
যা হওয়ার নয়, তা-ই হয়েছে। সরকারের নিয়ন্ত্রণহীন বাজারে আলুর দাম ইতিহাস গড়েছে। খুচরা বাজারে আলু এখন ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি। গত দুই দিনেই পণ্যটির দাম বেড়েছে কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আলুর এই দাম গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩৩ শতাংশ বেশি। অবশ্য ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাবে প্রায় ১০০ শতাংশ বেশি।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, নিজেদের উৎপাদিত পণ্যটির দাম স্বাধীনতার আগে তো নয়ই, স্বাধীনতার পরও এত বাড়েনি।
ভোক্তারা বলছেন, উচ্চবিত্তদের খাদ্য তালিকায় তেমন জরুরি না হলেও নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের সংসারে আলুর কদর অনেক। বিশেষ করে বাজারে অন্য সবজির দাম যখন লাগামছাড়া তখন আলুই ভরসা। এখন সেই আলু কেনারও সামর্থ্য তাদের নেই। দাম ব্যাপক চড়তে চড়তে নাগালের বাইরে চলে গেছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আলু এখন হিমাগারে। সুতারাং দামও নিয়ন্ত্রণ করেন হিমাগারের মালিকরা।
তবে হিমাগারের মালিকরা বলছেন, তাঁদের কাছে থাকা আলুর মালিক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা। ভাড়ার বিনিময়ে তাঁরা শুধু আলু সংরক্ষণ করেন। এবার আলু উৎপাদনও কম হয়েছে, ফলে মৌসুম শেষ হওয়ায় দামও বাড়িয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া মধ্যস্বত্বভোগীরাই বেশির ভাগ ক্ষেত্রে দাম বাড়াচ্ছে বলে হিমাগার মালিকদের দাবি।
আলুর এমন দাম আর কখনো হয়নি বলে জানালেন হিমাগার মালিকদের সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মোজাম্মেল হক। তিনি বলেন, চলতি বছর (মার্চে সমাপ্ত মৌসুম) আলুর উৎপাদন আগের বছরের তুলনায় ২০ শতাংশ কম হয়েছে। ফলে অনেক ব্যবসায়ীর ধারণা, আলুর দাম আরো বাড়বে। তাই অনেকে হিমাগার থেকে আলু তুলছেন না। এ ছাড়া আলুর দাম এখন নিয়ন্ত্রণ করছে মধ্যস্বত্বভোগীরা। ফলে দাম বেড়েই চলেছে।
মৌসুম শুরুর পর বাজারে আলু সাধারণত ২০ টাকা কেজির মধ্যে থাকে। শীতের আগে যখন মজুদ শেষের দিকে থাকে, তখন প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করেন বিক্রেতারা। এবার প্রবণতা ভিন্ন। গত মার্চে যে আলু হিমাগারে ঢুকেছিল, ছয় মাস পেরোতেই সেটা কেজিপ্রতি ৫৫ টাকায় উঠে গেছে। নতুন মৌসুমের আলু পুরোদমে বাজারে আসতে আরো চার-পাঁচ মাস বাকি।
রাজধানীর মালিবাগ, মানিকনগর, মুগদাসহ বিভিন্ন খুচরা বাজারে কয়েক দিন আগেও বাজারগুলোতে ৪৫ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি হয়েছে।
টিসিবির হিসাবে, গত বছর এই সময় আলুর কেজি ছিল ২০ থেকে ২৫ টাকা। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় দাম বেড়েছে ৩০ টাকা বা ১৩৩ শতাংশ পর্যন্ত।
টিসিবির হিসাবে এক মাসের ব্যবধানে পণ্যটির দাম বেড়েছে ১৩ শতাংশ। আর বছরের হিসাবে বেড়েছে ৯৫.৫৬ শতাংশ। টিসিবির মূল্য তালিকায় গতকাল আলুর দাম ছিল ৩৮ থেকে ৫০ টাকা কেজি।
মানিকনগর বাজারের আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা আবুল হোসেন বলেন, গত দুই দিন ধরে আলুর দাম বাড়ছে। গতকাল তাঁদের কিনতে হয়েছে ৪৬ টাকা কেজি দরে। কমিশন, শ্রমিকের মজুরি, পরিবহন খরচ ও ঘাটতি যোগ করে ৫০ টাকার নিচে বিক্রি করা যায় না।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, দেশে বছরে ৯৫ লাখ থেকে এক কোটি টন আলু উৎপাদিত হয়। বাংলাদেশ কৃষি সমপ্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) বলছে, গত বছর এক কোটি ৯ লাখ টন আলু উৎপাদিত হয়েছে।
গত অর্থবছরে (২০১৯-২০) দুই কোটি ৩৩ লাখ মার্কিন ডলারের আলু রপ্তানি হয়েছে, যা আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ৮৬ শতাংশ বেশি।