দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যা: এক বছর পরেও তদন্ত অসম্পূর্ণ, মুসলিমরাই বেশি গ্রেফতার

0
1042
দিল্লিতে মুসলিম গণহত্যা: এক বছর পরেও তদন্ত অসম্পূর্ণ, মুসলিমরাই বেশি গ্রেফতার

ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ভয়াবহ মুসলিম গণহত্যা শুরু হয়েছিল ঠিক এক বছর আগে আজকের দিনেই (২৩ ফেব্রুয়ারি)। ওই গণহত্যার বর্ষপূর্তিতে এসে অর্ধেকেরও বেশি মামলার তদন্ত এখনো শেষ হয়নি বলেই জানা যাচ্ছে।

গত বছরের ফেব্রুয়ারির ওই দিনে অন্তত ৪০ জন মুসলিম  নিহত হয়েছিল, এখনো পর্যন্ত যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে মুসলিমের সংখ্যাই বেশি।

নিপীড়িতদের অনেকেই এখনো স্বাভাবিক জীবনে ফেরার চেষ্টায় হিমশিম খাচ্ছেন।

এ দিকে দিল্লির যে উগ্রপন্থী বিজেপি নেতা কপিল মিশ্রর প্ররোচণামূলক বক্তৃতা দাঙ্গায় উস্কানি দিয়েছিল, সে কিন্তু চার্জশিটে অভিযুক্ত হয়নি।

বিবিসিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কপিল মিশ্র বরং দাবি করেছে নিজের কোনো কাজের জন্যই সে অনুতপ্ত নয়।

গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকে কেন্দ্র করে রাজধানী দিল্লির বিভিন্ন প্রান্তে পরিবেশ উত্তপ্ত হয়েই ছিল। কিন্তু ২৩ তারিখ থেকেই শহরের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে তা পুরোদস্তুর গণহত্যার রূপ নেয়। তদানীন্তন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দিল্লিতে পা রাখার কথা তার দেড়দিন বাদেই।

ওদিকে জাফরাবাদ, মুস্তাফাবাদ, ব্রিজপুরীসহ বিভিন্ন এলাকায় অসংখ্য বাড়িঘর, দোকানপাট ও মসজিদ জ্বালিয়ে দেয়া হয়। যেখানে নিহতদের প্রায় তিন-চতুর্থাংশই ছিলেন মুসলিম।

প্রায় টানা পাঁচ দিন ধরে চলে এই সহিংসতা। আর দিল্লির বিস্তীর্ণ একটা অংশ কার্যত মৃত্যুপুরীর চেহারা নেয়। ওই দাঙ্গার প্রায় এক বছর পরে এসে দিল্লি পুলিশ কিন্তু অর্ধেকেরও বেশি মামলার তদন্তই শেষ করতে পারেনি।

দিল্লিতে দ্য প্রিন্টের সাংবাদিক অনন্যা ভরদ্বাজ দিল্লি দাঙ্গার মামলাগুলো ফলো করছে প্রথম থেকেই। তিনি জানাচ্ছেন দিল্লির দাঙ্গায় এ পর্যন্ত মোট এক হাজার ৮৮১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে ৩৬ শতাংশ বা ৬৫০ জন জামিন পেয়েছেন। তবে যারা গ্রেফতার হয়েছেন তার মধ্যে ৯৫৬ জনই মুসলিম। অর্থাৎ মুসলিমদের সংখ্যাই বেশি।

হত্যাযজ্ঞের ঠিক পর পরই দিল্লি সরকার ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার পক্ষ থেকে বেশ কিছু ত্রাণ শিবির স্থাপন করা হয়েছিল, ঘরবাড়ি ও আশ্রয় হারানো অনেক মানুষ সেখানে ঠাঁইও পেয়েছিলেন। কিন্তু এর মাত্র তিন সপ্তাহের মধ্যে গোটা দেশে লকডাউন জারি হয়ে যায়, ফলে ত্রাণ শিবিরগুলোও পাট গুটিয়ে ফেলে।

দাঙ্গায় অনেক দোকানপাট জ্বালিয়ে দেয়ায় বহু পরিবারই তাদের রুটিরুজির উৎস হারিয়ে ফেলেন, এমন কী স্কুল পর্যন্ত জ্বলে ছাই হয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে যায় বাচ্চাদের স্কুলে পাঠানোও।

এমনই একজন দাঙ্গাকবলিত গৃহবধূ মুস্তাফাবাদের সামিনা বেগম। তিনি বলছিলেন, ‘মাথা তুলে দাঁড়াতেই চার-পাঁচ মাস সময় লেগে গেছে। লকডাউনের মধ্যেও কোনো ক্রমে একটু একটু করে বাড়ির জিনিসপত্র জোগাড় করেছি, তবু এখনো অনেক কাজ বাকি রয়ে গেছে। এখন ঘরের জিনিস কিনব না কি বাচ্চাকে আবার স্কুলে পাঠাব, সেটাই দুশ্চিন্তা। তবে আমরা আশা ছাড়িনি এখনো।’

দাঙ্গার ষড়যন্ত্র করার অভিযোগে দিল্লি পুলিশ এর মধ্যে আম আদমি পার্টির নেতা ও কাউন্সিলর তাহির হোসেন, অ্যাক্টিভিস্ট শার্জিল ইমাম বা জেএনইউ-র ছাত্রী দেবাঙ্গনা কলিতাসহ অনেককেই আটক করেছে। তবে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছেন বিজেপি নেতা কপিল মিশ্র। সে দাঙ্গার আগে পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে হুঁশিয়ারি দিয়েছিল।

কপিল মিশ্র মঙ্গলবার বিবিসি হিন্দিকে বলেছে, যে তার বিতর্কিত বক্তৃতার জন্য বিন্দুমাত্র অনুতপ্ত নয়, সেটাও সে স্পষ্ট করে দিয়েছে।

তবে দিল্লি পুলিশের তদন্তের গতিপ্রকৃতি থেকেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে দিল্লিতে তখন যারা প্রতিবাদ জানাচ্ছিলেন, তাদেরই তারা উল্টো দাঙ্গার ষড়যন্ত্রকারী বা উস্কানিদাতা হিসেবে চিহ্নিত করছে।

সূত্র: বিবিসি

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ লাখ টাকায় ভুয়া নিয়োগপত্র
পরবর্তী নিবন্ধমামলা তুলে না নেওয়ায় ঘরে ঢুকে যুবককে গুলি