১৭ বছর বয়সী দুই ফিলিস্তিনি যমজ কিশোর নাসারুল্লাহ ও নাসের আদ্দিন আল শায়ের। গত মাসে তারা ইসলাম ও মুসলিমদের চির শত্রু ইহুদি সেনাবাহিনী কর্তৃক গ্রেপ্তার হয়। তাদের গ্রেফতার ও পরবর্তী কারাগারে নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য উঠে আসে কুদুস নিউজ নেটওয়ার্ক এর এক প্রতিবেদনে।
দ্য কমিশন অফ ডিটেইন্স অ্যাফিয়ার্সের বরাতে ফিলিস্তিনি সংবাদ মাধ্যম কুদুস নিউজ নেটওয়ার্ক জানায়, গত ফেব্রুয়ারি রাত ৩টায় তাদেরকে নিজ বাসা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।
কিশোররা জানায়, ‘ইসরায়েলি সেনারা আমাদের বাড়ির প্রধান গেইট প্রচণ্ড আওয়াজের বিস্ফোরক দ্বারা ভেঙে ভিতরে প্রবেশ করে। এর পর বাড়ির বাইরে এনে হাতকড়া পরিয়ে চোখ বেঁধে ফেলা হয়। তারপর আমাদের একটা সামরিক জিপে করে নিকটস্থ ইহুদি ক্যাম্পে নিয়ে যায়।’
কিশোরদ্বয় জানায়, ‘ক্যাম্পে ১৫ মিনিট রাখার পর আমাদের নাবলুসের হুওয়ারাহ বন্দী শিবিরে নিয়ে যায়। সেখানে ১৬ দিন পর্যন্ত আামাদের খুব ছোট একটি সেলে রাখা হয়, এটিকে জাহান্নামের মতো মনে হতো। যেখানে আমাদের জীবন ছিল অসহনীয়। খুব বাজে খাবার দেওয়া হতো। গোসল দেওয়ার কোন সুযোগ দেয়নি তারা। ১৬ দিন পর্যন্ত একই কাপড় পরে রয়েছি।’
তারা আরও জানায়, ‘এই দিনগুলোতে আমাদের জেলচত্বরেও আসতে দেয়া হয়নি। সেলে খুবই শীত লাগত কিন্তু তারা আামাদের দুর্গন্ধযুক্ত একটা কম্বল দিয়েছিল শুধু। সেলের দেয়াল ও মেঝে ময়লায় পরিপূর্ণ ছিল এবং সম্পূর্ণ সেলটাই দুর্গন্ধময় ছিল। আমরা আমাদের জীবনের সবচেয়ে ভয়াবহ সময় সেখানে পার করেছি। অতঃপর সেখান থেকে আমাদের ‘শালেম মিলিটারি ক্যাম্পে’ নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে আমাদের পরপর আধ ঘন্টা করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আমাদের অন্য একটি কারাগারের ১০ নম্বর সেকশনে নিয়ে যায়। সেখানে আমাদের সাত দিনের মতো আটকে রাখা হয়।’
ইসরায়েল প্রতি বছর প্রায় ৫০০ থেকে ৭০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে আটক করে। পরে দখলদার সামরিক আদালতে তাদের বিচার করা হয়। প্রায় সবারই সাধারণ অপরাধ হল ‘পাথর নিক্ষেপ’। আর এর জন্য সর্বোচ্চ সাজা ২০ বছর পর্যন্ত জেল হয়।
কিশোরদ্বয় আরো বলেন, ‘বর্তমানে ১৯০ জনের বেশি ফিলিস্তিনি শিশু দখলদার ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী রয়েছেন। যাদের বেশিরভাগকেই কোনো অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়নি।’
পরিসংখ্যানে থেকে জানা যায়, ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭ হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে গ্রেপ্তার করেছে সন্ত্রাসবাদী অবৈধ রাষ্ট্র ইসরায়েলের সেনাবাহিনী।
উল্লেখ্য, ২০১৫ সালে শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী কারাদণ্ড ও অনেক ক্ষেত্রে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদানে বৈধ ঘোষণা করে নতুন আইন পাস করেছে ইসরায়েল।