সাধারণত দেখা যায়, একজন ব্যক্তি নিজে সকল কষ্ট-ক্লেশ মুখ বুজে সহ্য করতে পারে, কিন্তু তার পরিবার ও সন্তান-সন্ততির সামান্যতম দুঃখ-দুর্দশা সে সহ্য করতে পারেনা। সে চায়না তার পরিবারের সদস্যরা মুসিবতে পড়ুক, কষ্ট সহ্য করুক। অনুরূপভাবে একজন নেতাও চান তার পরিবারের সদস্যরা আরাম-আয়েশ ও নির্ঝঞ্জাট জীবনযাপন করুক।
কিন্তু, প্রকৃত নেতা তো সে ই যে চায় তার সন্তানদের জীবন হোক তার অনুসারিদের জীবনের ন্যায়!
এই মাসে শায়েখ আব্দুল হক ওমারি শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেছেন। তিনি ছিলেন মৌলবি মুহাম্মাদ নবী উমরি এর সর্বকনিষ্ঠ ছেলে, যিনি গুয়ান্তানামো বে কারাগারের একজন প্রাক্তন বন্দি এবং ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের কূটনৈতিক অফিস ও শান্তি আলোচনা দলের একনিষ্ঠ সদস্য। নিজের কনিষ্ঠ সন্তানকে জিহাদের পথে, মুজাহিদীনদের একেবারে সামনের কাতারে পাঠানোর সিদ্ধান্ত জানান দেয়, তিনি কতটা মুখলিস মনের অধিকারি, তাঁর ইমান কতটা মজবুত এবং ইসলামের ঝান্ডা বুলন্দ জন্য তিনি কত বড় কুরবানি করতে পারেন।
ইসলামের জন্য নিজেদের সন্তানকে কুরবান করা ইমারতে ইসলামিয়া এর নেতাদের মধ্যে নতুন কিছু নয়। ইমারতে ইসলামিয়া এর নেতৃত্বে থাকা সম্মানিত ব্যক্তিবর্গ অন্যকে জিহাদের দিকে আহবান করার আগে সর্বপ্রথম নিজেদের সন্তানদের পাঠাতেন। এরুপ বহু দৃষ্টান্ত আমরা অনেকবার দেখেছি। আমির উল মুমিনীন মুহতারাম শায়েখ হাইবাতুল্লাহ আখুন্দজাদা (হাফিযাহুল্লাহ) এর সুযোগ্য, মেধাবী পুত্র আবদুর রাহমান খালিদ (আল্লাহ তাঁর শাহাদাতকে কবুল করুন) শহীদি হামলায় শামিল হয়েছিলেন। মৌলভি জালালউদ্দীন হাক্কানি (রহিমাহুল্লাহ) তাঁর ৪ পুত্রকেই আল্লাহর রাহে জিহাদে পাঠিয়েছেন। উস্তাদ ইয়াসির (রহিমাহুল্লাহ) এর পুত্র আব্দুল্লাহ ট্রেনিং ক্যাম্পে থাকাকালীন ড্রোন হামলায় শাহাদাত লাভ করেন। এছাড়াও মুহতারাম শায়েখ আব্দুল হাকিম হাক্কানি, ইমারতে ইসলামিয়া এর নেতৃত্ব পরিষদের সদস্য ও শান্তি আলোচনা দলের প্রধান তাঁর পরিবারের সবাইকে জিহাদের রাস্তায় কুরবান করেছেন। তাঁর জ্যেষ্ঠ পুত্র জিহাদ ফি সাবিলিল্লাহ এর ময়দানে শাহাদাত লাভে ধন্য হয়েছেন। পরিবারের সদস্যদের আল্লাহর দ্বীনের রাহে কুরবান করার এই তালিকা শুধু বড় হতেই থাকবে।
যেসব ব্যক্তিবর্গ ইসলামি ইমারতের নেতৃবৃন্দের কাছে থেকে তাঁদেরকে দেখেছেন এবং তাঁদের সাথে সময় কাটিয়েছেন তাঁরা ভালোভাবেই জানেন নেতাদের চারিত্রিক মাধুর্য, সততা ও নিষ্ঠা সম্পর্কে। তাঁরা এমন ব্যক্তিবর্গ যাঁরা নিজেদের সন্তান ও ইমারতে ইসলামিয়া এর অন্যান্য মুজাহিদদের সমান দৃষ্টিতে দেখেন। প্রত্যেক উচ্চপদস্থ নেতা জীবনে অনেক দুঃখ-কষ্ট সহ্য করেছেন। তাঁদেরকে অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। তাঁরা বছরের পর বছর নিজদের প্রিয়জন, পরিবার ও আত্মীয়দের থেকে দূরে থেকেছেন।
ইমারতে ইসলাম এর উচ্চপদস্থ অনেক নেতা নিজেদের পদমর্যাদার গর্ব না করে সরাসরি যুদ্ধের ময়দানে অংশ নিয়েছেন। শায়েখ আব্দুল হক উমারি এর শাহাদাত সবার সামনে দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে, ইমারতের ইসলামিয়া এর নেতাগণ শুধু যুদ্ধের ময়দানেই সময় কাটিয়েই ক্ষান্ত হননি, তাঁরা তাঁদের সন্তানদের উত্তম তারবিয়াত (প্রশিক্ষণ) এর ব্যবস্থাও করেছেন। এটিও উপস্থাপন করেছে যে নেতাদের সন্তানেরা তাদের পিতাদের ন্যায় মুসলিম ভূমির সুরক্ষার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতে ও কঠিন থেকে কঠিনতম কষ্ট সহ্য করতে সর্বদা রাজি আছেন।
এই কুরবানিগুলো আমাদের সামনে চলমান সংঘর্ষের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। একদিকে আমরা দেখছি, ইমারতে ইসলামিয়া এর নেতাগণ তাঁদের জান ও মাল – সবকিছু মুসলিম ভূমির জন্য কুরবান করছেন। অপরদিকে দেখছি, কিভাবে পশ্চিমা রক্তচোষাদের পদলেহী একদল নির্লজ্জ গোলাম কাবুলে তাদের পরিবার নিয়ে কংক্রিটের দেয়ালের ভিতরে বসে নিজেদের নিরাপদ মনে করছে। তারা তো সেসব মানুষ যারা জনসাধারণের দূর্দশার সময় পৃষ্ঠ প্রদর্শন করে পলায়ন করবে। এটিই আমাদের ও তাদের নেতৃত্বের মধ্যকার তফাত। আফগান মানুষদের প্রতি কোন পক্ষ তাদের দেয়া ওয়াদা কতটুকু পূর্ণ করছে তার বাস্তব চিত্র তুলে ধরছে এই তফাত।
কঠিন বাস্তবতা হচ্ছে এই যে, প্রকৃত নেতা হতে হলে অসংখ্য কুরবানি করতে হয়। হতে হয় নিঃস্বার্থ ও ত্যাগী। ইমারতে ইসলাম আফগানিস্তান এর নেতাদের প্রতি রইল আমাদের শুভেচ্ছা ও শাহাদাত লাভে ধন্য হওয়া তাঁদের সন্তানদের প্রতি রইল আমাদের সমবেদনা।
তালিবানদের অফিসিয়াল আল-ইমারাহ্ সাইট থেকে অনূদিত