এটি দুই মাস বয়সী শিশু মুহাম্মদের গল্প – শ্রীলঙ্কান প্রশাসন শিশুটির মৃত দেহ জোর করে পুড়িয়ে দিয়েছে। গত বছর ৩০ অক্টোবর শিশুটির জন্ম। দিনটি মিলাদ-উন-নবী (মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জন্মদিন) হওয়ায় পিতা-মাতা আদর করে নবীজির নামেই নামকরণ করেন।
শিশুটির পিতা নিয়াস জানান, শিশু মুহাম্মদ তাঁর দ্বিতীয় সন্তান। নয় বছর পরে তাঁর জন্ম হয়েছিল। তাঁর স্ত্রী শিহানা ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের কারণে গর্ভাবস্থায় খুব অসুস্থ ছিলেন৷
জন্মের পর থেকেই শিশুটি শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যায় ভুগছিল। গত দু’মাস ধরে কলম্বোর লেডি রিজওয়ে হাসপাতাল এবং গ্যালির কারাপিতিয়া হাসপাতালে চিকিৎসা করাচ্ছিলেন।
একই সময়ে শিশুটির মা শিহানা উচ্চ রক্তচাপের কারণে ২৫ ডিসেম্বর মাতারা হাসপাতালে ভর্তি হোন। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর তারা জানতে পারেন যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকল রোগীদের করোনা পরিক্ষা করিয়েছিলেন। পরিক্ষায় শিহানার করোনা পজিটিভ এসেছে। যদিও তারা পরীক্ষার ফলাফল হাতে পাননি। তাই হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিহানাকে পরিবার থেকে আলাদা থাকতে পূণরায় হাসপাতালে নিয়ে যায়।
গত ১৩ জানুয়ারি সন্ধ্যায় শিশু মুহাম্মদের পেটের সমস্যায় অসুস্থ হলে ১৪ জানুয়ারি সকালে শিশুটিকে উলিগামার একটি হাসপাতালে নেয়া হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটিকে মাতারা হাসপাতালে স্থানান্তরিত করে। এবং নিয়াসকে পৃথক অবস্থায় বাড়িতে থাকতে বলা হয়।
এদিন দুপুর ২ টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ নিয়াসকে ফোনে জানায় যে, তাঁর বাচ্চা মারা গেছেন। শিশুটি করোনায় মারা গেছেন বলে জানানো হয়। কিন্তু কোন প্রকার রেফারেন্স জানানো হয়নি। তিনি কোয়ারেন্টিনে থাকার কারণে তাঁর আত্মীয়স্বজনদের হাসপাতালে যেতে বলেছিলেন।
তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে ফিরে জানায় যে, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মৃত শিশুটির পিসিআর পরীক্ষা করেছে। পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ এসেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরীক্ষাটি গ্যালির একটি হাসপাতালে যাচাইয়ের জন্য পাঠিয়েছে।
কয়েক ঘন্টা পরে, তার স্বজনরা হাসপাতাল থেকে ফিরে জানায় যে গ্যালিতে যে পিসিআর পরীক্ষা পাঠানো হয়েছিল সেটিতে করোনা পজিটিভ দেখানো হয়েছে ।
স্বজনেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পূণরায় পিসিআর করতে বলেছিলেন। কর্তৃপক্ষ আশ্বাস দিয়েছিল যে শিগগিরই আরও একটি পরীক্ষা করা হবে।
কিন্তু, সন্ধ্যা সাড়ে ৪টার দিকে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শিশুটির মা-বাবা বা আত্বীয় স্বজন কাউকে কোন কিছু না জানিয়েই এম্বুলেন্সে লাশ তুলে দেয়। সেই সময় স্বজনরা হাসপাতালেই ছিলেন। তারা লাশকে এম্বুলেন্সে তুলতে নিষেধ করেন। কিন্তু কর্তৃপক্ষ নিষেধ অমান্য করে শিশুর লাশ শ্মশানে নিয়ে যায়।
স্বজনরা শ্মশানে প্রশাসন কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করেন যে লাশটিকে পূণরায় পিসিআর পরীক্ষা করার আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল। এবং শিশুটি মুসলিম বিধায় লাশটি পুড়ানোর জন্য তার পরিবারের পক্ষ থেকে কোন অনুমতি নেই। উপস্থিত কর্তৃপক্ষ স্বজনদের কথায় পাত্তা না দিয়ে লাশটি পুড়ানোর জন্য প্রস্তুতি নেয়।।
উপস্থিত স্বজনরা মরিয়া হয়ে আর্জি জানায় শিশুটিকে যে অন্তত জানাযার নামাজটুকু আদায় করতে দেন। শেষপর্যন্ত স্বজনরা তড়িঘড়ি করে জানাযার নামাজ আদায় করেন। এর পর লাশটিকে পুড়িয়ে দেয় ছাই করে দেয়া হয়।
নিয়াস গভীর দুঃখের সাতে জানায়, তিনি এবং তাঁর কন্যা করোনা নেগেটিভ থাকলে তাঁর শিশু কীভাবে করোনায় পজিটিভ হতে পারে । তদুপরি, হাসপাতালের পিসিআর ফলাফল কীভাবে প্রথমে নেগেটিভ এবং পরে পজিটিভ আসে এটি নিয়ে প্রশ্ন তুলেন তিনি। কেন হাসপাতাল আশ্বাস দিয়েছিল যে তারা আরও একটি পিসিআর করবে।
উপরন্তু মুসলিম শিশুকে ইসলামি নিয়ম নীতির পরোয়া না করে জোর করে শ্মশানে নিয়ে পুড়িয়ে দেয়ায় তিনি অত্যন্ত মর্মাহত।
তার স্ত্রী এখনও জানেন না যে তাঁর ছেলের কী হয়েছে। তাঁর বাচ্চা মারা গিয়েছে বা তার সন্তানের লাশ দাফন করা হয়েছে কিনা?
সূত্র : ডকুমেন্টিং অপরেশন এগিনেস্ট মুসলিম।