রাজধানীর মিরপুরে পল্লবীর তালতলা বস্তিতে আগুনে নিঃস্ব হয়ে রাস্তায় নেমে এসেছেন গার্মেন্টকর্মী রাজিয়া খাতুন। গত সোমবার দুপুরে বস্তিতে যখন আগুন লাগে তখন তিনি এবং তার স্বামী রিকশাচালক হামিদুল ছিলেন বাইরে।
খবর পেয়ে ফিরে এসে দেখেন সব পুড়ে ছাই। শুধু রাজিয়া দম্পতি নয়, বস্তিতে লাগা আগুনে প্রতিনিয়তই নিঃস্ব হচ্ছেন হতদরিদ্র এই মানুষগুলো। তবে বস্তিতে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ অজানাই থেকে যাচ্ছে।
কিছুদিন পরপর বস্তিতে আগুন লাগাকে নিছক দুর্ঘটনা বলতে রাজি নন অনেকেই। তারা বলেন, এর পেছনে অনেক স্বার্থ লুকিয়ে থাকার বিষয়টিও গুরুত্ব দিতে হবে।
ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স বলছে, সর্বশেষ পল্লবীর তালতলা বস্তির আগুন নিয়ে এ বছর রাজধানীতেই ৩১টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। গত ২৪ দিনের ব্যবধানে ঘটেছে ৪টি অগ্নিকাণ্ড।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এসব আগুন নিয়ে বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন ও কানাঘুষা রয়েছে। প্রতিটি আগুন লাগার পর একাধিক তদন্ত কমিটি গঠিত হলেও তা কখনও আলোর মুখ দেখে না।
ফলে আগুন লাগার প্রকৃত কারণ অজানাই থেকে যাচ্ছে। এর পেছনে কোনো রাঘববোয়াল থাকলেও তারা সামনে আসছে না।
বস্তির চাঁদাবাজি নিয়েও অনেক ঘটনা ঘটছে। গত বছরও রাজধানীর বিভিন্ন বস্তিতে ৩১টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। কোনো কোনো বস্তিতে প্রতিবছরই নিয়ম করে আগুন লাগে।
বস্তিবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বস্তিতে আগুন নিছক দুর্ঘটনা নয়, এগুলো পরিকল্পিত। উচ্ছেদ করতেই এসব আগুন লাগানো হয়। মহাখালীর সাততলা বস্তিতে পাঁচ বছরে ৬ বার আগুন লাগে।
সবশেষ গত ২৫ নভেম্বর সাততলা বস্তিতে আগুন লাগে। এর পরদিন ২৬ নভেম্বর মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লায় এবং ওইদিন রাতেই মিরপুরের বাউনিয়াবাদ এলাকার বস্তিতে আগুন লাগে। ওই আগুনে কয়েকশ’ মানুষ নিঃস্ব হয়ে যায়।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. এএসএম মাকসুদ কামাল যুগান্তরকে বলেছিলেন, বস্তিগুলোতে স্বার্থান্বেষী মহলের আগুন লাগানোর অভিযোগ বহুদিনের। এটিকে উড়িয়ে দেয়া যায় না।
ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের হিসাব বলছে, গত বছর সারা দেশে ২৪ হাজার ৭৪টি অগ্নিকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে বস্তিতেই ১৭৪টি।
এর মধ্যে ঢাকায় ৩১টি, চট্টগ্রামে ৪৬টি, বরিশালে ২টি এবং রংপুরে সর্বোচ্চ ৯৫টি অগ্নিদুর্ঘটনা ঘটে। এতে ক্ষতির পরিমাণ ৭ কোটি ৩৩ লাখ ১২ হাজার টাকা।
ঢাকায় সর্বোচ্চ ৫ কোটি ২১ লাখ টাকার ক্ষতি হয়। চট্টগ্রামে ক্ষতি হয় ৩৭ লাখ ৩৮ হাজার, বরিশালে ১ লাখ ২৫ হাজার, রংপুরে ১ কোটি ৭৩ লাখ টাকার ক্ষতি হয়।
জানা গেছে, দেশের ২৪ জেলার ২৯ শহরে ৪৫ হাজার বস্তি আছে। এর মধ্যে টঙ্গী ও সাভারে বস্তির সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। বস্তিগুলো ৫ হাজার একর সরকারি জমির ওপর গড়ে উঠেছে।
বস্তি সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, এগুলো শুধুই দুর্ঘটনা নয়। অনেক সময় স্বার্থান্বেষী মহল জায়গা দখলের জন্য এ ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছে।
গত নভেম্বরে মোহাম্মদপুরের জহুরি মহল্লায় আগুন লাগার পর ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ১৯৯১ সালে সরকারি জমিতে এই বস্তি ওঠে।
এর আগেও এ জায়গা দখলে নেয়ার চেষ্টা করা হয়েছিল। আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় নিতে পারেনি। বস্তির বাসিন্দাদের কারও কারও অভিযোগ স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তির বিরুদ্ধে।
প্রায়ই তিনি লোক মারফত বস্তি ছেড়ে লোকজনকে চলে যেতে বলেন। এর আগেও একবার বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছে। বস্তির জমি বেচাকেনার ঘটনাও ঘটেছে।