দেশে আবারো লকডাউন চলছে। বন্ধ হয়ে গেছে খেটে খাওয়া মানুষের আয় রোজগার। লকডাউনে দেখা দিচ্ছে নানাবিদ অসুবিধে।
লকডাউনের উদ্দেশ্য হচ্ছে হাসপাতালের ওপর রোগীর চাপ কমানো। বাংলাদেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৭০ মিলিয়ন।
করোনাভাইরাসে চিকিৎসা মূলত ঢাকা কেন্দ্রিক। যে কয়টি আইসিইউ ছিল সেগুলো ইতিমধ্যে ভর্তি হয়ে গেছে।
গত এক বছরে নতুন চিকিৎসা সেন্টার তৈরি করা হয়নি, বরং সংকুচিত করা হয়েছিল। এ অবস্থায় লকডাউন দিয়ে আমরা কী অর্জন করতে চাচ্ছি?
মনে রাখা দরকার- গতবারের ৬৬ দিনের লকডাউন এর কারণে দেশের প্রায় ৪ কোটি মানুষ দারিদ্রসীমার নিচে চলে গেছে। অর্থাৎ ~২১.৮% থেকে এখন ~৪২% এ এসেছে। ঢাকায় প্রায় ৬৮ ভাগ মানুষ চাকরি হারিয়েছিল।
লকডাউন- অস্ট্রেলিয়া মডেল
গত সপ্তাহে ব্রিজবেনে ৩ দিনের লকডাউন ছিল একটি পজিটিভ কেইস ধরা পড়ার কারণে। লকডাউন দিয়ে ৩০ হাজারের মত টেস্ট করেছে ওই রোগীটি যেখানে যেখানে চলাফেরা করেছিল। অস্ট্রেলিয়া ডাটা ভিত্তিক সিদ্ধান্ত নেয়। প্রত্যেক স্টেটে পর্যাপ্ত (হাজার হাজার) আইসিইউ বেড তৈরি রেখেছে। অস্ট্রেলিয়ার জনগণ তাদের হেলথ সিস্টেমের ওপর আস্থা রাখে। তাই সিংহভাগ লকডাউন সমর্থন করে। আমাদের দেশে নীতিনির্ধারকরা কথায় কথায় অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্যের উদাহরণ তুলে ধরে। এসব আপেলের সাথে কমলালেবুর তুলনা করার মত যুক্তি।
দেশের প্রেক্ষাপটে কিছু বাস্তবতা-
১। বাংলাদেশে হেলথ সেক্টরে তথ্যের ভিত্তি সিদ্ধান্ত নেয়া হয় না। ইমোশনের ভিত্তিতে সব সিদ্ধান্ত আসে। অন্যসব উন্নত দেশে কী হচ্ছে তা পত্রিকায় বা টিভিতে দেখে কয়েকজন নীতিনির্ধারক সরকারকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেন। দুই একজন ছাড়া এসব নীতিনির্ধারকদের গবেষণার ক্ষেত্রে ব্যক্তিগত তেমন ট্রেক রেকর্ড নেই যদিও তাঁরা প্রফেসর লেভেলের। সরকারের গুরুত্বপূর্ন পজিশনে থেকেও রিসার্চকে প্রায় অবজ্ঞার লেভেলে পৌছানোর দায় তাঁরা এড়াতে পারেন না।
২। লকডাউন অনির্দিষ্টকালের জন্য স্থায়ী হতে পারে যৌক্তিকভাবে। করোনার টেস্ট পজিটিভ হওয়ার হার বাড়ছে। লকডাউন দিলেও তা সহসা কমার কোন সম্ভাবনা নেই। গতবারের লকডাউনের সময় করোনার হার বেড়েছিল, কমেনি। এবারও সম্ভবত তাই হবে।
৩। সরকার গার্মেস্ট-শিল্প কারখানা খোলা রাখতে চাচ্ছে। মনে রাখতে হবে এই সেক্টর অনেক বড়, লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজ করে। এরা স্বাস্থ সচেতনতা মানে না । ইন্ড্রাস্ট্রিও তা মানে না। এটা অনেকটা সরকারী ভাউচার বানানোর মত ব্যাপার। সব ঠিকঠাক কাগজে কলমে, বাস্তবে নয়। তাই করোনার করোনা প্রকোপ সহসা কমার সম্ভাবনা আপাতত নেই, অন্তত আগামী এক সপ্তাহের লকডাউনে।
৪। লকডাউনের কারনে অন্যান্য রোগীরা চিকিতসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়।
৫। অভাব-অনটন, হতাশার কারনে সুইসাইড রেট বাড়ার পাশাপাশি খুন-খারাবী, চুরি-ডাকাতিও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
এবারের লকডাউন কেন মানুষ মানবে না?
আশ্চর্যজনক হলে সত্য যে গতবারের মত এবার দেশে করোনাভীতি নেই, স্টিগমাও তেমন নেই। এখন করোনার লাশের জানাজা মানুষজন মাস্ক ছাড়াও এটেন্ড করে। এটা বাস্তবতা। আমি নিজেও এমন কিছু জানাজায় শরীক হতে পেরেছিলাম। রমাদানের সময় মসজিদ বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলে আন্দোলনে নামতে পারে সাধারন মুসল্লিরা। জিনিস-পত্রের দাম আকাশ ছোঁয়া। এরপর তারাবী পড়তে পারবে না। এটা ইমানদার মানুষরা মানবে না। কমিউনিটির লেভেলের কাজ করার কারনে এমন এই অনুভূতি তৈরী হয়েছে।
তাই বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে, উন্নত দেশের মত পলিসি এদেশে কাজ করে না। দেশের অত্যন্ত দূর্ভাগ্যের বিষয় হচ্ছে যে আমাদের দেশে এখন পর্যন্ত যোগ্য পলিসিমেকার তৈরী করতে হয়নি, সেই পরিবেশও তৈরী করতে ব্যর্থ হয়েছে গত ৫০ বছরে।
মাছ ধরার জাল ফেলতে পরিশ্রম হলেও ছেঁড়া ফিকে জাল দিয়ে মাছ ধরা যায় না। বাংলাদেশের ঘণতান্ত্রিক কুফরী সিস্টেমগুলোতে বড় রকমের ছেঁড়া। তাই লকডাউন- ‘গরীবের ঘোড়ার রোগের’ মত ব্যাপার আমাদের জন্য।
যুগাান্তর থেকে কিঞ্চিত পরিবর্তিত