আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো কী পেল?

    0
    1278
    আফগানিস্তান থেকে ন্যাটো কী পেল?

    ন্যাটোর সেক্রেটারি-জেনারেল জেনস স্টলটেনবার্গ বলেছে, ‘এখন আমরা কঠিন সিদ্ধান্তের মুখোমুখি হয়েছি। দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর যাবৎ আমরা আফগানিস্তানে রয়েছি। আর ন্যাটোর কোনো সদস্যই প্রয়োজনের অতিরিক্ত সময় অবস্থান করতে চায় না। তবে দ্রুত বা অসংরক্ষিত অবস্থায় চলে যাওয়ার মূল্যও অনেক বেশি।’ ন্যাটোর এই বক্তব্য থেকে একটি প্রশ্ন উদয় হয়, বিগত বিশ বছর ধরে আফগানিস্তানে ন্যাটো এমন কী অর্জন করেছে যা হারানোর ভয় তারা করছে?
    ৭ই অক্টোবর, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ; মার্কিন নেতৃত্বে আফগানিস্তানে এক অন্যায় হামলা চালানো শুরু করে ন্যাটো জোট। এটা ছিল আফগান মুসলিমদের জন্য একটা দুর্ভাগ্যের দিন। আফগানীরা দেখলেন, তাঁদের আনন্দ ও আশা-আকাঙ্ক্ষাগুলো মানবাধিকারের পতাকাবাহী মুখোশধারীরা পিশে ফেলছে। ন্যাটো জোট তাদের বি-৫২ প্লেন, ক্রুজ মিসাইল, ক্লাস্টার বোমা এবং অন্যান্য বিধ্বংসী অস্ত্রশস্ত্র দিয়ে আফগান মুসলিম জনসাধারণের পবিত্র আকাঙ্ক্ষাকে ধ্বংস করে দিয়েছে। মুসলিমদের আকাঙ্ক্ষা ছিল—সকল সরকারব্যবস্থার সেরা ও সবচেয়ে বিশুদ্ধ ইসলামি শাসনব্যবস্থা আফগানিস্তানে বাস্তবায়িত হবে। আর এর বিপরীতে, ন্যাটো বাহিনী আফগানিদের উপর এমন কিছু ব্যক্তির সরকারকে চাপিয়ে দিয়েছে, যাদের রয়েছে অপরাধের রেকর্ড, যাদের মন-মস্তিষ্কজুড়ে আছে দুর্নীতি। এই লোকগুলো আফগান জাতিকে নির্যাতন ও লুটপাটের মাধ্যমে নিজেদের স্বার্থ উদ্ধারে সর্বাধিক ব্যস্ত।
    ন্যাটোর চাপিয়ে দেওয়া সরকার আমাদের দেশের যে পরিমাণ ক্ষতি করেছে, ইতিহাসে এর অনুরূপ দৃষ্টান্ত খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। আমাদের পবিত্র জায়গাগুলোকে অপবিত্র করা হয়েছে, আমাদের ঐতিহ্যকে ছুড়ে ফেলা হয়েছে, আফগান জাতির সম্মান ও খ্যাতিতে আঘাত হানা হয়েছে, আমাদের স্বাধীনতা লুণ্ঠিত হয়েছে, আঞ্চলিক স্থিতিশীলতা হুমকির সম্মুখীন হয়েছে, আমাদের জাতীয় বীরদের বিদ্রুপ করা হয়েছে, আমাদের পরিচয় ও সংস্কৃতি বিকৃত করা হয়েছে, আফগানিস্তান পরিণত হয়েছে বিশ্বের নাম্বার ওয়ান দুর্নীতিগ্রস্ত দেশে, এবং অগণিত আফগানীকে শহীদ ও আহত করা হয়েছে, বন্দী করে রাখা হয়েছে কারাগারে। সংক্ষেপে, ন্যাটো ও তার এদেশীয় গোলামেরা চরম অরাজকতা ও ক্ষতিকর পরিবেশ আফগান জাতির উপর চাপিয়ে দিয়েছে, যা থেকে রক্ষা পায়নি কোনো নিষ্পাপ শিশু, দুর্বল মহিলা এবং এমনকি হাড্ডিসার বৃদ্ধরাও।
    উল্লেখ্য যে, যদিও কোনো আফগানী ন্যাটোর কোনো সদস্য দেশ বা আমেরিকাকে আক্রমণ করেননি, তবুও ন্যাটো ও এর মিত্ররা আফগানিস্তান ও তার জনগণের উপর এই ভয়াবহ ধ্বংস চাপিয়ে দিয়েছে। কেবল নিজেদের সাম্রাজ্যবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করার জন্য আমেরিকা ও ন্যাটো আমাদের দেশে আক্রমণ করেছে এবং এদেশের জনগণকে এমন এক অকল্পনীয় ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি করেছে যা আজ দুইদশক পর পর্যন্ত সমাপ্তির মুখ দেখেনি। আফগানীরা দেখেছে যে, গণতন্ত্র আমেরিকান বুলেটের আকৃতিতে তাদের সন্তানদের ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে দিচ্ছে অথবা বোমার আকৃতিতে ধ্বংস করছে তাদের বসতবাড়ি, তবুও কেন আফগানীদেরকে আবশ্যিকভাবে গণতন্ত্রের দ্বারা অনুপ্রাণিত হতে হবে?
    আফগানীরা তাদের দেশে ন্যাটোর উপস্থিতিতে কোনোভাবে উপকৃত হয়নি। বরং, ন্যাটোর উপস্থিতি অনেক অনেক সমস্যা ও ক্ষতি নিয়ে এসেছে। এটা এখনো অজানা রয়ে গেল যে আফগানিস্তানে ন্যাটো প্রকৃতপক্ষে কী এমন সফলতা পেয়েছে যা নিয়ে তারা গর্ব করবে! কেননা, নিরপরাধীদের উপর গণহত্যা চালানো, সাধারণ মানুষের বসতবাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া এবং অবাধে গ্রেফতার করা ছাড়া তাদের অর্জন আর কী!
    ন্যাটো আফগান ছেড়ে চলে যাবে, এটাই জরুরিভিত্তিতে প্রত্যাশিত। তারা চলে যাওয়ার ব্যাপারে যে পরিস্থিতির আশঙ্কা করছে, তা ভিত্তিহীন। কেননা, আফগান জনগণের বৈধ প্রতিনিধি হিসেবে ইসলামী ইমারত বার বার পরিষ্কার করে বলেছে এবং আবারো বলছে যে, ইসলামী ইমারত আফগানিস্তানে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করতে মনস্থ। আর আফগান জনসাধারণও এটাই চায়। এটা ছাড়া ইসলামী ইমারত না কোনো দেশে আক্রমণ করেছে আর না হুমকি দিয়েছে। আর কোনো অবস্থাতেই অন্য কারো আকাঙ্ক্ষা আমাদের উপর চাপিয়ে দেওয়া অথবা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়াদিতে হস্তক্ষেপ করা ইসলামী ইমারত মেনে নেবে না।
    ইসলামি ইমারত ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার দোহা চুক্তিতে এটা পরিষ্কারভাবে উল্লেখিত আছে যে, সকল দখলদার বাহিনী আফগানিস্তান ত্যাগ করবে এবং আমেরিকা ও এর মিত্রদের বিরুদ্ধে আফগান ভূমি ব্যবহারের অনুমতি কাউকে দেওয়া হবে না। ইসলামি ইমারত দোহা চুক্তির প্রতি আনুগত্যশীল। বিপরীতপক্ষেরও উচিত নয় নিজেদের কথায় বিশ্বাসঘাতকতা করা। ভেবে দেখুন, এই চুক্তি কেবল আফগান জনগণকেই উপকৃত করবে না, বরং আমেরিকা ও এর মিত্ররাও উপকৃত হবে।
    বিশ্ববাসীকে একগুঁয়েভাবে প্রতারিত করা থেকে বিরত থাকার জন্য ন্যাটোর এখনই সময়। আফগানিস্তানে অবৈধ দখলদারিত্ব দীর্ঘায়িত করতে নানা অজুহাত তৈরি করতে থাকা বোকামি ছাড়া আর কিছু নয়। শান্তি প্রতিষ্ঠার সুবর্ণ সুযোগ হাতছানি দিচ্ছে। ন্যাটোকে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে যেন তারা এই সুযোগকে হাতছাড়া না করে; যেন আবারো তারা ঐ একই উপায় অবলম্বন না করে, যে উপায়ে তারা অবিবেচনাপ্রসূতভাবে বিগত ২০ বছর আফগানিস্তানে নিজেদের জীবন ও অর্থের অপচয় করেছে। এই বিশটি বছর পরিষ্কারভাবে প্রমাণ করেছে যে, ন্যাটোর জন্য এই বছরগুলো ছিল নিষ্ফল। আর ইসলামী ইমারত ন্যাটোকে নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, আরো অধিক পরিমাণ এখানে অবস্থান করা নিরর্থক প্রমাণিত হবে।

    [ইসলামী ইমারতের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট থেকে অনূদিত]

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধলাদাখ সীমান্তে হাজার হাজার সেনা মোতায়েন করেছে চীন, বিপাকে ভারত
    পরবর্তী নিবন্ধউইঘুর | শুকরের মাংস খেতে বাধ্য করা হচ্ছে মুসলিমদের