রাজশাহী মহানগরী এক সময় ছিল ‘পুকুরের শহর’। শহরজুড়ে ছিল ছোট-বড় অসংখ্য পুকুর। কিন্তু দিনে দিনে সেসব পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। পুকুরের ওপর গড়ে উঠেছে দালান-কোঠা।
এখন ভরাট হচ্ছে রাজশাহী ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজি-সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী ‘টিবি পুকুর’। এই পুকুরের পানিতেই আশপাশের মানুষ গোসলসহ সাংসারিক নানা প্রয়োজন মিটিয়ে থাকেন। কিন্তু এখন পুকুরের দক্ষিণ ও পশ্চিম পাড় ভরাট করে বাড়ি করেছেন কিছু ব্যক্তি। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে চলাচলের রাস্তাও। এ অবস্থায় পুকুর ও রাস্তাকে দখলমুক্ত করার জন্য সম্প্রতি এলাকাবাসী রাজশাহী সিটি করপোরেশনের মেয়রের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেছেন। এর আগে ২০১৫ সালের ১১ আগস্ট নগরীর ছয় নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর নুরুজ্জামান টুকু পুকুর দখলকারী কয়েকজনকে নোটিস দেন। এতে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
কিন্তু এখনো পুকুর ও তার পাশের রাস্তা দখল চলছে। দখলকারী কাউকে উচ্ছেদও করা হয়নি। স্থানীয়রা দখলকারীদের উচ্ছেদ করে ঐতিহ্যবাহী এই পুকুরটির সৌন্দর্যবর্ধনের দাবি জানিয়েছেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, নগরীর লক্ষ্মীপুর এলাকায় প্যারামেডিকেল রোড-সংলগ্ন টিবি পুকুরের পূর্ব দিক দিয়ে আবদুল মতিনের বাড়ি থেকে একটি রাস্তা আছে। রাস্তাটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৩৯০ ফুট। রাস্তাটি এক সময় পশ্চিম প্রান্ত থেকে শুরু করে লক্ষ্মীপুর কাঁচাবাজারে ঠেকেছিল।
কিন্তু পশ্চিম অংশ অবৈধ দখলদারদের কারণে বর্তমানে সরু গলিতে পরিণত হয়েছে। আর পূর্ব দিক পাড় ভাঙতে ভাঙতে টিবি পুকুরের মধ্যে নেমে গেছে।
আবেদনে আরও বলা হয়, পুকুরের পাড় ভরাট করে স্থাপনা গড়ে তুলে সেখানে মাদকের আসর বসছে। চলছে অসামাজিক কার্যকলাপ
দখলকারীরা পুকুরের পানিতে নানান রকমের আবর্জনা ফেলে পুকুরের পানি নষ্ট করছেন। দখলে নেওয়া আধাপাকা বসতবাড়ি, রাস্তার ওপর গড়ে তোলা চার্জারের গাড়ির গ্যারেজ, গরু ছাগলের গোয়ালসহ নির্মাণসামগ্রী পড়ে থাকার কারণে পুকুরের সৌন্দর্য বিলীন হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, কয়েক বিঘা আয়তনের এ পুকুরটির পাড় ভরাট করে ফেলা হচ্ছে। চলাচলের সরু রাস্তার ওপরে গবাদিপশু বেঁধে রাখা হয়েছে। অপরিকল্পিতভাবে পায়খানা নির্মাণ করে মলমূত্র সরাসরি পুকুরের পানিতে নামানো হচ্ছে। এ ছাড়া রাস্তার ধারে গরুর খড়ের পালা রেখে ও নোংরা আবর্জনা ফেলে পুকুরপাড়ের রাস্তাকে আরও সংকীর্ণ করে ফেলা হয়েছে।
স্থানীয়রা অভিযোগে বলেছেন, সাহাবুদ্দিন, রুহুল আমিন, রতন, মাহাতাব উদ্দীন, মাসুদ, সোহেল, রশিদ, ভাষান, মাইনুল ও মনিরসহ আরও অনেকে এভাবে পুকুরপাড় দখল করে স্থাপনা করেছেন। তাদের অন্য স্থানে বাড়িও আছে। কিন্তু টিবি পুকুরের পাড় দখল করে স্থাপনা করে তারা ভাড়া দিয়েছেন। কেউ প্রতিবাদ করলেই তাকে ভয়ভীতি দেখানো হয়। তবে এদের দাবি, তারা নিজেদের কেনা কিংবা পৈতৃক সূত্রে পাওয়া জমিতে স্থাপনা করেছেন। বিডি প্রতিদিন