২০১০ সালের ১৪ অক্টোবর ঢাকা ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালকের (এমডি) দায়িত্ব পাওয়ার সময় তাকসিম এ খানের মাসিক বেতন ধরা হয়েছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা। গত ১১ বছরে তিন দফায় তার বেতন বেড়ে এখন হয়েছে ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে প্রতি মাসে উৎসব বোনাস বাবদ প্রায় অর্ধলাখ টাকা, স্পেশাল পে (বিশেষ ভাতা) হিসেবে প্রায় দুই লাখ টাকা এবং প্রতি মাসে বৈশাখী নববর্ষ ভাতা হিসেবে প্রায় পাঁচ হাজার টাকা যুক্ত করে এত টাকা তার মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে। এমডির এই অস্বাভাবিক বেতন বৃদ্ধিতে ওয়াসার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ক্ষোভমিশ্রিত বিস্ময় :যে হারে এমডির বেতন বেড়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন তো তার ধারেকাছেও নয়!
এমডি হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার সময় তার মূল বেতন ছিল ৬০ হাজার টাকা। উৎসব-ভাতা ছিল ১০ হাজার, বাসাভাড়া ২০ হাজার, চিকিৎসা-ভাতা চার হাজার, আপ্যায়ন-ভাতা চার হাজার ও অন্যান্য ভাতা ছিল ২২ হাজার টাকা। সাকল্যে বেতন ছিল এক লাখ ২০ হাজার টাকা।
ওই বছরের শেষ দিকে তার বেতন বিভিন্ন খাতে আরও ৮০ হাজার টাকা বাড়িয়ে নির্ধারণ করা হয় দুই লাখ টাকা। এরপর ২০১৬ সালে এক ধাপে বাড়িয়ে করা হয় চার লাখ ৫০ হাজার টাকা। ওই সময় কোনো স্পেশাল পে ছিল না।
সর্বশেষ গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের ২৭৬তম সভায় ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন বৃদ্ধির বিষয়ে আলোচনা করা হয়। সেখানে বোর্ডের তরফ থেকে বলা হয়, ব্যবস্থাপনা পরিচালকের যোগ্যতা, অভিজ্ঞতা, মুদ্রাস্ম্ফীতি ও ঢাকা ওয়াসার ব্যাপক অগ্রগতির ক্ষেত্রে অবদান ইত্যাদি বিবেচনা করে ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বেতন বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। পরের মিটিংয়ে মাসিক বেতন ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়। ওই প্রস্তাবে মূল বেতন ধরা হয় দুই লাখ ৮৬ হাজার টাকা, বাসাভাড়া ৩৫ হাজার, চিকিৎসা-ভাতা ৩৫ হাজার ৭০০, আপ্যায়ন-ভাতা ৩৫ হাজার ও বিশেষ ভাতা ধরা হয় এক লাখ ৮০ হাজার ৬৬ টাকা। এ ছাড়া প্রতি মাসে উৎসব-ভাতা ধরা হয়েছে ৪৭ হাজার ৬৬৭ টাকা। প্রতি মাসে বাংলা নববর্ষ ভাতা ধরা হয়েছে চার হাজার ৭৬৭ টাকা। এ দুটি ভাতাই প্রতি মাসে তিনি পাবেন। এসব মিলিয়ে তার বেতন হয়েছে ছয় লাখ ২৫ হাজার টাকা।
আর কাগজে-কলমে এবার এমডির বেতন সোয়া ছয় লাখ টাকা করা হলেও তিনি আরও অনেক সুবিধা ভোগ করেন। সীমাহীন জ্বালানি, চালকসহ সার্বক্ষণিক বিলাসবহুল গাড়ি পান। অনেক সময় একটির পরিবর্তে দুটি গাড়িও তিনি ব্যবহার করেন। এ ছাড়া সীমাহীন মোবাইল ও টেলিফোন বিল পান। এ রকম আরও অনেক সুবিধাই তিনি পান। অথচ কর্মচারীদের বেতন এই হারে বাড়ানো হয় না। এতে কর্মচারীরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ।
ঢাকা ওয়াসা বোর্ডের সদস্য বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, বোর্ডে এমডির বেতন বৃদ্ধি নিয়ে সমালোচনা হয়েছিল। কারণ, অন্য কোম্পানিগুলোর এমডির এত বেতন না।
এ প্রসঙ্গে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান সমকালকে বলেন, এত বেশি বেতন বৃদ্ধির বিষয় অবিশ্বাস্য এবং অযৌক্তিক। কী প্রক্রিয়ায় এবং কার সিদ্ধান্তে এটা করা হয়েছে, এটা কর্তৃপক্ষের অনুসন্ধান করা উচিত। আমরা আমাদের গবেষণায় দেখেছি, ওয়াসার কাছ থেকে নগরবাসীর যে সেবা পাওয়ার কথা, ওয়াসা সেই সেবাগুলো নগরবাসীকে দিতে পারেনি।
ঢাকা মহানগরীতে প্রধান ড্রেন লাইনগুলো নির্মাণ ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার এবং শাখা লাইনগুলোর দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ওপর ন্যস্ত। ঢাকা শহরের মোট ড্রেনেজ লাইনের মধ্যে ৩৮৫ কিলোমিটার ঢাকা ওয়াসার অধীনে এবং প্রায় ২৫০০ কিলোমিটার ঢাকা সিটি করপোরেশনের অধীনে। এর বাইরে ৭৪ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে ২৬ টি খাল ও ১০ কিলোমিটার বক্স কালভার্টের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও ঢাকা ওয়াসার। কিন্তু জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যর্থ। এতে বর্ষা এলেই জনগণের ভোগান্তি বছর বছর আরো তীব্র হয়।
এছাড়া টিআইবির প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াসার ৯১ শতাংশ গ্রাহক পানি ফুটিয়ে পানযোগ্য করে খান। এর ফলে বছরে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস পোড়ানো হয়।
টিআইবির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ৪৫ শতাংশ গ্রাহক চাহিদা মতো পানি পান না এবং ৩৫ শতাংশ গ্রাহকের অভিযোগ তারা সারা বছর নিম্নমানের পানি পান।
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়াতাআ’লা এদের রক্ষাকর্তা এই তাগুতকে ধংস্ব করুক।আমিন।
এরা যেই মানুষেদের কষ্টের টাকায় ভোগ করে সেই মানুষদের কে কষ্ট দেয়