ভারতের গজলডোবার সবকটি গেট খুলে দেয়া এবং বর্ষণ ও পাহাড়ি ঢলে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল, পানিবন্দি হয়ে পড়েছে লক্ষাধিক মানুষ।
রংপুর অফিস জানায়, তিস্তার পানি ৩৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। একারণে ডালিয়া ব্যারেজ পয়েন্টের ভাটিতে বিস্তার ১৫২ কিলোমিটার অববাহিকায় পানিতে। নিমজ্জিত হচ্ছে বসতবাড়ি আবাদি জমি।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের উত্তরাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী জ্যোতি প্রসাদ ঘোষ জানিয়েছেন, তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় ব্যারেজ প্রকল্পের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে ব্যারেজ রক্ষার চেষ্টা হচ্ছে।
পানি বৃদ্ধির সাথে সাথে নীলফামারীর ডিমলা, জলঢাকা, লালমনিরহাটের পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা, কালিগঞ্জ, আদিতমারি, রংপুরের গংগাচড়া, কাউনিয়া, পীরগাছা, কুড়িগ্রামের রাজারহাট, চিলমারী এবং গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ, সদর ও ফুলছড়ি উপজেলার তিস্তা অববাহিকার ৬৫টি ইউনিয়নের ২৪০টি গ্রামের নিম্নাঞ্চল এবং চরাঞ্চলে হু হু করে ঢুকছে পানি। এতে প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দি হওয়ার আশঙ্কা স্থানীয়দের। মাঝারি এই বন্যার কারণে মানুষের পাশাপাশি গবাদিপশু পড়েছেন গবাদি পশু পড়েছেন দুর্ভোগে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড ও আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে, তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কারণে ভাটিতে ব্রহ্মপুত্র, ধরলা, দুধকুমরসহ রংপুর অঞ্চলের ৩৪টি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি হয়েছে।
বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্র কয়েকদিন আগেই এই অঞ্চলে মাঝারি বন্যার কথা জানালেও প্রশাসনের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে আগাম কোনো প্রস্তুতির খবর মাঠে দেখা যায়নি। ফলে দুর্গত মানুষের আতঙ্কিত হয়ে উঠেছেন।
এদিকে, নীলফামারী সংবাদদাতা জানিয়েছেন, শনিবার সকাল ৬টা থেকে তিস্তা নদীর পানি নীলফামারীর ডালিয়া তিস্তা ব্যারেজ পয়েন্টে বিপদসীমার ২৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেড়ে যাওয়ায় তিস্তা চরবেষ্টিত গ্রামগুলোর প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
নীলফামারীর ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের বন্যা পুর্বাভাস সর্তকীকরণ কেন্দ্র জানায়, শুক্রবার রাত থেকে তিস্তা নদীর পানি বাড়তে থাকে। যা শনিবার সকাল ৬টায় তিস্তার পানি বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে (বিপদসীমা ৫২ দশমিক ৬০ সেন্টিমিটার)। পানির গতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।
তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদী সংলগ্ন পাঁচটি ইউনিয়নের প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে বলে জানিয়েছেন ওইসব ইউনিয়নের চেয়ারম্যানরা।
এদিকে, কিছামত ছাতনাই, ঝাড়সিঙ্গেশ্বর, চড়খড়িবাড়ী.পূর্ব খড়িবাড়ী,পশ্চিম খড়িবাড়ী, তিস্তা বাজার, বাইশপুকুর, ছাতুনামা, ভেন্ডাবাড়ি এলাকার পরিস্থিতি খারাপ হওয়ায় সেখানকার মানুষজন ও গবাদি পশুদের অন্যত্র সরিয়ে নেয়া হয়েছে।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতীফ জানান, ভারতের গজলডোবা থেকে হু হু করে পানি বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে করে পরিস্থিতি ভয়ংকর হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। নয়া দিগন্ত
পানি উন্নয়ন বোর্ড নীলফামারীর ডালিয়া ডিভিশনের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, উজানের পাহাড়ি ঢলে তিস্তা ভয়ংকর রূপ ধারণ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট খুলে রাখা হয়েছে।