কারাগারে কয়েক মাস বন্দী জীবন কাটানোর পর প্রখ্যাত সাংবাদিক বিলাল আব্দুল কারিম প্রথমবারের মতো বন্দী জীবন সম্পর্কে মিডিয়ায় কথা বলেছেন। এর আগে তিনি হায়াত তাহরিরুশ-শাম (এইচটিএস) কর্তৃক সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশে গ্রেফতার হন।
মধ্যপ্রাচ্যে ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম মিডিল ইস্ট আইয়ে দেয়া বিশেষ সাক্ষাৎকারে সাংবাদিক বিলাল এইচটিএসের নেতা আবু মুহাম্মাদ আল জুলানিকে শাসনের পক্ষে অযোগ্য উল্লেখ করে কারাগার সম্পর্কে মিডিয়ায় তাদের মিথ্যাচারের অভিযোগ করেন।
উল্লেখ্য, জুলানি মার্কিন পিএসবি নেটওয়ার্কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এইচটিএস কর্তৃক কারাগারে বন্দী নির্যাতনের কথা অস্বীকার করেছিলেন।
ফেব্রুয়ারিতে মুক্তির পর থেকে সাম্প্রতিক সময়ে বিলালের সাংবাদিকতা ও সামাজিক মাধ্যমে আগমন এইচটিএস নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।
বিলাল উল্লেখ করেন দলটির বিরুদ্ধে কথা বলে তিনি নিজেই নিজের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলছেন, যদিও তিনি এইচটিএস নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল থেকে বর্তমানে দূরে অবস্থান করছেন।
উল্লেখ্য, এইচটিএস হচ্ছে সিরিয়ায় বিদ্রোহী দলগুলোর একটি সম্মিলিত জোট, যারা ২০১৭ সাল থেকে সিরিয়ার ইদলিব প্রদেশ নিয়ন্ত্রণ করে আসছে। সিরিয়ায় দশক ধরে চলমান গৃহযুদ্ধে ইসলামী দলগুলোর মধ্যে বর্তমানে এইচটিএস গুরুত্বপূর্ণ শক্তি হিসেবে বিবেচ্য।
সাংবাদিক বিলাল মিডিল ইস্ট আইকে বলেন, গত আগস্ট, ২০২০ সালে গ্রেফতারের পর থেকে ৬ মাসেরও বেশি সময় ধরে একাকী সেলে তাকে বন্দী রাখা হয় ও শারিরীক নির্যাতনের হুমকি দেয়া হতো। তিনি প্রতিনিয়ত তার পাশের সেলগুলোতে অন্যান্য বন্দীদের উপর নির্যাতনের শব্দ শুনতেন।
তিনি বলেন,”সপ্তাহের প্রায় প্রতিদিনই আমি আমার থেকে কয়েক মিটার দূরে নির্যাতনের আত্মচিৎকার শুনতে পেয়েছি। কারাগারের অন্যান্য বন্দীরাও নির্যাতনের একই রকম শব্দ শুনতে পেতো।”
“সংক্ষেপে বলতে গেলে, আবু মুহাম্মাদ আল জুলানি, তার দেয়া সাক্ষাৎকারে নির্যাতনের বিষয়ে মিথ্যা কথা বলেছেন।”
সাংবাদিক বিলাল আব্দুল কারিম ২০১২ সাল থেকে সিরিয়ার সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলের সংবাদ পবিবেশন করে আসছেন। প্রত্যক্ষ সংবাদ সংগ্রহের জন্য ২০১৪ সালে তিনি সিরিয়ার যুদ্ধক্ষেত্রে অবস্থান করছেন। স্বপ্রতিষ্ঠিত অন দ্যা গ্রাউন্ড নিউজের পাশাপাশি সাংবাদিক বিলাল সর্বাধিক প্রচারিত আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএন, বিবিসি, স্কাই নিউজেও সাংবাদিকতা করেছেন। মধ্যপ্রাচ্যে ভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম মিডিল ইস্ট আইয়েও সংবাদ পরিবেশনে তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে।
২০১৬ সালের ডিসেম্বরে সিরিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় আলেপ্পোর চূড়ান্ত যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বিশ্ববাসীর নিকট বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনে তিনি বিখ্যাত।
সাংবাদিক বিলাল মিডিল ইস্ট মনিটরকে জানান, এইচটিএস কর্তৃক কারাগারে বন্দীদের উপর নির্যাতনের উদ্বেগ জানিয়ে সংবাদ করায় তাকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ব্রিটিশ সাহায্য কর্মী তাওকীর শরীফকে আটক করে এইচটিএস হেফাজতে টায়ারের সাথে বেঁধে পেটানোর সংবাদ পরিবেশন করায় তিনি এইচটিএসের রোষানলে পড়েন।
বিলাল জানান,”গ্রেফতারের পর তাকে হ্যান্ডকাফ পরিয়ে ও চোখ বেঁধে রাখা হয়েছিল। কারাগারে জেরাকারী প্রতিদিন তাকে মারধরের হুমকি দিতো।”
সাড়ে চার মাস বন্দী করে রাখার পর কারা প্রহরীরা বিলালের নিকট আসে। তারা বিলালের চোখ বেঁধে ও হ্যান্ডকাফ পরিয়ে গাড়িতে তুলে অন্যত্র নিয়ে যায়। তারপর চোখ ও হাতের বাঁধন খুলে দিয়ে বলে, “আপনার বিচার শুরু হতে চলেছে।”
“জননিরাপত্তা বিঘ্নিত করে এমন দলগুলোর সাথে কারাগারে পরবর্তী ১২ মাস কাজ করার সাজা প্রদান করা হয়।”
এটি এমন সাজা ছিল, যা কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে উষ্কানি এবং মিথ্যার প্রকাশ ও প্রচার- যা প্রমাণ বা প্রমাণ ছাড়াই প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রভাবিত করে।
কয়েক সপ্তাহ পরে সমস্ত সাজার ধরণ দেখে বিলালের হাসি দেয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তিনি বলেন,”আমি তোমাদের পক্ষে কৌতুক লিখতে পারবো না। এখানে কোন ন্যায়বিচার নেই। এটা ইসলামী সুবিচার কিংবা সেক্যুলার বিচারও নয়। এটা আদৌ কোন বিচারই নয়।”
বন্দীকালীন সময়ের প্রথম দিকে সাংবাদিক বিলালকে তার সাংবাদিকতার দরুন বিবৃতির মাধ্যমে ক্ষমা চাওয়ার শর্তে মুক্তির প্রত্যাশা দেয়া হয়েছিল। তিনি তা অস্বীকার করেন এবং পরবর্তী ১২ মাসের বন্দী জীবনকেই বেছে নিয়েছিলেন। অবশেষে ১৭ ফেব্রুয়ারী তিনি মুক্তি লাভ করেন।
উল্লেখ্য, মার্কিন চ্যানেল পিবিএস-এর ফ্রন্টলাইন অনুষ্ঠানে হাইয়াতু তাহরীরুশ শাম দলের নেতা আবু মুহাম্মাদ আল-জুলানিকে নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান প্রচার হয়।
https://www.pbs.org/wgbh/frontline/film/the-jihadist/
৫৪ মিনিটের এই অনুষ্ঠানে জুলানি এবং তার দলকে আল-কায়েদা ও আইএসের মতো দলগুলোর বিপরীতে একটি তুলনামূলক মডারেট দল এবং পশ্চিমা শক্তিগুলোর সম্ভাব্য মিত্র হিসাবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়। জুলানি এ অনুষ্ঠানে বলে সে আমেরিকাসহ পশ্চিমা শক্তিগুলোর সাথে কাজ করতে ইচ্ছুক। একজন সাবেক মার্কিন রাষ্ট্রদূত পর্যায়ের ব্যক্তিও সিরিয়াতে সম্ভাব্য মিত্র হিসাবে জুলানির কথা উল্লেখ করে। অনুষ্ঠানে বলা হয় জুলানি এবং তার দল ২০১৭ থেকে আসাদের বিরুদ্ধে ফ্রন্টলাইনগুলো নিস্ক্রিয় রেখেছে এবং তুরস্ককে তাদের নিয়ন্ত্রনাধীন অঞ্চলে ঢুকতে দিয়েছে। যার ফলে সিরিয়াতে রাশিয়া এবং তুরস্কের মধ্যস্থতায় এক ধরণের তুলনামূলক স্থিতিশীলতা তৈরি হয়েছে। সম্ভবত ওয়াশিংটনে তুরস্কের লবিগুলোর মাধ্যমে এ অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
اللهم ارنا الحق حقا وارزقنااتباعه وارناالباطل باطلاورزقنا اجتنابه!