জুহেইল রাজাবির টেলিভিশনে চলে না কোনো চলচ্চিত্র বা সংবাদ। ঘরে থাকা টেলিভিশনের বিশাল স্ক্রিনজুড়ে আছে শুধু দশটি নজরদারি ক্যামেরার দৃশ্য। নিজের ঘরে বসে পরিস্থিতি নজরে রাখাই যেন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে আজকাল রাজাবির। পূর্ব জেরুজালেমের সিলওয়ানে বাস রাজাবির। সিলওয়ান শহর তার সাবেক সৌন্দর্য হারিয়েছে। এখন সেখানে শুধুই ইসরায়েলি দখলদারিত্বের চিহ্ন।
বার্তা সংস্থা এএফপিকে ৪৯ বছর বয়সী রাজাবি বলেন, নিরাপত্তার জন্যই মূলত ওই নজরদারি ক্যামেরাগুলো কাজে লাগে।
ইহুদি সেটেলাররা যাতে তাকে উত্ত্যক্ত করতে না পারে, আর কিছু করলেও তার প্রমাণ যেন থাকে তাই ওই ক্যামেরাগুলো বসানো হয়েছে। তিনি বলেন, ‘এই এক টুকরো কাগজ প্রমাণ করে যে, ১৯৬৬ সালে আমার বাবা এই জমিটি কিনেছিলেন। কিন্তু ইসরায়েলি আদালত এই প্রমাণ সম্পর্কে জানতে চায় না।’ তার হাতের কাগজটি মূলত জর্ডান কর্তৃপক্ষের ইস্যু করা। যখন জমিটি বিক্রি করা হয়েছিল তখন পূর্ব জেরুজালেম নিয়ন্ত্রণ করত জর্ডান। ১৯৬৭ সালে ছয় দিনের যুদ্ধে জর্ডানের কাছ থেকে সেই নিয়ন্ত্রণ নেয় ইসরায়েল।
গত পাঁচ বছর ধরে রাজাবি তার জমি নিয়ে আইনি লড়াইয়ের মধ্যে আছেন। তার আইনি লড়াই তিন ইসরায়েলি ইজহাক রালবাগ, আব্রাহাম শেফারম্যান ও মরডেকাই জারবিভের বিরুদ্ধে। এই তিন ইহুদি আবার রাব্বি মোসে বেনভেনিস্তি নামের একটি ট্রাস্টের হয়ে এই মামলায় লড়ছেন রাজাবির বিরুদ্ধে। বেনভেনিস্তি ট্রাস্ট দাবি করে যে, রাজাবির জমিটির মালিক আসলে তারা। এই দাবি প্রমাণে তারা ১৯ শতকে অটোমান সাম্রাজ্যের ইস্যু করা একটি দলিল উত্থাপন করে। ১৯২০ সালে ব্রিটিশদের সীমান্ত ব্যবস্থা চালু হওয়ার আগ পর্যন্ত পূর্ব জেরুজালেম ছিল অটোমানদের অধীনে।
ট্রাস্টটির দাবি, রাজাবির জমিতে বাস করতেন এক ইয়েমেনি ইহুদি। ১৯২৯ এবং ১৯৩৬ সালের যুদ্ধে আরবদের হাতে উচ্ছেদ হয়েছিলেন ওই ইহুদি। ১৯৭০ সালে ইসরায়েল জমি অধিগ্রহণ প্রশ্নে একটি আইন পাস করে। ওই আইনের অধীনে ১৯৪৮ সালের আগে ও পরে হারানো সম্পত্তির মালিকানা দাবি করতে বলা হয় ইহুদিদের। ওই আইন বলেই ট্রাস্টটি রাজাবির জমির দখল চাইছে।
আজ আবার আদালতে মুখোমুখি হবেন রাজাবি ও রালবাগ-শেফারম্যান। এমন এক স্থানে রাজাবির জমি যেখান থেকে আল আকসা ও সাউদার্ন ওল্ড সিটি ওয়াল দেখা যায়।
রাজনৈতিকভাবে রাজাবির জায়গাটি খুব গুরুত্বপূর্ণ হওয়ায় এর দখল চাইছে ইসরায়েল। অথচ রাজাবি বলছেন, ১৯৬০ সাল থেকেই তারা ওই স্থানে বাস করছেন। ইসরায়েলি কর্র্তৃপক্ষ একাধিকবার অর্থ সেধেছে রাজাবিকে জমি বিক্রির জন্য। শুধু অর্থই নয়, ফিলিস্তিনের অন্য কোনো স্থানে বিলাসবহুল বাড়ি করে দেওয়ার প্রস্তাবও দেয় ইসরায়েল। কিন্তু কোনো প্রস্তাবই গ্রহণ করেননি রাজাবি।
সিলওয়ানে রাজাবির এই ঘটনা খুব সাধারণ বিষয়। এমন অনেক জমিই দখল করতে চাইছে ইসরায়েল। কোথাও জোর খাটিয়ে, কোথাও আইনি প্যাঁচ খাটিয়ে চলছে জমি দখল। সেই দখলকৃত জমিতে সাধারণ ইসরায়েলিদের বসতি গড়ে দিচ্ছে তেলআবিব। ওই ইসরায়েলিদের আর্থিক ও সামাজিক নিরাপত্তার সব দায়িত্ব নিচ্ছে ইসরায়েলি প্রশাসন।