আফগানিস্তানের দুর্গম পাঞ্জশির উপত্যকার বিভিন্ন জেলা বিজয় করে এগিয়ে যাচ্ছেন তালিবান মুজাহিদিন। ইতোমধ্যেই মুজাহিদগণ উপত্যকার বাহিরে বিদ্রোহীদের নিয়ন্ত্রিত ৩ টি জেলা এবং উপত্যকার ৫টি জেলার নিয়ন্ত্রণ নেওয়া ঘোষণা করেছেন।
গত ১৫ দিন ধরে দুই পক্ষের মধ্যে চলছিল শান্তি আলোচনা, কিন্তু পাঞ্জশির বিদ্রোহীরা শান্তি চায় না, তারা চায় যুদ্ধ, ফলে ভেঙে যায় ১৫ দিন ধরে চলা শন্তি আলোচনা। তালিবান মুখপাত্র মুহতারাম জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ জানান, বিদ্রোহীরা শান্তি আলোচনার পরিবর্তে যুদ্ধের পথ ধরেছে, ফলে গত ২ সেপ্টেম্বর থেকে উপত্যকায় বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করতে শুরু করেছেন তালিবান মুজাহিদিন।
ইমারতে ইসলামিয়ার মুজাহিদগণ চতুুর্দিক থেকে উপত্যকাটি ঘিরে রেখেছেন এবং বাগলান, পারওয়ান, কাপিসা, লাগমান ও বদাখশান প্রদেশের দিক থেকে উপত্যকায় ঢুকতে শুরু করেছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী মুজাহিদগণ তীব্র লড়াইয়ের পর উপত্যকার আশপাশের অঞ্চলগুলোর ৩ টি জেলা বিদ্রোহীদের থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন, যাতে অনেক বিদ্রোহী নিহত ও আহত হয়েছে। জেলা তিনটি হলো- বানো, দেহ সালেহ, পুল-ই-হেসার। এই জেলাগুলো পাঞ্জশি উপত্যকার বাহিরের জেলা ছিল, যা বিদ্রোহীরা দখলে নিয়েছিল। জেলা ৩টি বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহীরা পাঞ্জশিরের বাহিরের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে।
অপরদিকে ঐদিন বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কয়েক ঘন্টা উপত্যকার পারিয়ান জেলায় বিদ্রোহীদের সাথে তীব্র লড়াই হয় মুজাহিদদের। বিদ্রোহীরা প্রতিরোধ করতে চাইলে তাদের প্রতিরোধ শক্তি ভেঙে দেন তালিবান মুজাহিদগণ, এসময় মুজাহিদদের হাতে ৩০ এরও বেশি বিদ্রোহী নিহত হয়, আহত হয় আরও অনেক। বাকি বিদ্রোহীরা জেলাটির ১১ টি চেকপোস্ট খালি করে পালিয়ে যায়।
সর্বশেষ আজ ৩ সেপ্টেম্বরের রিপোর্ট অনুযায়ী, তালিবান মুজাহিদগণ পাঞ্জশিরের পারিয়ান জেলায় আজও বিদ্রোহীদের উপর ভারী হামলা চালিয়েছেন এবং দুপুর পর্যন্ত জেলাটির বৃহৎ এলাকা মুজাহিদগণ নিয়ন্ত্রণে নিয়েছেন। এসময় মুজাহিদগণ ৪ টি ট্যাঙ্কসহ বেশ কিছু সাঁজোয়া যান ও অস্ত্রশস্ত্র গনিমত পেয়েছেন। তবে এদিন বিকাল বেলায় বাদাখশান প্রদেশের দিক থেকে তালিবানদের বড় একটি ইউনিট জেলাটিতে ভারী অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করেন এবং পূর্ব থেকেই জেলাটিতে আক্রমণকারী মুজাহিদগণের সাথে তারা মিলিত হয়ে তীব্র অভিযান চালান। ফলে কয়েক ঘন্টার লড়াইয়ের পর মুজাহিদগণ জেলাটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এসময় মুজাহিদদের তীব্র কৌশলী হামলায় হতাহত হয়েছে অনেক বিদ্রোহী।
অপরদিকে কাপিসা প্রদেশের দিক থেকে উপত্যকার দিকে অভিযান পরিচালনাকারী মুজাহিদগণ আজ উপত্যকার গুরুত্বপূর্ণ দ্বারাহ, দারবন্দ ও আনাবার জেলাগুলোর সমস্ত এলাকা বিদ্রোহীদের থেকে দখল মুক্ত করেছেন।
এমনিভাবে পারওয়ান প্রদেশের দিক থেকে অভিযান পরিচালনাকারী তালিবান মুজাহিদগণ শাতল জেলা উপত্যকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছেন। এর মধ্য দিয়ে উত্তরাঞ্চলীয় জোট পাঞ্জশির উপত্যকার ৫টি জেলার নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছে। বর্তমানে উপত্যকার বাকি ৩ টি জেলার আংশিক এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছে বিদ্রোহী উত্তরাঞ্চলীয় জোট। এরমধ্যে আজ সন্ধ্যায় বাগলান প্রদেশের দিক থেকে তালিবান মুজাহিদগণ খাঞ্জা জেলাও ঢুকে বিদ্রোহীদের উপর ভারী হামলা চালাতে শুরু করেছেন, যেখানে এখন তীব্র লড়াই ছড়িয়ে পড়েছে। আশা করা যায় আজ রাতের মধ্যেই মুজাহিদগণ এই জেলাটিও বিদ্রোহীদের থেকে মুক্ত করতে সক্ষম হবেন।
এদিকে ইমারতে ইসলামিয়ার শীর্ষ আলোচক আমির খান মোত্তাকি হাফিজাহুল্লাহ্ ‘এখনো বিদ্রোহ করতে থাকা লোকজনকে’ বোঝাতে বা তাদের ছেড়ে চলে আসার জন্য পাঞ্জশিরের অধিবাসীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, বিদ্রোহীরা কিছুই করতে পারবে না। ২০ বছর ধরে ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের সহায়তায়ই তারা কিছু করতে পারেনি। তারা এখনো কিছুই করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ্। এসময় তিনি আবারো সবার প্রতি সাধারণ ক্ষমার কথা ঘোষণা করেন।