শিক্ষাবিদ, আইনজীবী এবং ভুক্তভোগীরা মনে করেন, নারী নির্যাতন বন্ধের যে প্রত্যাশা ও লক্ষ্য নিয়ে ইয়াসমিনকে স্মরণ করা হয়, সেই লক্ষ্য অর্জন থেকে দেশ এখনো অনেক দূরে। নারীর প্রতি শ্রদ্ধাশীল না থাকার সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি থেকে বহু মাত্রায় নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের তুলনায় অপরাধীর সাজার হওয়ার উদাহরণও কম।
তিন বছরে ধর্ষণ বেড়েছে ১২২ শতাংশ
বেসরকারী সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসাব অনুসারে, গত তিন বছরে নারী নির্যাতনের মধ্যে অস্বাভাবিক হারে বেড়েছে ধর্ষণ। ২০১৮ সালের তুলনায় ২০২০ সালে ধর্ষণ বেড়েছে ১২২ শতাংশ। ২০১৮ সালে ৭৩২, ২০১৯ সালে ১ হাজার ৪১৩ এবং ২০২০ সালে ১ হাজার ৬২৭টি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে গত বছরের ১৩ অক্টোবর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে সংশোধন আনে সরকার। এরপরও ধর্ষণ কমেনি। বেড়েছে অন্যান্য নির্যাতনও।
সংস্থার তথ্য অনুসারে, ২০১৮ সালে ৪ জন, ২০১৯ সালে ৩ জন, ২০২০ সালে ৪ জন এবং চলতি বছরের এখন পর্যন্ত ৪ জন পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়েছে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারিতে মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থানায় দুই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে এক নারীকে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা হয়। ওই সময় মামলাটির তদন্ত করেন সাটুরিয়া থানার তৎকালীন পরিদর্শক (তদন্ত) আবুল কালাম। তিনি এবং ওই থানার বর্তমান ওসি আশরাফুল আলম জানান, পুলিশের দুই সদস্যকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দেওয়া হয়। মামলাটি চলছে। তাঁরা জামিনে মুক্ত।
এ বছরের মে মাসে ভারত থেকে দেশে ফেরা এক বাংলাদেশি নারী খুলনার একটি আইসোলেশন কেন্দ্রে কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় এক পুলিশ সদস্যের ধর্ষণের শিকার হন। মামলাটি সম্পর্কে খুলনা দক্ষিণ পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) সোনালী সেন প্রথম আলোকে বলেন, ওই তরুণীর ডিএনএ টেস্টের প্রতিবেদনের জন্য অপেক্ষা করা হচ্ছে। এরপর অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। ওই পুলিশ সদস্য খুলনা জেলা কারাগারে আছেন।
বিচারপ্রক্রিয়ায় দুর্বলতা
ফৌজদারি বিচারপ্রক্রিয়ার প্রধান বাধা হচ্ছে, পুলিশ প্রমাণগুলো যথাযথভাবে সংগ্রহ করতে পারে না। এতে আসামি খালাস পেয়ে যান। এ ছাড়া সাক্ষীদের সুরক্ষা না থাকায় মামলার প্রধান সাক্ষীদেরও আনা যায় না অনেক সময়। মামলা করার পরও ১০ শতাংশের বেশি সাজা নিশ্চিত হয় না।
ঢাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল–৩ এর সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) মাহমুদা আক্তারের মতে, দরিদ্র নারীদের ক্ষেত্রে সাক্ষীকে আদালতে আনা বেশি চ্যালেঞ্জ হয়ে যায়। ওই সাক্ষীরা ভাসমান থাকেন, নির্দিষ্ট ঠিকানা না থাকায় খুঁজে পাওয়া যায় না। দীর্ঘদিন সাক্ষীর অনুপস্থিতিতে আসামির জামিন হয়ে যায়।