যুক্তরাজ্যে আট বছর পূর্বে নব্য নাৎসি সন্ত্রাসীদের হাতে নৃশংসভাবে খুন হন মোহাম্মদে সালেম। রাজনৈতিকভাবে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এই মর্মান্তিক হত্যাকান্ডের আট বছর পূর্তিতে তার স্মরণে এপ্রিল মাস জুড়ে চলছে ইসলাম বিদ্বেষ বিরোধী ক্যাম্পেই, যাতে যুক্তরাজ্যে দাপ্তরিকভাবে ইসলাম বিদ্বেষের সংজ্ঞায়িত করা হয়।
২০১৩ সালের ২৯ শে এপ্রিল প্রতিদিনের ন্যায় মোহাম্মদে সালেম যুক্তরাজ্যের বার্মিংহাম শহরে ইশার নামাজ আদায় করতে মসজিদের উদ্দেশ্যে বের হন। পথিমধ্যে পাবলো লেপশিন নামক নব গঠিত নাৎসি সন্ত্রাসী কর্তৃক রহস্যজনকভাবে খুন হন; যাদের সাথে কয়েক মাস পর্বে পশ্চিম মিডল্যান্ডের তিনটি মসজিদে বোমা হামলার সম্পৃক্ততা খুঁজে পাওয়া যায়।
যুক্তরাজ্যের মাটিতে ইসলাম ও মুসলিম বিরোধী অপতৎপরতার এটি ছিল একটি বড় আঘাত। মেইনস্ট্রিম মিডিয়ার লুকোচুরিতে বেশিরভাগ মানুষই ঘটনাটি সম্পর্কে জানেন না। যখনই সন্ত্রাস-সম্পর্কিত শিরোনামগুলি আমাদের নজরে আসে, প্রায়শই আমরা মুসলিমদের সেখানে সন্ত্রাসী হিসাবে দেখতে পাই; অথচ মোহাম্মেদ সালেমদের মতো জীবন কেড়ে নেয়া পশ্চিমা সন্ত্রাসীদের এমন নির্মম হিংসার কথা আমরা খুব কমই শুনি।
শুধু মোহাম্মেদ সালেমই নন, ২০১৭ সালের পবিত্র রমজান মাসে ফিনসবারি পার্কে মাকরাম আলী নামে আরেক মুসলিম ভাই পশ্চিমা সন্ত্রাসীদের হাতে রহস্যজনকভাবে নিহত হন। উগ্র ডানপন্থী, শ্বেত আধিপত্যবাদে বিশ্বাসী ড্যারেন অসবর্ণ উত্তর লন্ডনে একদল নামাজ ফেরত মুসল্লীদের উপর ঠান্ডা মাথায় ট্রাক চালিয়ে দেয়। এতে মাকরাম আলী প্রাণ হারান, আহত হন অনেকেই।
যুক্তরাজ্যের রটারহ্যামে মসজিদ থেকে ফেরার পথে বর্ণবাদী দুই সন্ত্রাসীর আক্রমণে মুহসিন আহমেদ নামে ৮১ বছর বয়সী আরেক মুসলিম প্রবীণ মারা যান।
ইসলাম বিদ্বেষী আক্রমণ ও বর্ণবাদী ভৎসনা পশ্চিমা সমাজে ক্রমেই স্বাভাবিক করা হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যের সাধারণ মুসলিমরা প্রতিদিনই এমন আক্রোশের স্বীকার হচ্ছেন। ভবিষ্যতে ডাল-পালা মেলে বিস্তারের পূর্বেই জরুরী ভিত্তিতে ইসলাম বিদ্বেষী এমন নোংরা খেলার বন্ধ হওয়া দরকার।
সেই লক্ষে যুক্তরাজ্যের আধিকারিক কর্তৃক দাপ্তরিকভাবে ইসলাম বিদ্বেষের সংজ্ঞায়িত করা প্রয়োজন। কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক দল কর্তৃক এ দাবি বারবার উত্থাপিত হওয়া ও আন্দোনকারী কর্তৃক জোড়ালো ক্যাম্পেইন চালানো স্বত্তেও যুক্তরাজ্য সরকার ইসলাম বিদ্বেষের সুনির্দিষ্ট সংজ্ঞায়িত করতে নারাজ।
যদি ইসলাম বিদ্বেষের কোন নির্দিষ্ট সংজ্ঞাই না থাকে, তবে কীভাবে দোষীরা সাজা পাবে?
মোহাম্মেদ সালেম, মাকরাম আলী কিংবা মুহসিন আহমেদের হত্যাকান্ডগুলো শ্বেত বর্ণবাদ ও ইসলাম বিদ্বেষের কারণেই চালানো হয়েছিল। এই ঘৃণ্য অপরাধগুলোর একটা দাপ্তরিক স্বীকৃতি জরুরী। এই অপরাধগুলোর অবমূল্যায়ন করা মানেই আগামীকাল মুসলিমদের উপর এই অপরাধগুলো আবারো সংগঠিত করার সুযোগ করে দেওয়া।
মুসলিমদের উপর চালানো এই অমানবিক বিদ্বেষী আচরণ রুখে দিতে সাংগঠনিকভাবে সোচ্চার হওয়া প্রয়োজন। পূর্বের ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো থেকে মুসলিমদের শিক্ষা নিতে হবে, বাস্তবতার নিরিখে প্রতিরোধী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
ক্রুসেডারদের রাজত্বের সময় শেষ।ইনশাআল্লাহ আগামী পঞ্চাশ বছরের মধ্যে এদের খেলা শেষ হবে।