হোয়াইট সোশ্যাল সেন্টার নামক একটি ফিলিস্তিনি সংস্থা সোশ্যাল মিডিয়া পর্যবেক্ষণ ও অধিকার নিয়ে কাজ করে থাকে। এটি ফিলিস্তিনি নাগরিকদের সোশ্যাল মিডিয়া কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করে জানিয়েছেন যে, সোশ্যাল প্লাটফর্মগুলো ফিলিস্তিনি নাগরিকদের ব্যবহৃত আইডি ও পেইজগুলোতে অন্যায়ভাবে বিধিনিষেধ আরোপ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে। এবং চলতি বছর মে মাসের মধ্যে অন্তত ১৩২ বার ফিলিস্তিনিদের আইডিগুলোতে হস্তক্ষেপ করেছে।
সংস্থাটির পর্যবেক্ষণ রিপোর্ট বলছে, ফিলিস্তিনি আইডিগুলোতে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞা দিয়ে রেখেছে মেটা(ফেইসবুক) কর্তৃপক্ষ। যার কারণে পোস্ট করা, পোস্টের কাছে পৌঁছানো এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত সংবাদ পোস্ট করতে পারছেন না ফিলিস্তিনিরা।
অবাক করা বিষয় হচ্ছে, দখলদার ইসরাইলি কারাগারে বন্দী ফিলিস্তিনিদের নাম মেটা কর্তৃপক্ষ বিপদজনক ব্যাক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে রেখেছে। যার মধ্যে ইসরাইলি কারাগার থেকে পালাতে সক্ষম হওয়া ছয় জনের একজন জাকারিয়া আল জুবাইদির নামও অন্তর্ভুক্ত। ফলে যারাই তার নাম অনুসন্ধান করছে তাদেরকে ফেইসবুক সতর্কতা জারি করেছে।
এছাড়াও, ফেইসবুক বেশ কিছু ফিলিস্তিনি ব্যক্তি এবং সংস্থাকে বিপজ্জনক হিসাবে কাল তালিকাভুক্ত করে রেখেছে। সে সকল ফিলিস্তিনিরা তেল আবিবে ইহুদিদের উপর হামলা এবং আল-জাজিরার সাংবাদিক শিরিন আবু আকলের অন্তেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে ইসরাইলি সেনাদের হামলা ও হত্যাকাণ্ডের ছবি, ভিডিও ও লেখা শেয়ার করেছিল, সেসব পোস্ট ডিলিট করে দিয়েছে ফেইসবুক।
কথিত সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে সোশ্যাল মিডিয়া ও সংবাদ মাধ্যমের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে রাখা ইসরাইলি নেসেটের (সংসদ) আইন পুরোপুরি মেনে চলে ফেইসবুক। ফিলিস্তিনিদের নির্যাতন ও আগ্রাসন ধামাচাপা দিতে ফেইসবুক বার বারই এ আইন ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের পোস্টগুলোতে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। এ আইনের লক্ষ্য হল ফিলিস্তিন সমর্থনকারী সোশ্যাল প্লাটফর্ম ও মিডিয়াকে কন্ঠরোধ করা। যাতে করে ইসরাইলি আগ্রাসন বহির্বিশ্বের কাছে পৌঁছতে না পারে। এবং ইসরাইলের আগ্রাসন ধামাচাপা দিতে পারে।
সংস্থাটি আরও জানিয়েছে যে, ফিলিস্তিনি সংবাদমাধ্যমগুলো নিয়মিতই বিধিনিষেধের সম্মুখিন হচ্ছে। বিশেষ করে ইসরাইলের বিরুদ্ধে যায় এমন যে কোন পোস্ট হলেই বিধিনিষেধের অযুহাতে বাধা সৃষ্টি করা হয়। এরমধ্যে শুধু মে মাসেই গণমাধ্যম, সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীসহ মোট ৬৪টি আইডিতে বিধিনিষেধের অযুহাতে পোস্টে হস্তক্ষেপ করেছে সোশ্যাল প্লাটফর্মগুলো। যা মোট হস্তক্ষেপের মধ্যে ৪৮%।
২০২২ সালে মে মাস অবধি সাংবাদিক ও গণমাধ্যমে যতগুলো হস্তক্ষেপ করে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে তারমধ্যে ফেসবুক ৭০টি, টুইটার ৫টি, ইনস্টাগ্রাম ৮টি, ইউটিউব ১৩টি,হোয়াটসঅ্যাপ ৪২টি, টিকটক ৫টি এবং ক্লাবহাউস ১টি। এছাড়াও ২০২১ সালে মোট ১৫৯৩টি মানবাধিকার লঙ্ঘনের তথ্য নিশ্চিত করেছে সংস্থাটি। যার মধ্যে ১৭৪টি ইনস্টাগ্রামে, ১৬টি ইউটিউবে, ৮৫৩টি ফেসবুকে এবং ৪৪৫টি টুইটারে। অন্যদিকে ২০২০ সালেও ১২০০টি অধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে ২৫টি ইনস্টাগ্রামে, ১০টি ইউটিউবে, ৮০১টি ফেসবুকে এবং ২৭৬টি টুইটারে।
বর্তমান ইসলাম বিরোধী বিশ্ব ব্যবস্থায় শুধুমাত্র ফিলিস্তিনই নয়। সারা বিশ্বের যেখানেই যারাই ইসলাম ও মুসলিমদের পক্ষে আওয়াজ তুলছেন, তাদেরই কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে। হোক সেটা সোশ্যাল প্লাটফর্মে কিংবা অন্যান্য মাধ্যমে। সবখানেই কথিত মৌলবাদীদের উসকানি দেয়ার কারণে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এ অবস্থায় মুসলিম জাতিকে এসব সামাজিক মাধ্যমের উপর নিরভর না করতে, এবং মুসলিম জাতির সত্যাসত্য খবরাখবর জানতে ও জানাতে মুজাহিদদের পরিচালিত বিভিন্ন সাইট ও মিডিয়ার দিকে ঝুঁকতে পরামরশ দিয়েছেন হকপন্থী উলামায়ে কেরাম।
তথ্যসূত্র:
_____
1. NGO: 132 violations against Palestinian content on Social Media platforms in May-
– https://tinyurl.com/4fv3rj2d