তুর্কিয়েতে (তুরষ্কে) শুরু হয়েছে ‘ইউনিয়ন অফ মুসলিম স্কলারস’ সম্মেলন। এতে অংশ নিয়েছেন বিশ্ব বরেণ্য আলেম ও স্কলাররা। তুরস্কে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে ইমারাতে ইসলামিয়া আফগানিস্তানের ৩ সদস্যের একটি দলকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। যাদের মাঝে রয়েছেন ইমারাতে ইসলামিয়ার মুখপাত্র জাবিহুল্লাহ্ মুজাহিদ, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিভাগীয় প্রধান মুফতি মোহাম্মদ আকবর আজীমি এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিচালক ওয়ালিউল্লাহ শাহীন (হাফিজাহুমুল্লাহ)।
গত ১৫ অক্টোবর তুর্কিয়ে সময় সকাল ৯ টায় আনুষ্ঠানিক ভাবে এই সম্মেলন শুরু হয়। প্রথম দিনের বৈঠকে আফগানিস্তানের পক্ষে থেকে ঈমানদীপ্ত বক্তব্য রাখেন ইমারাতে ইসলামিয়ার মুখপাত্র মুহতারাম জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ (হাফি.)।
জনাব মুজাহিদ তাঁর বক্তব্যে ইসলামী বিশ্বের ঐক্যের উপর গুরুত্বারোপ করেন। এ ব্যাপারে তিনি আলেমদের মহান দায়িত্ব ও তাদের কার্যকর ভূমিকার কথা তুলে ধরার পর বলেন, আফগানরা তাদের আলেমদের নেতৃত্বে গত শতাব্দীতে একে একে তিনটি সাম্রাজ্যকে পরাজিত করতে সক্ষম হয়েছেন। একই আলেমরা তিনবার ব্রিটিশদেরকেও এই ভূমিতে পরাজিত করেছেন। আলেমদের এই অভ্যুত্থান না হলে আমাদের দেশ আজও পরাধীন থাকতো।
সর্বশেষ আমেরিকা যখন ওসামার (রহ.) অযুহাত দেখিয়ে আফগানিস্তানে নিষ্ঠুরভাবে আক্রমণ করেছিল, তখনও কিন্তু আলেমরা এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছেন। এবং দীর্ঘ ২০ বছর ধরে লড়াই করেছেন, যতক্ষণ না আফগানিস্তানে স্থিতিশীল ফিরে আসে এবং প্রতিপক্ষ পরাজিত হয়।
উলামায়ে কেরামের নেতৃত্বে ইমারাতে ইসলামিয়া পূর্ববর্তী প্রশাসন থেকে উত্তরাধিকার সূত্রে চলে আসা দুর্নীতিকে সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করেছে, সমস্যা দূর করেছে এবং দেশে সম্পূর্ণ শান্তি এনেছে। এই মুহূর্তে আমাদের সব সরকারি কাজ আলেমদের নেতৃত্বে চলছে।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও, আমরা অর্থনৈতিক প্রকল্প চালু করেছি। যার অধীনে ৫ লাখেরও বেশি বেসামরিক এবং ৩ লাখ সামরিক কর্মকর্তাদের অর্থায়ন করে যাচ্ছি। এতো কিছুর পরেও আমরা জনসেবা বন্ধ করিনি। বরং জনসেবা মূলক কাজও চলছে সমানতালে।
এসময় তিনি আরো বলেন, আমরা সমগ্র মুসলিম উম্মাহর সাথে সৌহার্দ্যপূর্ণ ও সুসম্পর্ক চাই। আমরা চাই মুসলিম উম্মাহ যেন এক হয়। বিশ্বের প্রতিটি মুসলমানের বেদনা যেনো আমরাও অনুভব করি। তাদের দুঃখে দুঃখিত হই। আর এই পরিস্থিতিতে উম্মাহকে ঐক্যের ধারণা দেওয়া আলেমদের দায়িত্ব।
এরপর তিনি প্রশ্ন আকারে বলেন, “ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ, যারা এক ছাদের নীচে জড়ো হয়। আমেরিকার অনেক রাজ্য, যারা এক ছাতার নীচে থাকতে পারে, তাহলে আমরা কেন তা পারি না?” তাই আলেমদেরকে উম্মাহর সংস্কার ও পনরুজ্জীবিত করতে ভুমিকা পালন করতে।
সম্মেলনে জাবিহুল্লাহ্ মুজাহিদ আফগানিস্তানের বিভিন্ন দিক নিয়েও আলোচনা করেন। তিনি আফগানিস্তানের শিক্ষা কার্যক্রম সম্পর্কে বলেন, ৬ষ্ঠ শ্রেণীর উপরে মেয়েদের জন্য স্কুল অবশ্যই খোলা হবে। আমরা মেয়েদের জন্য পাঠ্যক্রম সংশোধন, তাদের পরিবহন, সরঞ্জাম সরবরাহ এবং তাদের জন্য একটি পৃথক শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য কাজ করছি। যাতে করে আমরা মানসিকভাবে মানুষকে মেয়েদের শিক্ষার প্রতি উৎসাহিত করতে পারি। আর এটি কয়েক মাসে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের জন্য সম্ভব ছিলো না।
যেখানে আগের পশ্চিমা সমর্থিত প্রশাসনের অধীনে আফগানিস্তানের ৭০ শতাংশ মানুষ শিক্ষা থেকে বঞ্চিত ছিলো, সেখানে এখন শিক্ষার মাত্রা সরা দেশে পৌঁছে গেছে। ছেলেদের পাশাপাশি বর্তমানে দেশের ১৪০টি বিশ্ববিদ্যালয়ে কয়েক লাখ মেয়ে পড়াশুনা করছে। আলহামদুলিল্লাহ।
মেয়েদের জন্য ৬ষ্ঠ শ্রেণীর উপরে আলাদা স্কুল খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি, জাবিহুল্লাহ্ মুজাহিদ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আফগানিস্তানের বর্তমান সরকারকে স্বীকৃতি দিতে, জব্দ করা সম্পদ ফেরত দিতে এবং নিষেধাজ্ঞার অবসান করতে বলেছেন। এসময় তিনি স্বীকৃতি বিষয়ে বলেন, আমেরিকার মূল সমস্যাটা আমাদের সাথে না বরং ইসলামের সাথে। আমেরিকা আমাদের সরকারকে স্বীকৃতি দেয় না একারণে যে, আমাদের সরকার সম্পূর্ণ ইসলামিক সরকার। আর একটি সম্পূর্ণ ইসলামী সরকারকে স্বীকৃতি দেওয়ার অর্থ হল ইসলামকে স্বীকৃতি দেওয়া। আর আমেরিকা তা কখনোই চায় না।
আশা করা যায়, জাবিহুল্লাহ মুজাহিদ (হাফি.)-এর এই ঈমানদীপ্ত বক্তব্য উম্মাহর মাঝে, বিশেষ করে সম্মানিত আলেমগণের মাঝে দায়িত্ববোধ এবং ঐক্যের সুবাতাস ছড়িয়ে দিতে সক্ষম হবে ইনশাআল্লাহ্।
Very important Lecture
জাবিহুল্লাহ দরকার এই ভুমিতে