬ জন কৃষকের ধান দেওয়ার জন্য ৫৬ জন কৃষক কার্ড নিয়ে আসবে কি না সাংবাদিকরা জানতে চাইলে খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) সুজন চন্দ্র রায় বলেন, কার্ডগুলো তিনি (সম্রাট) কৃষকদের ম্যানেজ করে এনেছেন। এতে আর অসুবিধা নাই।’
এ ছাড়া তিনি জানান, ৫৬টি কার্ডের মধ্যে ২০টি কার্ড পেয়েছেন এবং বাকি কার্ডগুলো সম্রাট পরে দেবেন। সাংবাদিকরা কৃষকদের উপস্থিতিতে ধান নেওয়ার জন্য ওসিএলএসডিকে বললে সম্রাট মজুমদার এসে বলেন, ‘তোমরারে কি কৃষক আইন্যা দেহানি লাগব? আমার পয়সা দিয়ে আমি ব্যবসা করতে আইছি।’
পরে সম্রাট তাঁর ভাই দিলীপ মজুমদারকে খবর দিয়ে খাদ্যগুদামে আনেন। এ সময় সেখানে কোনো কৃষক উপস্থিত ছিলেন না। দিলীপ মজুমদার খাদ্যগুদামে পৌঁছেই উপস্থিত সাংবাদিকদের গালমন্দ, হুংকার ও চিৎকার-চেঁচামেচি শুরু করেন। এ সময় দিলীপ মজুমদার বলেন, ‘মাইর করলে লাঠি লইয়া আয়, ধান দিলে দেখি কে ফিরায়? আমরা কি বানের জলে ভাইস্যা আইছি। যদি কই খাইয়ালবাম খাইয়াই হালবাম।’
দিলীপ মজুমদারের উপস্থিতিতে সম্রাট প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এম এ রেজা পহেলের গায়ে একাধিকবার ধাক্কা দেন। এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ভাই অশোভন আচরণ করায় ওসিএলএসডি সুজন চন্দ্র রায় তাৎক্ষণিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। বিষয়টি নিয়ে পরদিন সমকাল, কালের কণ্ঠ, যায়যায়দিনসহ বিভিন্ন জাতীয় ও কয়েকটি স্থানীয় দৈনিকে সংবাদ প্রকাশিত হয়। মঙ্গলবার তিনি কিছু স্থানীয় নামসর্বস্ব অনলাইন নিউজ পোর্টাল সাংবাদকর্মীদের নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে নিজের অপকর্ম ঢাকার জন্য তাঁর বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশকারী সাংবাদিকদের চাঁদাবাজ হিসেবে আখ্যায়িত করেন।
স্থানীয় সাংবাদিক চয়ন কান্তি দাস বলেন, আমি সেই দিন খাদ্যগুদামে উপস্থিত ছিলাম না। তবু আমাকে চাঁদাবাজ আখ্যায়িত করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সংবাদ প্রকাশ করা হয়েছে। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে। যা সত্যিই দুঃখজনক।
উপজেলা হাওর বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা সুলতান মজুমদার মানববন্ধনে সংহতি প্রকাশ করে বলেন, জানতে পেরেছি উপজেলা খাদ্যগুদাম কর্মকর্তা ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের মাধ্যমে দুর্নীতিমূলক কাজ করে আসছে। কৃষকের কাছ থেকে ধান নেওয়ার কথা থাকলেও নিম্নমানের ধান পরীক্ষা-নিরীক্ষা ছাড়াই গুদামে ধান দিচ্ছে সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীরা। কালের কন্ঠ
উপজেলা প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক এম এম এ রেজা পহেল বলেন, ’দিলীপ মজুমদার তিনি তাঁর লিখিত বক্তব্যে লাঠি দিয়ে পিটিয়ে সাংবাদিকদের পুলিশে দেওয়ার কথা বলেছেন। আর সাংবাদিক নামধারীরা তা বসে শুনেছেন। যা সত্যিই দুঃখজনক।
উপজেলা প্রেস ক্লাবের সভাপতি ইসহাক মিয়া বলেন, দিলীপ মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছেন, তিনি খাদ্যগুদামে পৌঁছার আগেই সাংবাদিকরা সেখানে থেকে সটকে পড়েন। যা সম্পূর্ণ মিথ্যা। দিলীপ মজুমদার নিজের অপকর্ম ঢাকতে সংবাদ সম্মেলন করে আমার ক্লাবের সদস্যদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মতো একটি ঘৃণ্য অভিযোগ তুলেছেন। যা অত্যন্ত হাস্যকর ও বানোয়াট এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আমি এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’