স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া নিম্নমানের সুরক্ষাসামগ্রী ব্যবহারের কারণে চট্টগ্রামের ১২ চিকিৎসকের মৃত্যু হয়েছে অভিযোগ করেছে বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ)। সংগঠনের নেতাদের দাবি, জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সেবা দিয়েছেন ডাক্তাররা। কিন্তু স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের বলি হচ্ছেন তারা।
বেশিরভাগ চিকিৎসক মানসম্মত সুরক্ষা সামগ্রীর অভাবে সংক্রমিত হয়ে মারা গেছেন মনে করেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অবহেলা চিকিৎসকদের মৃত্যুর জন্য দায়ী। বর্তমানে করোনা হাসপাতালের অধিকাংশ বেড খালি। কিন্তু গত তিন মাসে হাসপাতালগুলোতে করোনা রোগীর চাপ ছিলো ভয়াবহ। রোগীর তুলনায় চিকিৎসক ছিলো অপ্রতুল।
বিএমএর তালিকা অনুযায়ী, চট্টগ্রামে মোট চিকিৎসক ৪ হাজার ৩৪৯ জন। এর মধ্যে ৪২৪ জন করোনায় আক্রান্ত। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ১৮ জন। আক্রান্ত চিকিৎসকের মধ্যে যাদের শারীরিক জটিলতা বেশি তারা হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন। বেশিরভাগ চিকিৎসক হোম আইসোলেশনে রয়েছেন।
চট্টগ্রামে গত এপ্রিলে দুজন চিকিৎসক আক্রান্ত হলেও মে মাসে শনাক্ত হয়েছেন ৮৬ জন। জুনে আক্রান্ত হয়েছেন ১৯৩ জন। সর্বশেষ চলতি মাসের গত ২১ দিনে ১৪৩ জন চিকিৎসক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার শুরু থেকে এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ১২ চিকিৎসক।
চট্টগ্রামে করোনায় মারা যাওয়া চিকিৎসকরা হলেন আগ্রাবাদ মা ও শিশু হাসপাতালের গাইনি বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. সুলতানা লতিফা জামান আইরিন, চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজের (চমেক) অর্থোপেডিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. সমিরুল ইসলাম বাবু, মুক্তিযোদ্ধা চিকিৎসক নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ ডা. ললিত কুমার দত্ত, চমেকের জরুরি বিভাগের (ইএমও) ডা. মুহিদুল হাসান, বেসরকারি মেরিন সিটি মেডিক্যাল কলেজের মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক ডা. এহসানুল করিম, বেসরকারি মেট্রোপলিটন হাসপাতালের আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার ডা. নুরুল হক, জেমিসন হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. সাদেকুর রহমান, ডা. আরিফ হাসান, চসিকের অবসরপ্রাপ্ত ডা. মোহাম্মদ হোসেন, ডা. জাফর হোসেন রুমি। তাদের মধ্যে দুজন ছাড়া বাকি ৮ জনই বেসরকারি হাসপাতাল ও প্রাইভেট চেম্বারে প্র্যাকটিস করতেন।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ মুক্তিযোদ্ধা ডা. মাহফুজুর রহমান আমাদের সময়কে বলেন, স্বাস্থ্য বিভাগের দুর্নীতি আর অব্যবস্থাপনার কারণেই চিকিৎসকদের এই দশা। তারা লুটপাটে ব্যস্ত চিকিৎসকদের সুরক্ষাসামগ্রী, পিপিই ছাড়া নামিয়ে দেওয়া হয়েছে মৃত্যুঝুঁকিতে। বেশিরভাগ পিপিই মাস্ক নকল, মানসম্মত নয়। এর ফলে চিকিৎসক সংক্রমিত হয়ে পরিবারের সদস্যদেরও আক্রান্ত করেছে। এখনো সময় আছে স্বাস্থ্য দপ্তরকে চিকিৎসকদের কথা ভাবতে হবে। না হলে সেবা দেওয়ার জন্য কেউ থাকবে না।
বিএমএর কেন্দ্রীয় সহসভাপতি ডা. শেখ শফিউল আজম বলেন, নিম্নমানের সুরক্ষাসামগ্রীর কারণে কোভিড-১৯ আক্রান্ত হয়েছেন চিকিৎসকরা। এ ছাড়া যথাযথভাবে পিপিই পরিধান পদ্ধতি বৈজ্ঞানিকভাবে মানা হয়নি। সেরকম প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়নি। চিকিৎসকদের পাশে অন্যান্য যেসব স্বাস্থ্যকর্মী থাকেন তাদের অনেকের পিপিই নেই। যাদের আছে তারাও ঠিকমতো ব্যবহার করতে জানেন না। ফলে চিকিৎসকরা সংক্রমিত হয়েছে দ্রুত।
তিনি আরও বলেন, সরকারিভাবে পিপিই ও মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। তাও আদৌ আসল, নাকি নকল আমরা জানি না। কিন্তু চিকিৎসকরা সেগুলো ব্যবহার করেই সেবা দিয়ে যাচ্ছেন। নকল ও মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী পরিধানের ফলে করোনা পজিটিভ রোগীর সংস্পর্শে এসে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন চিকিৎসকরা। যারা এসব নকল ও মানহীন সুরক্ষাসামগ্রী সরবরাহ করেছেন সেসব ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনতে হবে। আমাদের সময়