ভারতের রাজস্থানে হিন্দু শিক্ষকদের মুসলিম বিদ্বেষী আচরণে অতিষ্ঠ হয়ে আত্মহত্যা করেছে এক মুসলিম ছাত্র। দুই মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দিয়েও ন্যায় বিচার পাচ্ছে না নিহতের পরিবার।
রাজস্থানের নুরনগরের বাসিন্দা আব্দুর রাজ্জাক। পুনম চাঁদ বাজাদিয়া স্কুলের দ্বাদশ-শ্রেণির আর্টস বিভাগের নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিল সে। হিন্দু শিক্ষকদের হয়রানি এবং ইসলামোফোবিক আক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে গত ৩১শে জানুয়ারি আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় কিশোর ছেলেটি।
নিহতের বড় ভাই সেলিম খানের দাবি, হিন্দু শিক্ষকদের কাছ থেকে দীর্ঘদিন যাবত অমানবিক আচরণ পেয়ে আব্দুর রাজ্জাক বেশ ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থায় থাকতেন। তাকে ক্লাসে অপমান করা হতো এবং ক্লাসরুমের বাইরে তার সহপাঠীদের সামনে দাঁড় করিয়ে দেওয়া হতো। এমনকি মুসলিম হবার কারণে সে বড় হয়ে সন্ত্রাসী হবে এমন ন্যাক্কারজনক সাম্প্রদায়িক কথার দ্বারা আব্দুর রাজ্জাককে অপমান করত স্কুলের হিন্দু শিক্ষকরা।
অভিযুক্ত হিন্দু শিক্ষকরা তাকে বলত, ‘তুই যেহেতু একজন মুসলিম, তাই তুই সন্ত্রাসী হয়ে যাবি।’
শিক্ষকদের কাছ থেকে এমন আচরণ পেতে পেতে শেষ পর্যন্ত আত্মহত্যার পথ বেছে নেয় আব্দুর রাজ্জাক। তার বাড়ি থেকে প্রায় ২৫০ মিটার দূরে রেইল লাইনে গিয়ে আত্মহত্যা করে সে।
তার মৃত্যুর পর, আব্দুর রাজ্জাকের বড় ভাই রুস্তম খান নাগৌর জেলার লাদনুন থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। সেখানে উল্লেখ করেন যে, তার স্কুলের হিন্দু শিক্ষক ধনরাম প্রজাপত, শশী শর্মা এবং রঞ্জিত ভিঞ্চার আব্দুর রাজ্জাকের সাথে অমানবিক আচরণ করত এবং ইসলাম ধর্ম সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করত। সে মুসলিম তাই ভবিষ্যতে সন্ত্রাসী হবে বলে অপমান করত।
পুলিশ ৩০৬ ধারার অধীনে উপরোক্ত তিন শিক্ষকের নাম উল্লেখ করে একটি এফআইআর নথিভুক্ত করেছে। কিন্তু ঘটনার দুই মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেলেও এখনও তদন্ত শেষ হয়নি। নিহত ছাত্রের পকেট থেকে একটি সুইসাইড নোটও উদ্ধার করেছিল পুলিশ। রুস্তুম বলেছেন, সুইসাইড নোটে আব্দুর রাজ্জাক তার সঙ্গে ঘটে আসা ঘটনার কথা লিখেছেন। তার মৃত্যুর জন্য দায়ীদের নামও সুইসাইড নোটে লেখা আছে।
রুস্তুম খান অভিযোগ করে বলেন, অভিযুক্ত শিক্ষকদের রাজনৈতিক প্রভাব ও সুরক্ষা রয়েছে। এ কারণে তাদের কাউকে এখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। এমনকি পুলিশ তদন্তের বিষয়ে নিহতের পরিবারকেও অবহিত করছে না।
রুস্তমের অভিযোগ, অভিযুক্ত হিন্দু শিক্ষকদের বাঁচাতে পুলিশ সুইসাইড নোট ও অন্যান্য শিক্ষার্থীদের বয়ান পাল্টাতে পারে। ঘটনার পর থেকেই তাদের পরিবারের সঙ্গে পুলিশ অনেক খারাপ আচরণ করে আসছে বলে দাবি করেন রুস্তম।
রাজস্থান মুসলিম যুব সংগঠনের রাজ্য সভাপতি রওশন খান কায়মখানি বলেছেন, নিহতের পরিবার মুসলিম হওয়ায় কেউ তাদের কথা শুনছে না। লাদনুনের কংগ্রেস এমএলএ মুকেশ ভাকর অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারের আশ্বাস দিলেও এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
কায়মখানী আরও অভিযোগ করেছেন, আসামিদের রাজনৈতিক প্রভাব রয়েছে। এ কারণে পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তথ্যসূত্র:
——-
1. Rajasthan: Muslim student dies by suicide after being called “terrorist” by teachers; family demands justice
https://tinyurl.com/4kbbhbzh