হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া-সন্ত্রাস: খুনের অভিযুক্ত অনীশ রাজকে ‘মুহাম্মদ আনিস’ নামে প্রচার

উসামা মাহমুদ

0
419

দিল্লিতে এএসআই খুনের অভিযুক্ত অনীশ রাজ, কিন্তু হিন্দুত্ববাদী মিডিয়ার মুসলিম বিদ্বেষের কারণে মুহাম্মদ আনিস নামে প্রোপাগান্ডা চালিয়েছে।

৪ জানুয়ারী ২৩, ৫৭ বছর বয়সী দিল্লি পুলিশের সহকারী সাব-ইন্সপেক্টর (এএসআই), শম্ভু দয়াল, সেই দিনের শুরুতে একটি ফোন ছিনতাইয়ের অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ধরতে গিয়ে একাধিকবার ছুরিকাঘাত গ্রস্থ হয়ে গুরুতর আহত হয়। এবং তাকে দিল্লির বিএলকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

8 জানুয়ারী এএসআই সেই আঘাতেই মারা যায়। দিল্লি পুলিশ টুইট করেছে, “৪ জানুয়ারী, মায়াপুরী থানাযর এএসআই শম্ভু দয়াল একজন ছিনতাইকারীকে ধরার সময় ছুরি দিয়ে আক্রমণ করার পরে গুরুতর আহত হয়। আজ বিএলকে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সে মারা গেছে।”

খুনের অভিযুক্ত অনীশ রাজ হিন্দু হওয়ায় দিল্লি পুলিশ টুইটে তার নাম উল্লেখ করেনি। কিন্তু হিন্দুত্ববাদী হলুদ মিডিয়াগুলো মুসলিম বিদ্বেষ ছড়িয়ে দিতে খুনের অভিযুক্ত অনীশ রাজের নামের পরিবর্তে ইচ্ছাকৃতভাবে জিহাদি মুহাম্মদ আনিস হিসেবে প্রচার করে।

সুদর্শন নিউজ, এটি একটি উগ্র বিজেপি-পন্থী প্রচারণা আউটলেট, 8 জানুয়ারী তার সম্প্রচারের একটি ভিডিও ক্লিপ টুইট করেছে, যেখানে সংবাদ পাঠকারী অ্যাঙ্কর অভিযুক্তকে “জিহাদি মোহাম্মদ আনিস” হিসাবে একাধিকবার উল্লেখ করেছে৷

প্রভা উপাধ্যায়, যার টুইটার বায়ো বলছে, সে মহিলা মোর্চা জয় ভারত মঞ্চের (উত্তরপ্রদেশ) রাজ্য সভাপতি, সেও সুদর্শন নিউজের সংবাদ বুলেটিন শেয়ার করেছে যেখানে অ্যাঙ্কর বলেছে, “জিহাদি মোহাম্মদ আনিস” এএসআই শম্ভু দয়ালকে হত্যা করেছে’।

টাইমস নাউ নবভারত তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে মোহাম্মদ আনিস নামে একজন সন্দেহভাজন এএসআই শম্ভু দয়ালকে ছুরিকাঘাত করেছে।

এনডিটিভি ১০ জানুয়ারি তাদের প্রতিবেদনে সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম “বদমাইশ মোহাম্মদ আনিস” নামে প্রচার করেছে। টুইটের ক্যাপশনে লেখা হয়েছে, ‘#দিল্লি: এএসআই শম্ভুনাথের ওপর হামলার সিসিটিভি প্রকাশ্যে এসেছে, চিকিৎসা চলাকালীন তার মৃত্যু হয়েছে’। ক্যাপশনে প্রয়াত অফিসারকে ‘শম্ভু দয়াল’-এর পরিবর্তে ‘শম্ভুনাথ’ বলা হয়েছে।

এমনিভাবে, আজ তক মিডিয়ার আম আদমি পার্টির সঞ্জয় সিং টুইট করেছে। সেই সম্প্রচারে, উপস্থাপক সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ‘মোহাম্মদ আনিস’ বলে ডাকে।

অন্যান্য হিন্দুত্ববাদী ব্যক্তিত্ব এবং সাংবাদিক যারা ঘটনাটি সম্পর্কে টুইট করেছে, তারা সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে ‘”জিহাদি মোহাম্মদ আনিস”‘ বা ‘মোহাম্মদ আনিস’ হিসাবে নাম দিয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছে ভিএইচপি (বিশ্ব হিন্দু পরিষদ) এর জাতীয় মুখপাত্র বিনোদ বনসাল, সুদর্শন নিউজের সাগর কুমার, রবি জলহোত্রা, সিনিয়র সাংবাদিক। এএনআই-এর সঙ্গে, সুদর্শন নিউজের সঙ্গে যুক্ত সাংবাদিক মহেশ কুমার শ্রীবাস্তব, সুদর্শন নিউজের আশিস ব্যাস, দিল্লি বিজেপির মুখপাত্র খেমচাঁদ শর্মা। রবি ভাদোরিয়া যে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অনুসরণ করছে, সেও এই ঘটনা সম্পর্কে টুইট করেছে। সে তার টুইটে অভিযুক্তের নাম ‘আনিস’ বলে দিয়েছে।

সুদর্শন নিউজ এ ঘটনার একটি সংবাদও প্রকাশ করেছে যেখানে তারা অভিযুক্তকে ‘জিহাদি’ বলে বর্ণনা করেছে। নিউজ ট্র্যাকও অভিযুক্তকে একই নাম দিয়েছে।

Alt News এর ফ্যাক্ট চেক

Alt News(অল্ট নিউজ) ৪ জানুয়ারী অর্থাৎ ঘটনার দিন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দিল্লি পুলিশের জারি করা একটি প্রেস রিলিজ যাচাই করেছে। সেই সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, অভিযুক্ত অনীশ প্রহ্লাদ রাজের ছেলে।

“আমরা অনুসন্ধান করেছি এবং ৯ জানুয়ারী প্রকাশিত দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের একটি সংবাদ প্রতিবেদন পেয়েছি। প্রতিবেদন অনুসারে, একজন মহিলা তার ফোন এক ব্যক্তি ছিনিয়ে নেওয়ার পরে সাহায্যের জন্য অফিসার দয়ালের কাছে গিয়েছিল। তার অভিযোগের প্রেক্ষিতে, সে অভিযোগকারীকে অভিযুক্ত অপরাধের স্থানে নিয়ে যায় যেখানে মহিলা অভিযুক্তকে শনাক্ত করেন। অফিসার দয়াল অভিযুক্তকে থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি ছুরি দিয়ে অফিসারকে ছুরিকাঘাত করে।”
“এই রিপোর্টে সন্দেহভাজন ব্যক্তির নাম মায়াপুরীর বাসিন্দা অনীশ রাজ (২৪) ছিল।”

তাছাড়া, অল্ট নিউজ মায়াপুরী পশ্চিমের স্টেশন ইনচার্জের সাথে কথা বলেছে। সে-ও নিশ্চিত করেছে যে অভিযুক্ত একজন হিন্দু এবং ঘটনার কোন সাম্প্রদায়িক দিক ছিল না।

সংক্ষেপে বলা যায়, দিল্লির মায়াপুরীতে একজন অফিসারকে ছুরিকাঘাত করার ঘটনাটি বেশ কয়েকটি হিন্দুত্ববাদী মিডিয়া হাউস উদ্দেশ্যমূলকভাবে রিপোর্ট করেছে। সুদর্শন নিউজ ও এর সাংবাদিকরা অভিযুক্তকে ‘জিহাদি’ আখ্যায়িত করে অপরাধকে মুসলিম বিদ্বেষী রং দিয়েছে।

গত বছর, দিল্লির নারাইনায় ঘটে যাওয়া একই রকম ছুরিকাঘাতের ঘটনাকে সামাজিক মিডিয়া ব্যবহারকারী এবং হিন্দুত্ববাদী রাজনীতিবিদরা মুসলিম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক মোড়ক দিয়েছিল।

যদিও পরে আসল খবর বেরিয়ে যার। যেখানে সাথে মুসলিম ব্যক্তির কোন উপস্থিতি ছিল না। হিন্দুত্ববাদী মিডিয়াগুলো মুসলিম বিদ্বেষের পালে হাওয়া দিতেই এমন প্রোপাগান্ডা চালিয়ে থাকে।



তথ্যসূত্র:
——–
1. Delhi ASI murder accused is Anish Raj, not Mohd Anish, as claimed by media
https://tinyurl.com/3a7xwtfj

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধব্যাটালিয়নকে সুসংগঠিত করার নির্দেশ ইমারাতের সর্বোচ্চ নেতা হিবাতুল্লাহ আখুন্দজাদার
পরবর্তী নিবন্ধপাঠ্যপুস্তকে ‘বিষ’; আমাদের করণীয়