ইসলামি ইমারাহর সাম্প্রতিক বিজয়ধারা : সরল মূল্যায়ন

    6
    1967
    ইসলামি ইমারাহর সাম্প্রতিক বিজয়ধারা : সরল মূল্যায়ন

    বিগত দুই মাস ধরে দুর্নীতিবাজ কাবুল সরকার যুদ্ধক্ষেত্রে যেমন মার খাচ্ছে তেমনি রাজনৈতিক অঙ্গনে আস্থা হারিয়েছে। একেরপর এক অঞ্চল হাতছাড়া হচ্ছে। সরকারী সেনাদের মনোবল তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।স্বয়ং সরকারি কর্মকর্তারা সেনাদের সক্ষমতার উপর আস্থা হারিয়ে ফেলেছে। সরকারের কট্টর সমর্থকরাও এখন তীব্র ভাষায় সরকারের সমালোচনা করছে।

    অপরদিকে ইসলামি ইমারাহর মুজাহিদগণ একপ্রকার ক্ষয়ক্ষতি ছাড়াই একেরপর এক জেলা দখল করে চলেছেন। শত্রুদের পক্ষ থেকে উল্লেখযোগ্য কোনো প্রতিরোধও আসছে না। হাজার হাজার সরকারি সেনা ও সশস্ত্র মিলিশিয়া সদস্য আত্মসমর্পণ করেছে। অনেকে ইসলামি ইমারাহর পক্ষ নিয়েছে। ইসলামি ইমারাহর সাম্প্রতিক বিজয়ধারা বহু বাস্তবতার পর্দা উন্মোচন করেছে।

    চলমান বিজয় ধারার মধ্য দিয়ে ইসলামি ইমারাহর মুজাহিদদের তিনটি বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

    প্রথমত: এই সকল বিজয়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে, ইসলামি ইমারাহর মুজাহিদদের প্রতি গণমানুষের সমর্থন রয়েছে। রয়েছে আন্তরিকতা ও গভীর ভালোবাসা। কারণ যারা ইসলামি মূল্যবোধ ও জাতীয় স্বার্থ রক্ষার জন্য লড়াই করে আফগানরা সবসময়ই তাদের পক্ষে থাকে। এর একটি দৃষ্টান্ত হচ্ছে, আফগান জনগণের উপর একটি কমিউনিস্ট সরকার চাপিয়ে দেয়ার জন্য যখন সোভিয়েত ইউনিয়ন আফগানিস্তানে আগ্ৰাসণ চালায় তখন আফগানরা জীবন বাজি রেখে মুজাহিদদের কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছে।

    দ্বিতীয়ত, যেসকল শত্রুসেনারা মুজাহিদদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে এবং যারা বন্দি হয়েছে তাদের সাথে মুজাহিদদের আচরণ থেকে ইসলাম ও মানবতার প্রতি তাদের পরম শ্রদ্ধাবোধ দিবালোকের ন্যায় ফুটে উঠেছে। নববী দিকনির্দেশনা অনুযায়ী ইসলামি ইমারাহ সাম্প্রতিক মাসগুলোতে বন্দি হওয়া ও আত্মসমর্পণকারীদেরকে খাদ্য ও চিকিৎসা সেবা দিয়েছে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়ার জন্য আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছে। সাম্প্রতিক বিজয়াভিযান গুলোর মধ্য দিয়ে জনমানুষের প্রতি ইসলামি ইমারাহর গভীর সহানুভূতি ও যত্নবান হওয়ার বিষয়টি ফুটে উঠেছে। এভাবে ইসলামি ইমারাহ মানুষের মন জয় করে নিয়েছে।

    তৃতীয়ত,এসব বিজয়ের মধ্য দিয়ে প্রকাশ পেয়েছে যে, ইসলামি ইমারাহর মধ্যে কোনো কোন্দল নেই, তাঁরা ঐক্যবদ্ধ। তারা সুশৃঙ্খল। তাঁরা সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও স্বচ্ছতার বৈশিষ্ট্যৈ মণ্ডিত। এসব বিষয়ে তাঁরা বরাবরের মত সাধারণ আফগানদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। এসকল বিজয় সাধারণ আফগানদের সমর্থন ছাড়া আদৌ সম্ভব ছিলো না। মুজাহিদদের প্রতি আফগানদের রয়েছে সুদৃঢ় আস্থা ও ভরসা। মুজাহিদদের স্থান আফগানদের হ্রদয় গহীনে। মুজাহিদরা জনগণের দুঃখ দুর্দশা ঘুচাতে সক্ষম ও একে তাঁরা নিজেদের গুরুদায়িত্ব মনে করে।
    ইসলামি ইমারাহ এমন সময় আফগানদের সেবা করতে শুরু করেছে যখন তাঁদের নিজেদের উপর চলছিল বিমান হামলা, ড্রোন হামলা, রাত্রি কালীন হামলা ও স্থল হামলা। ইসলামি ইমারাহ অতি অল্প সময়ে নিজের অধিকৃত অঞ্চলগুলোতে সকল অনিষ্ট, দুর্নীতি ও অপকর্মের রাশ টেনে ধরে। কোনো ধরনের দুর্নীতি ছাড়া স্বাস্থ্য সেবা দিতে শুরু করে। বিচারকগণ স্বল্পতম সময়ে সর্বসাধারণের বিবাদের সমাধান করতে শুরু করে। অপরদিকে কাবুল সরকার জনগণের কল্যাণে আর কি করবে, তারা নিজেরাই আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত এবং দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হওয়ার উপযুক্ত।

    যুদ্ধবাজ, যুদ্ধ- মুনাফাখোর, ও বিদেশিদের পদলেহী রাজনৈতিক নেতাদের সমন্বয়ে কাবুল সরকার গঠিত হয়েছে। বিদেশি মুজাহিদ ও সন্ত্রাসী হুমকির অজুহাতে কাবুল সরকার দখলদারদেরকে আফগানিস্তানে রেখে দিতে চায়। উদ্দেশ্য, ক্ষমতার ধংসাবশেষ আঁকড়ে থাকা এবং রুটি কলার বন্দোবস্ত করা। এখন যখন দোহা চুক্তির আওতায় বিদেশিরা সেনা প্রত্যাহার করছে তখন উচ্ছিষ্টভোগী, দুর্নীতিবাজ, অপদার্থ কাবুল সরকার নিজেদের আসল রূপ প্রকাশ করছে।

    প্রথমত, জনসমর্থন না থাকায় এবং একপ্রকার পরিত্যক্ত ও জনবিচ্ছিন্ন অবস্থায় ঘাঁটিতে আবদ্ধ থাকায় একের পর এক অঞ্চল সরকারি সেনাদের হাতছাড়া হয়ে যাচ্ছে।
    দ্বিতীয়ত, কাবুল সরকারের টিকে থাকার সব আশার প্রদীপ যখন নিভু নিভু তখন গন বিপ্লবের তকমা লাগিয়ে সশস্ত্র মিলিশিয়া প্রতিষ্ঠাকে শেষ অবলম্বন হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু সরকারের প্রতিষ্ঠিত মিলিশিয়াগুলো কোনো রকমে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলছে এবং সরকারি সেনাদের মত মিলিশিয়া সদস্যরাও ব্যাপকহারে আত্মসমর্পণের নিরাপদ পথ বেছে নিচ্ছে।
    যেসকল যুদ্ধবাজ নেতা সোশ্যাল মিডিয়ার ফটো সেকশনে নিজেদের শক্তি ও সক্ষমতা জাহির করে বিদেশিদের মনোযোগ আকর্ষণ ও আস্থা অর্জনের চেষ্টা করত আজ তারাও চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে।

    প্রতিদিনই ইসলামি ইমারাহর নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলসমূহের পরিধি বাড়ছে এবং সাধারণ মানুষ মুজাহিদদেরকে সাদরে গ্রহণ করে নিচ্ছে। বিজয়ভিযানগুলোতে ইসলামি ইমারাহ ধৈর্য ও সংযমের দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। প্রাণহানি এড়ানোর জন্য সেনা ও সশস্ত্র মিলিশিয়া সদস্যদেরকে আত্মসমর্পণ করতে উৎসাহিত করছে।
    আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের বুঝা উচিত, বিশ বছরের অবর্ণনীয় কষ্ট ভোগ করার পরেও আফগানরা তাদের উপর চাপিয়ে দেয়া সরকারকে মেনে নেয়নি বরং বর্জন করেছে। তাদের বোঝা উচিত, যেখানে বিদেশিরা সেনা প্রত্যাহার করতে বাধ্য হচ্ছে সেখানে ইসলামি ইমারাহ ও স্বাধীনচেতা আফগানরা বিদেশি মদদপুষ্ট সরকার ও তাদের মিলিশিয়াগুলোর সামনে মাথানত করবে না।সকল বাধা বিপত্তি ও চড়াই উৎরাই পেরিয়ে অচিরেই প্রিয় আফগানিস্তান স্বাধীন হবে এবং ইসলামি শরিয়াহ প্রতিষ্ঠিত হবে। ইনশা আল্লাহ।


    লেখক: মুহাম্মদ জালাল

    অনুবাদক: তারেক মুসান্না

    6 মন্তব্যসমূহ

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধযুক্তরাষ্ট্রে ৭২ ঘণ্টায় গুলিতে ১৫০ জন নিহত
    পরবর্তী নিবন্ধআল-ফিরদাউস নিউজ বুলেটিন || জুলাই ১ম সপ্তাহ, ২০২১ঈসায়ী ||