সোমালি বাহিনীর ৮ মাসের মেহনত কয়েক মিনিটেই গুঁড়িয়ে দিচ্ছে আশ-শাবাব: হতাহত হাজারোর্ধ্ব শত্রুসেনা

    1
    1522

    সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সোমালিয়ার যুদ্ধ সবচাইতে তীব্র আকার ধারণ করেছে। বলা হচ্ছে যে, ২০১৪ সালের পর এটিই প্রতিরোধ বাহিনী শাবাবের বিরুদ্ধে পশ্চিমা ও তাদের মিত্রদের সবচাইতে বড় সামরিক অভিযান। যার ফলে বড় কোনো হতাহতের ঘটনা ছাড়াই শাবাব যোদ্ধাদের দেখা গেছে অনেক এলাকা থেকে পিছু হটতে। কিন্তু পশ্চিমারা ও তাদের গোলামরা ভেবেছিল আশ-শাবাব পরাজিত হয়ে এসব এলাকা ছেড়ে গেছে।

    যাইহোক, গত বছরের মে মাসে ক্রুসেডার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সহ একাধিক পশ্চিমা দেশ, আফ্রিকান ইউনিয়ন, তুরস্ক এবং একাধিক আরব রাষ্ট্রের বিপুল সামরিক ও আর্থিক সহায়তা নিয়ে শাবাবকে দুর্বল করতে সামরিক অভিযান শুরু করে মোগাদিশু সরকার। এ প্রেক্ষাপটে মোগাদিশু সরকার প্রতিরোধ বাহিনী হারাকাতুশ শাবাবের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চলগুলি দখলের চেষ্টা করে। কিন্তু অভিযানের শুরুতেই শাবাবের একের পর এক ইস্তেশহাদী ও ইনগিমাসী হামলার মুখে সামরিক খাতে বড় ধরণের ধাক্কা খায় মোগাদিশু সরকার। যার ধারাবাহিকতায় দেখা গেছে, রাজধানী মোগাদিশুর গুরত্বপূর্ণ প্রশাসনিক ভবনগুলোও একের পর এক শাবাবের দুঃসাহসী হামলার কবলে পড়তে, যার থেকে বাদ পড়েনি দেশটির রাষ্ট্রপ্রতি প্রাসাদ ও সরকারি বাসভবন।

    তবে অভিযানের মধ্যভাগে এসে ভিন্ন এাটি চিত্র দেখে বিশ্ব, যা বিশ্লেষকদের হয়রান করে দেয়েছিল। কেননা এসময় কিছু কিছু এলাকা থেকে শাবাব যোদ্ধাদেরকে কোন প্রতিরোধ ছাড়াই পিছু হটতে দেখা গেছে। অথচ দীর্ঘ এই যুদ্ধে শাবাবের মাঝে এখন পর্যন্ত বড়কোনো হতাহতের ঘটনাও ঘটেনি, আর তাঁরা এতটা দূর্বলও নয় এবং জনসমর্থন শূন্যও নয়, যার কারণে তাঁরা নিজেদের নিয়ন্ত্রিত অঞ্চল কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ছেড়ে চলে যাবেন।

    এক্ষেত্রে শাবাবের আরেকটি বিষয় বিশ্লেষকদের সবচাইতে বেশি ভাবিয়ে তুলেছিল, আর সেটি হচ্ছে, শাবাব কর্তৃক তাদের নিয়ন্ত্রিত এমনসব এলাকা ও ৩টি গুরত্বপূর্ণ শহর কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই ছেড়ে গেছেন, যেসব এলাকা ও শহরগুলো ছেড়ে যাওয়ার মাত্র ২-৩ দিন আগে তাঁরা জনগণের মাঝে বিপুল পরিমাণ খাদ্য সামগ্রী ও ১৪৪৪ হিজরি সনের গবাদি পশুর যাকাত বিতরণ করেছেন। এমন দৃশ্য দেখার পর অনেক বিশ্লেষকরাই সোমালি সেনা কমান্ডারদের পরামর্শ দিয়েছিল, তারা যেনো যুদ্ধ কৌশলে পরিবর্তন আনেন। কেননা শাবাব কর্তৃক কোনো প্রতিরোধ ছাড়াই এলাকাগুলো ছেড়ে যাওয়া ও জনগণকে সহায়তা করা এটা তাদের একটি যুদ্ধকৌশল।

    কিন্তু সেনা কমান্ডাররা শাবাবের এই পিছু হটাকেই নিজেদের বিজয় হিসাবে দেখতে থাকে এবং আরও অহংকারী ও অন্ধ হয়ে উঠে। আর এভাবে ধীরে ধীরে পশ্চিমা সমর্থিত এই গোলাম বাহিনী শাবাবের পাতা ফাঁদে পা দিতে থাকে।

    নতুন বছর শুরু হওয়ার সাথে সাথে শাবাব মুজাহিদিনও এবার নিজেদের কৌশল ও সামরিক নৈপুণ্য প্রদর্শন করতে শুরু করেছেন। তাঁরা রাজধানী মোগাদিশু ও হিরানের কেন্দ্রীয় এলাকাগুলো ছেড়ে গেলেও, রাজ্য দুটির গ্রামীন এলাকার আরও গভীরে ঢুকে পড়েন এবং এখানে নিজেদের শক্তি বৃদ্ধি করেন। সেই সাথে মুজাহিদগণ চলতি মাসের শুরু থেকে সোমালি বাহিনীর দখল করা এলাকাগুলোতে পাল্টা হামলা চালাতে শুরু করেন। যার ফলশ্রুতিতে মুজাহিদগণ গাদ্দার মোগাদিশু সামরিক বাহিনীর দখলে নেওয়া উল্লেখযোগ্য এলাকাই পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছেন।

    সেই ধারাবাহিকতায় হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন চলতি মাসের শুরু থেকে ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত সোমালিয়া জুড়ে অর্ধডজন ইস্তেশহাদী হামলা সহ ১৪৮টি অপারেশন পরিচালনা করছেন। যাতে অসংখ্য গাদ্দার সৈন্য নিহত এবং আহত হয়েছে।

    স্থানীয় সূত্রমতে, চলতি সপ্তাহেই শাবাব মুজাহিদিন ৩টি ইস্তেশহাদী হামলা পরিচালনা করছেন। যার সর্বশেষটি গত ১৭ জানুয়ারি রাজধানী মোগাদিশুর নিকটতম হাওদালী শহরে চালানো হয়েছে। সূত্র জানায়, ইস্তেশহাদী হামলাটি শহরে অবস্থিত গাদ্দার সোমালি বাহিনীর গুরত্বপূর্ণ একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে চালানো হয়েছে। গাড়ি বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে পরিচালিত এই ইস্তেশহাদী হামলার পরপরই ইনগিমাসী মুজাহিদগণ ঘাঁটিতে প্রবেশ করেন এবং ৪৫ মিনিট ধরে সামরিক বাহিনীর সাথে তীব্র লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন।

    প্রাথমিক রিপোর্ট অনুযায়ী, এই অভিযানে মুজাহিদদের হাতে শীর্ষস্থানীয় এক কর্নেল সহ অন্তত ৬৩ মুরতাদ সেনা নিহত হয়েছে, এছাড়াও এই অভিযানে আহত হয়েছে আরও কয়েকগুণ বেশি। বাকি সেনাদের পালিয়ে যাওয়ার পর মুজাহিদগণ সামরিক ঘাঁটি ও উক্ত এলাকার উপর পূনরায় নিজেদের পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠা করেন। সেই সাথে গাদ্দার বাহিনী কর্তৃক সামরিক ঘাঁটিতে জড়ো করা অসংখ্য অস্ত্র-শস্ত্র ও সাঁজোয়া যান মুজাহিদগণ গনিমত লাভ করেন। জানা যায় যে, এই এলাকাটি ইতিপূর্বে সোমালি বাহিনী প্রায় ৪ মাস যুদ্ধ করার পরে দেখলে নিয়েছিল, তাও হারাকাতুশ শাবাব মুজাহিদিন শেষ দিকে কোন প্রতিরোধ ছাড়াই এলাকাটি ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন।

    এই ইস্তেশহাদী হামলাটি ছাড়া বাকি ২টি হামলা মুজাহিদগণ হিরান রাজ্যের হালজান ও জালকাসী শহরে চালিয়েছেন। সূত্রমতে, প্রথম শহিদী হামলাটি সোমালি বাহিনীর দখলে থাকা হালজান শহরের একটি সামরিক ঘাঁটি লক্ষ্য করে একটি শক্তিশালী গাড়ি বোমা বিস্ফোরণে মাধ্যমে চালানো হয়েছে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই ভারী ছিলো যে, সামরিক ঘাঁটির প্রতিটি ভবনের দেওয়াল ধ্বসে পড়ে এবং প্রতিটি সাঁজোয়া যান ও যুদ্ধ সরঞ্জাম ধ্বংস হয়ে যায়। সেই সাথে ঘাঁটিতে অবস্থানরত সমস্ত সৈন্য হতাহত হয়। তবে ঘাঁটি ও উক্ত এলাকা সামরিক বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে থাকায় এই হামলায় শত্রুদের ক্ষয়ক্ষতির সুনির্দিষ্ট সংখ্যা জানা যায় নি। কেননা হামলার পরের কয়েক ঘন্টা ধরে এর আশপাশের কোনো সাংবাদিক ও বেসামরিক লোকদের যেতে দেওয়া হয় নি।

    একই ধরনের অন্য শহিদী হামলাটি চালানো হয় জালকাসী শহরের একটি সামরিক ঘাঁটিতে। এখানেও মুজাহিদদের হামলায় সামরিক ঘাঁটিটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। তবে শত্রু নিয়ন্ত্রিত এলাকা হওয়ায় হতাহতের সঠিক সংখ্যা জানা যায় নি।

    অপরদিকে গত ১৬ জানুয়ারি সোমবার, হারাকাতুশ শাবাব আল-মুজাহিদিন তাদের আরও একটি বীরত্বপূর্ণ অপারেশন পরিচালনা করেন শাবেলি রাজ্যের জালউইন জেলায়। সূত্রমতে, উক্ত হামলাটি দখলদার আফ্রিকান ইউনিয়নের অংশীদার উগান্ডান বাহিনীকে টার্গেট করে চালানো হয়েছে। মুজাহিদদের অতর্কিত এই হামলায় ক্রুসেডার বাহিনীর একটি সাঁজোয়া যান ধ্বংস হয়, সেই সাথে অন্তত ১৬ এর বেশি ক্রুসেডার নিহত এবং আহত হয়।

    সর্বশেষ মুজাহিদগণ আজ ১৮ জানুয়ারি ক্রুসেডার উগান্ডান, বুরুন্ডিয়ান ও কেনিয়ান বাহিনীর ৪টি সামরিক ঘাঁটি গুঁড়িয়ে দিয়েছেন। এসব হামলার হতাহতের বিস্তারিত তথ্য এখনো আমাদের কাছে পৌঁছায়নি।



    লেখক : ত্বহা আলী আদনান

    ১টি মন্তব্য

    মন্তব্য করুন

    দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
    দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

    পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তরপ্রদেশে পুলিশ হেফাজতে মুসলিম ব্যক্তির মৃত্যু: সকালে আটক সন্ধ্যায় লাশ
    পরবর্তী নিবন্ধপ্রিন্স হ্যারির অপরাধ এবং বিশ্ববাসীর নীরবতা!