৬৩ বছর বয়স্ক আব্দুল্লাহ হারিস যখন মার্চ মাসে তাবলিগের সম্মেলনে অংশ নিতে মালয়েশিয়া থেকে ভারতে আসেন, তখন তার কল্পনাতেও ছিল না যে, তার সফর কয়েক মাসের একটা কঠিন পরীক্ষায় রূপ নিতে যাচ্ছে।
ভারতে সেটা তার দীর্ঘতম সফরে পরিণত হয়।
প্রায় ছয় মাস চলে গেছে এবং ভিসার মেয়াদ লঙ্ঘনের জন্য বিহার রাজ্যে মামলার মুখে পড়েছেন হারিস। এখন তিনি অপেক্ষায় আছেন, কবে তিনি দেশে ফিরতে পারবেন।
আনাদোলু এজেন্সিকে তিনি বলেন, “ছয় মাসের মধ্যে ৫৭ দিনই আমাকে জেলে থাকতে হয়েছে। আশা করছি শীঘ্রই ফিরতে পারবো”।
অরাজনৈতিক ইসলামি মিশনারী সংগঠন তাবলিগ জামাতের ইজতেমায় অংশ নিতে ভারতে এসেছিলেন হারিস।
কিন্তু কোভিড-১৯ ছড়াতে শুরু করে, এবং নয়াদিল্লীতে মার্চে অনুষ্ঠিত তাবলিগ জামাতের ইজতেমা থেকে ভাইরাস ছড়ানোর খবর প্রকাশের পর মুসলিমদের বিরুদ্ধে ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে অভিযোগ তোলা শুরু হয়।
সরকার নিজেও তাবলিগের প্রধান মাওলানা মোহাম্মদ সাদ কান্দালভির বিরুদ্ধে মামলা করে। তাবলিগের ইজতেমায় অংশ নেয়া দেশি বিদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধেও মামলা করা হয়।
সমস্যা এখনও চলছে
তবে এই সমস্যায় হারিস একাই ভুগছেন না।
বিদেশী ও ভারতীয় অনেক নাগরিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ নাকচ করে দিয়েছে আদালত। তবে অনেকের দুর্ভোগ এখনও জারি রয়েছে।
তাবলিগ জামাতের সদস্য ২৭ বছর বয়সী ভিয়েতনামের নাগরিক হাসান বাসরিও মার্চে ভারতে এসেছিলেন। এক মাস পরেই তার ফেরার কথা ছিল। কিন্তু হায়দ্রাবাদে অন্যান্যদের সাথে এখনও মসজিদেই বাস করতে হচ্ছে তাকে।
তিনি বলেন, “নয়াদিল্লীর নিজামুদ্দিনে দুই দিন থাকার পরেই আমরা হায়দ্রাবাদে চলে আসি। দেশে যখন লকডাউন শুরু হয়, তখন আমাদের বিরুদ্ধে ভিসা লঙ্ঘনের মামলা করায় বিস্মিত হয়েছি”।
গত মাসে, স্থানীয় আদালত তাকে গ্রেফতারের দাবি খারিজ করে দেয়, তাকে জরিমানা দিয়ে ছেড়ে দেয়া হয়। বাসরি বলেন, “সৌভাগ্যজনকভাবে, আমাকে জেলে পাঠানো হয়নি। এপ্রিল থেকে আমরা মসজিদেই আছি। বাড়ি যেতে চাই আমি, কিন্তু ভিসা নিয়ে সমস্যায় আছি। যত দ্রুত সম্ভব বাড়ি যেতে চাই আমি”।
ভারতীয়দের বিরুদ্ধেও মামলা দিয়েছে পুলিশ। বেশ কয়েক মাস আটক থাকার পর অনেকেই এখন জেল থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
ঝাড়খাণ্ডে আরও ১১ জনের সাথে আটক ছিলেন এক ব্যক্তি। মুক্তির পর তিনি বলেন, “আমি খুশি যে আমাকে ছেড়ে দেয়া হয়েছে। আমাদের বিরুদ্ধে কোভিড-১৯ ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছিলো। খুবই মানসিক আঘাতের ছিল বিষয়টা”।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবি ফুজাইল আহমেদ আইয়ুবি আনাদোলু এজেন্সিকে বলেন, “তাবলিগ সদস্যদের বিরুদ্ধে জীবন হরণকারী রোগ ছড়ানোর অভিযোগ আনা দেখে বিস্মিত হয়েছি, যেখানে তাদের অধিকাংশেরই কোভিড-১৯ পরীক্ষায় কোন রোগ ধরা পড়েনি”।
আরও অভিযোগ খারিজ হয়েছে
আইয়ুব বলেন, বিষয়টা যখন আদালতে গেছে, তখন প্রসিকিউশান তাদের অবস্থান প্রমাণ করতে পারেনি।
তিনি বলেন, “সে জন্য, বহু মামলায় আদালত বিবেচনায় নেয়নি। কিছু জায়গায় আদালত তাদেরকে মুক্তি দিয়েছে। আওরঙ্গবাদের হাই কোর্ট বেঞ্চ অপরাধী মামলা খারিজ করে দিয়ে সরকার ও মিডিয়াকে কড়া ভাষায় সতর্ক করে দিয়েছে। তবে অধিকাংশ মামলার এখনও আদালতে নিষ্পত্তি হয়নি, কারণ আদালত এখন পুরোদমে কাজ করতে পারছে না”।
“ভারতের সুপ্রিম কোর্ট দিল্লি আর বিহারের প্রতি নির্দেশ দিয়ে যাতে মামলার প্রক্রিয়া দ্রুততর করা হয় এবং আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে সব মামলার নিষ্পত্তি করা হয়। উত্তর প্রদেশকেও চলতি সপ্তাহে এ ধরণের আদেশ দেয়া হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে”।
বোম্বে হাই কোর্ট গত মাসে শুধু মামলাই খারিজ করেনি, বরং আরও বেশ কিছু আদালত তাবলিগি সদস্যদের বিরুদ্ধে এ ধরণের মামলা বন্ধ করে দিতে শুরু করেছে। মুম্বাইয়ের একটি আদালত বৃহস্পতিবার আটজন ফিলিপাইনের নাগরিককে মুক্তি দিয়েছে, যাদেরকে ভিসা লঙ্ঘনের আইনে আটক করা হয়েছিলো।
বোম্বে আদালত বলেছে, “সম্ভাবনা রয়েছে যে, এই বিদেশীদের বলির পাঁঠা বানানো হয়েছে”। আদালত বলেছে যে, এমন একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে যে, ভারতে ভাইরাস ছড়ানোর জন্য বিদেশী মিশনারীগুলো দায়ি।
ভারতীয় এক তাবলিগ জামাতের সদস্য বলেন, “আমি এখনও বুঝতে পারিনি ভারতে ভাইরাস ছড়ানোর জন্য কেন শুধু একটি সম্প্রদায়কেই দায়ি করা হচ্ছে। এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা”।
আনাদোলু এজেন্স