‘মর শুধু পাবলিক ধুকে ধুকে মর, ভাগ্যের চাকা তোদের ছিল নড়েবড়’। চলমান হৃদয়বিদারক ঘটনাগুলো এলাইনটিকেই বার বার মনে করিয়ে দেয়। মুসলিমদের রক্ত যেন আজ মূল্যহীন হয়ে পড়েছে। যার ফলে ভয়ঙ্কর কোন ঘটনা ঘটার আগে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না, পরেও সঠিক কোন বিচার হয় না।
গত সপ্তাহের বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে এমভি অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন লেগে যায়। এই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে আনুমানিক ৪১ জনেরও অধিক মৃত্যু ও শতাধিক মানুষ আহত হন। এখনো বহু লোক নিখোঁজ আছেন।
প্রকৃতপক্ষে কতগুলো মানুষের জীবন আগুনে পুড়ে অঙ্গার হয়ে গেছে। কত মানুষ আগুন থেকে বাঁচতে ঘন কুয়াশার অন্ধকারেই নদীতে ঝাপ দিয়ে মারা গেছে! কত মানুষ বেঁচেও সারা জীবনের জন্য আগুনে পুড়ে যাওয়া অঙ্গ নিয়ে যন্ত্রনায় কাতরাতে থাকবে। তার কোন সঠিক হিসাব কখনোই পাওয়া যাবে না।
হাসপাতালে আসা অনেকেই প্রিয় মানুষটির খোঁজ না পাবার কথা বলেছেন। অনেকে জানিয়েছে, আগুনে পুড়ে যাবার কারণে প্রিয়জনকে শনাক্তও করা যাচ্ছে না। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে মৃত্যুর পরেও স্বজনের ছোঁয়া পায়নি এসব মরদেহ। দুদিন আগেও বাবা-মার পরিচয় ছিলো যে মানুষটির, তার পরিচয় এখন এক একটি সংখ্যা।
ঝালকাঠিতে আগুনে পুড়ে যাওয়া এমভি অভিযান-১০ লঞ্চটির পরিচালনায় পদে পদে অনিয়ম ও অবহেলার তথ্য পাওয়া গেছে। লঞ্চের ইঞ্জিনের সিলিন্ডারের টপ চেম্বার খোলা থাকা, অনুমোদন ছাড়া ইঞ্জিন পরিবর্তন, অগ্নিকাণ্ডের সময়ে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ব্যবহার না করা এবং অতিরিক্ত যাত্রী বহনের প্রমাণ মিলেছে। এসব কর্মকাণ্ডে সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত দপ্তরগুলোর কয়েকজন কর্মকর্তা ও লঞ্চ পরিচালনায় থাকা ব্যক্তিদের সম্পৃক্ততা রয়েছে।
দীর্ঘদিন এসব অনিয়ম চলায় তা অনেকটা গা সওয়া হয়ে গেছে। যার কারণেই অভিযান-১০ লঞ্চটি নির্বিঘ্নে চলাচল করেছে।
সার্ভে সনদে যে চারজন মাস্টার ও ড্রাইভারের নাম উল্লেখ ছিল, ঘটনার সময়ে তারা লঞ্চটির পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন না। তবুও এ লঞ্চটি ছাড়ার অনুমতি দেয় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহণ অধিদপ্তরের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর।
উল্লেখ্য, অনিয়মের কারণে এমন হতাহতের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। এর আগেও বহু ঘটনা ঘটেছে।
এবছর ৪ঠা এপ্রিল সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যা নদীর পাথরঘাট কয়লাঘাট এলাকায় এক সাংসদের বেপরোয়া কার্গোর ধাক্কায় ডুবে যায় এমএল সাবিত আল হাসান নামের যাত্রীবাহী লঞ্চটি৷ প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, লঞ্চকে ধাক্কা দেওয়ার অনেক আগে থেকেই যাত্রীরা চিৎকার করে কার্গো জাহাজটির গতিরোধের অনুরোধ করেছিলেন৷ কিন্তু জাহাজের চালক তাতে সাড়া দেননি৷ এমনকি পুরো ঘটনাটি ঘটে যাওয়ার সময়ে বা আগে কোনো ধরনের হর্নও বাজাননি জাহাজের চালক৷ যাত্রীবাহী লঞ্চডুবিতে ৩৪ জন প্রাণ হারান৷
যে জাহাজটি ধাক্কা দিয়েছিল সেটি যাত্রীদের প্রাণ বাঁচানোর চেষ্টা করেনি, বরং পরে রঙ বদলে পালানোরও চেষ্টা করেছে৷
প্রথম আলোর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ঘটনার পর থেকেই পুলিশ, লঞ্চ মালিক সমিতি ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ধাক্কা দেওয়া কার্গোটির মালিক বাগেরহাট-২ আসনের সংসদ সদস্য শেখ তন্ময়ের মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান এসকে লজিস্টিকস৷
ডুবে যাওয়া লঞ্চটির মালিকপক্ষ বলেছিল, কার্গো জাহাজটির মালিকপক্ষ প্রভাবশালী ও শেখ হাসিনার ঘনিষ্ট হওয়ায় তাদের মামলাও করতে দেওয়া হচ্ছে না৷
এভাবেই ক্ষমতাবান এলিট শ্রেণীর লাগামহীন ক্ষমতায়নে জিম্মি হয়য়ে পড়েছে বিশ্বমানবতা। ইসলামী বিচার ব্যবস্থা না থাকায় ক্ষমতার দাপটে বরাবরের মতই পার পেয়ে যায় অপরাধী ক্ষমতাবানরা, আর ধুকে ধুকে মারা যায় সাধারণ জনগণ। বিশেষজ্ঞরা তাই বলছেন, এই মানবরচিত তন্ত্র-মন্ত্রের জুলুমি ব্যবস্থা পরিবর্তন করা ছাড়া ন্যায়বিচার ও সুশাসন নিশ্চিত করা সম্ভব নয়।
তথ্যসূত্র:
——-
১.অভিযান-১০ লঞ্চে আগুন: প্রশাসন-মালিকের অনিয়মে প্রাণ গেল যাত্রীদের
https://tinyurl.com/y4nmrnn3
২. ‘অভিযান ১০’-এ ধারণক্ষমতার তিনগুণ যাত্রী থাকার অভিযোগ ঝালকাঠির সুগন্ধার দুই তীরে পোড়া গন্ধ নিহত ৪১ : দগ্ধ শতাধিক বহু নিখোঁজ হাসপাতালে হৃদয়বিদারক দৃশ্য আগুন লাগার পরও এক ঘণ্টা ধরে
https://tinyurl.com/4mkefa7f
৩.পরিচয় মেলেনি অনেকের, লাশ বুঝিয়ে দেয়া শুরু
https://tinyurl.com/2p9bzb94
৪.সাংসদের কার্গো, ৩৪টি প্রাণ আর আমাদের বিবেক
https://tinyurl.com/yckw7n55
৫.মামলায় কার্গো জাহাজটির নাম নেই, জব্দও হয়নি
https://tinyurl.com/2twz3uz3