তিউনিসিয়ায় রাজনৈতিক অস্থিরতা অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে গত ২৮শে জুলাই বুধবার দেশটির আরও কয়েকজন কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করেছে দেশটির প্রেসিডেন্ট কাইস সাইদ। বার্তা সংস্থা ‘এএফপির’ খবরে বলা হয়েছে, এর মধ্যে সেনাবাহিনীর চিফ প্রসিকিউটর ও রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ‘আতানিয়ার’ প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাও রয়েছে।
এর আগে গত রোববার প্রধানমন্ত্রী হিশাম মেশিশিকে বরখাস্ত এবং পার্লামেন্ট স্থগিত করেছে প্রেসিডেন্ট সাইদ। এরপর গত সোমবার দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও বিচারবিষয়ক মন্ত্রীকেও বরখাস্ত করা হয়েছে।
এক দশক আগে আরব বসন্তের প্রভাবে আরব দেশগুলোর নাগরিকরা নিজেদের দেশের স্বৈরশাসকদের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমে এসেছিল। কিন্তু রোববার দেশটিতে আকস্মিক সরকারবিরোধী বিক্ষোভের পর প্রেসিডেন্ট কায়েস সাইদ রাতে দুই বছর আগে নির্বাচিত পার্লামেন্ট স্থগিত, প্রধানমন্ত্রী হিশাম মেশিশিকে বরখাস্ত ও নিজের হাতে নির্বাহী ক্ষমতা নেয়ার ঘোষণা দিয়ে আদেশ জারি করে।
আরব বসন্ত- পরবর্তীকালে তিউনিসিয়ার ক্ষমতার রাজনীতিতে কিছু পরিবর্তন ঘটে। ইখওয়ানুল মুসলিমিনের শাখা ‘আননাহদা’ পার্টি রাজনৈতিক অবস্থান পরিবর্তন করে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সাথে জোট গঠন করে। তারা তিউনিসিয়ায় শরিয়া আইন প্রবর্তনের পক্ষে থাকলেও শেষ পর্যন্ত রক্ষণশীল অবস্থান থেকে সরে আসে। ২০১৪ সালে মানবরচিত নতুন সংবিধান প্রবর্তন করা হয়।
২০১৪ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে আননাহদা পার্টি ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলোর সাথে যোগ দেয়। ওই নির্বাচনে বেইজি সাইদ এসেবি নির্বাচিত হন। এমনকি ২০১৯ সালে প্রেসিডেন্ট পদে শেষ রাউন্ডের ভোটে আন নাহদা কাইস সাইদকে সমর্থন করেছিল।
এতকিছুর পরও আন নাহদা তিউনিসিয়ার ধর্মনিরপেক্ষদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি। ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো কোনোভাবেই আন নাহদার সাথে ক্ষমতা ভাগাভাগি করতে আগ্রহী নয়। তিউনিসিয়ার ঘটনা প্রমাণ করে, ইসলামপন্থী দল হওয়ার পরও ধর্মনিরপেক্ষদের সাথে সমঝোতা করতে আন নাহদা যতটা উদার অবস্থানে ছিল, বিপরীতে ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলো আন নাহদার সাথে সমঝোতা না করতে ততটাই কট্টর অবস্থান অবলম্বন করেছে। আন নাহদা যদিও ইখওয়ানপন্থী ছিল, কিন্তু ক্ষমতায় আসার পর সেক্যুলারদের ছাড় দিয়েছিল, সেক্যুলারদের গণতান্ত্রিক-অগণতান্ত্রিক সিদ্ধান্তগুলো মেনে নিত। তাদের উপর ন্যূনতম কোনো রকম জুলুমও করেনি। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে সেই সেক্যুলাররাই জনগণের ভোটে নির্বাচিত আন নাহদার পতনের জন্য সবরকম চেষ্টা করেছে।
পশ্চিমারাও চায় না আরবে ইসলামপন্থীরা সরকারের অংশীদার হিসেবে থাকুক। জনসাধারণের সরাসরি ভোটেও যদি সরকার নির্বাচিত হয় তবুও নয়।
লক্ষ্যনীয় হলো সেক্যুলাররা সবসময় যুক্তি দেখায় মুসলিমপন্থীরা ক্ষমতায় গেলে ফ্যাসিস্ট কিংবা বর্বর হবে। অথচ মিশর, তুরস্ক, আর তিউনিসিয়ার দিকে তাকালে দেখা যায় মুসলিমরা ক্ষমতা পেয়ে বর্বর হয়নি। বরং সেক্যুলাররা কোনরকম একটু সুযোগ পেলেই ইসলামপন্থীদের গলা টিপে ধরেছে।
আন নাহদা পার্টি সেক্যুলারদেরকে ভাইয়ের আসনে জায়গা দিয়েছিল, তাদের সাথে সমতায় গিয়েছিল, কিন্তু তবুও টিকতে পারলো না! তারা আরো বেশি ছাড় দিয়েছিল যেন তাদের পরিণতি মুরসীর মতো না হয়। অথচ দেখা গেল সেক্যুলাররা সেই বিশ্বাসটাও রাখল না। দিন শেষে তাদেরও শেষ রক্ষা হল না।
কারণ এটাই গণতন্ত্রের আসল বাস্তবতা। এখানে কাউকেই ইসলামের স্বার্থে কিংবা ইসলামের নামে টিকতে দেওয়া হবে না।
সুতরাং এ পন্থায় ক্ষমতায় গিয়ে ইসলাম কায়েম করার ইচ্ছা দিবাস্বপ্ন ছাড়া আর কিছুই নয়। মিশর, তুরস্ক, আলজেরিয়া, আর তিউনিসিয়ার ঘটনাগুলো এবিষয়টি আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে।
==
তথ্যসূত্র
——–
1. The political crisis unfolding in Tunisia-
https://tinyurl.com/3yd7jju5
2. Tunisia’s democracy is in crisis. Here’s a timeline of key events-
https://tinyurl.com/vkuupafe
3. Tunisia’s president accused of ‘coup’ after dismissing PM-
https://tinyurl.com/49zz62n6
4.Tunisia slips into a dangerous pitfall-
https://tinyurl.com/yr6zzszw
5.এবার দুই শীর্ষ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করলেন তিউনিসিয়ার প্রেসিডেন্ট-
https://tinyurl.com/u285tenn
6.বড় রাজনৈতিক সংকটের মুখে তিউনিসিয়া-
https://tinyurl.com/p2jd8s5v
7. তিউনিসিয়ায় বিক্ষোভ ও অভ্যুত্থান : ঘটনাপ্রবাহ ও চলমান পরিস্থিতি
https://tinyurl.com/3ss7bs23
হ্যাঁ প্রিয় ভাই, গণতন্ত্রের বাস্তবতা এমনই! আল্লাহ তা’আলা আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দান করুন।