গত বৃহস্পতিবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত চীনা দূতাবাস একটি টুইটে ভয়ংকর তথ্য উল্লেখ করেছে। টুইটে দাবি করা হয়, ‘চীনের জিনজিয়াং প্রদেশের বন্দী শিবিরে থাকা উইঘুর মুসলিম নারীদের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তারা আর বাচ্চা তৈরির মেশিন নয়’।
টুইটে উল্লেখ করা হয়, উইঘুরদের চরমপন্থা হ্রাস পেয়েছে, ‘নারীরা মানসিকভাবে মুক্তি পেয়েছে, লিঙ্গ বৈষম্য দূর হয়েছে, তাদের স্বাস্থ্যকে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে তারা আর বাচ্চা জন্মদানের মেশিন হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছেনা। তারা আরও আত্মবিশ্বাসী এবং স্বাধীন’। খবর মিডলইস্ট আই।
কথিত ‘জিনজিয়াং উন্নয়ন গবেষণা কেন্দ্রের’ উদ্ধৃতি দিয়ে টুইটে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ অস্বীকার করে দাবি করা হয়, ‘জন্মহার কমানোর জন্য কোন প্রকার পদ্ধতি নেয়া হয়নি, বরং “উগ্রবাদ” নির্মূল ও উইঘুর নারীদের সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে পূর্বের চেয়ে আরও বেশি স্বাধীনতা দেয়া হয়েছে’।
অথচ, বেশ কয়েকটি সংবাদ মাধ্যম জিনজিয়াংয়ে জোর করে নারীদের বন্ধ্যাকরণ করার প্রমাণ পেয়েছে।
গত বছর, একজন শিক্ষিকা কেলবিনূর সিদিক ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ কে বলেছিলেন যে, মুসলিম সংখ্যালঘু নারীদের জন্মহার দমনের জন্য একটি সরকারী প্রচারণার আওতায় তাকে স্টেরিলাইজ করা হয়েছিল।
কেলবিনূর গার্ডিয়ানকে বলেন, ২০১৭ সালে আমি একটি বিদ্যালয়ের অফিসিয়াল কর্মী ছিলাম। এ জন্য তারা আমাকে ‘আইইউডি’ বা ‘স্টেরিলাইজেশন অপারেশন’ করার জন্য বাধ্য করে। পরবর্তীতে ২০১৯ সালে তারা জানায় যে, সরকারের কাছ থেকে একটি নির্দেশ এসেছে, ১৮ বছর থেকে ৫৯ বছর বয়সী প্রতিটি মহিলাকে স্টেরিলাইজেশন অপারেশন করতে হবে।
প্রতিবেদনে দেখা গেছে যে, চীন সরকার ‘পুনঃশিক্ষা শিবির’ নাম করে গত কয়েক বছরে প্রায় এক মিলিয়ন উইঘুরকে আটক করেছে। তাতে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে বলে দাবি করা হয়।
নামাজ আদায় করা, রোজা রাখা, মদপান থেকে বিরত থাকা, দাড়ি বাড়ানো বা ইসলামী পোশাক পরিধান সহ – ইসলামি সংস্কৃতির সাথে সম্মতি প্রদর্শনকারী উইঘুরদের চীনা সরকার আটক করেছে এবং নাস্তিক্যবাদী সংস্কৃতি মেনে চলতে বাধ্য করা হচ্ছে।
গত বছর, বার্তা সংস্থা এপির তদন্তে দেখা গেছে যে, যাদের বেশি সন্তান রয়েছে তাদের ‘জঙ্গি’ হিসেব উল্লেখ করে কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বন্দী করা হয়েছে।
তদন্তে আরও দেখা গেছে যে, জিনজিয়াং প্রদেশে জন্মেহার অভূতপূর্ব ও নাটকীয়ভাবে হ্রাস পেয়েছে। এ প্রদেশটি চীনের অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল জনসংখ্যার অঞ্চল হিসেবে বিবেচিত হতো। প্রমাণ পাওয়া যায় যে, পরিবার পরিকল্পনা আইন লঙ্ঘনের জন্য মোটাদাগে জরিমানা করারও।
চীনা বিশেষজ্ঞ অ্যাড্রিয়ান জেনজের অপর একটি প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, জিনজিয়াংয়ে বন্দী নারীদের পিরিয়ড বন্ধে ইনজেকশন দেওয়া হতো। এর মাধ্যমে নারীদের সন্তান জন্মদানে অক্ষম করা হচ্ছে।
সরকারী রেকর্ড, সাক্ষাৎকার এবং ভিডিও চিত্রের উপর ভিত্তি করে গত বছর বুজফিড পরিচালিত এক তদন্তের বিষয়টিও প্রকাশ পেয়েছে যে, কনসেন্ট্রেশন ক্যাম্পে বিভিন্ন কারখানা তৈরি করা হয়েছে। যেখানে মুসলিম বন্দীদের জোর করে কাজ করানো হচ্ছে এবং নারীদের বন্ধা করণ (স্টেরিলাইজেশন), শরীর থেকে অঙ্গ-প্রতঙ্গ সংগ্রহ করে আসছে।
কানাডিয়ান সিনেটর লিও হোসাকোস সহ অনেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। এ সম্পর্কে অনেকেই মুসলিম বিশ্বের নেতাদের প্রতিক্রিয়াও জানাতে চেয়েছেন।
মধ্য প্রাচ্যের বসবাসকারী উইঘুররা এর আগে চিনে প্রত্যাবর্তনে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেছেন চীনে ফিরলে তাদের আটক ও নির্যাতন করা হতে পারে।
সূত্র : মিডলইস্ট আই