আফগানিস্তানের পার্শ্ববর্তী দেশ পাকিস্তান ও ইরান থেকে দেশগুলোর ইসলামবিরোধী সরকারের অমানবিক সিদ্ধান্তের কারণে আফগানিস্তানে ফিরতে বাধ্য হচ্ছেন শরণার্থীরা। বিভিন্ন পথ দিয়ে দেশে প্রবেশ করছেন তারা। ইমারতে ইসলামিয়া আফগানিস্তান এই শরণার্থীদের সাহায্য করার জন্য বেশ কয়েকটি কমিটি গঠন করেছেন। এই সকল কমিটি নিয়মিত আফগান শরণার্থীদের সহায়তা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন এবং স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার জন্য নিয়মিত তদের কার্যক্রমের রিপোর্ট প্রকাশ করছেন।
৩রা ডিসেম্বরের প্রকাশিত রিপোর্টটি তুলে ধরা হলো আল ফিরদাউসের পাঠকদের জন্য:
তুরখাম (কল্পিত ডুরান্ড সীমান্ত)
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
তুরখামে এই কমিটি নতুনভাবে আরও ২০৩ পরিবারের নিবন্ধন করেছেন।
পরিবহন ও স্থানান্তর বিষয়ক কমিটি:
তুরখাম থেকে ৪২ টি পরিবারের ২২১ জন সদস্যকে কাবুল, লাগমান, নানগারহার এবং কোনার প্রদেশে পাঠানো হয়েছে। তাদেরকে ৬৫ হাজার আফগানি মুদ্রা ধার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
অস্থায়ী আবাসন বিষয়ক কমিটি:
উমারি ক্যাম্পে ২২টি তাবু এবং ৮টি টয়লেট নির্মাণ করা হয়েছে। ৮টি ট্যাংকার দিয়ে ১৩০টি ট্যাংকে পানি সরবরাহ করা হয়েছে।
৫০টি পরিবার বর্তমানে ক্যাম্পে অবস্থান করছেন। আর বাকি পরিবারগুলোকে তাদের নিজেদের এলাকায় পাঠানো হয়েছে।
সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি:
সেবা কমিটি উমারি ক্যাম্পে ৬ হাজার শরণার্থীর মাঝে রুটি ও পানি বিতরণ করেছেন।
বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা ২৫০টি কম্বল, ৩৫০ প্যাক মিনারেল পানি, ৩০০ চাদর, জুতা ও কোট, ৩৫০ প্যাক খাদ্য সামগ্রী, এবং ১ লাখ ৩৫ হাজার লিটার পানি দিয়েছেন শরণার্থীদেরকে।
সেবা কমিটির কর্মকর্তারা ৫৮১টি সিম কার্ড বিনামূল্যে শরণার্থীদের মাঝে বিতরণ করেছেন।
তথ্য ও জনসচেতনতা বিষয়ক কমিটি:
এই কমিটি উমারি ক্যাম্প ও কল্পিত ডুরান্ড লাইনের বিভিন্ন অংশে অবস্থান নেওয়া শরণার্থীদের নিয়ে সভা-সমাবেশের আয়োজন করেছেন। এর মাধ্যমে তারা শরণার্থীদেরকে পরবর্তী পদক্ষেপ সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য শেয়ার করেছেন এবং সচেতনতা সৃষ্টির চেষ্টা চালিয়েছেন।
ব্যক্তিগত সুবিধার জন্য শরণার্থী হিসেবে নিজেকে মিথ্যা পরিচয় না দেওয়ার ব্যাপারটিকে তারা গুরুত্বের সাথে আলোচনা করেছেন। যদি এই কাজে কেউ ধরা পড়ে, তবে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন।
ইওএম কার্যালয়ের সাথে সমন্বয় করে শরণার্থীদের মাঝে অভিবাসন সংক্রান্ত ডকুমেন্টও বিতরণ করেছেন এই কমিটি।
অভিবাসীদের কর্মসংস্থান বিষয়ক কমিটি:
তুরখামে এই কমিটি মোট ৩৭৫ জন লোকের নিবন্ধন করেছেন। তাদের মধ্যে ১৯ জন আছেন স্নাতক ডিগ্রিধারী, ৩ জন স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী, ৬ জন হাফেজ, ২জন আলেম, ১জন আলিয়া মাদরাসার সার্টিফিকেটধারী, ১৬৪ জন কর্মী এবং ১৮২ জন পেশাগত দক্ষতাসম্পন্ন ব্যক্তি।
স্পিন বোল্ডাক (কল্পিত ডুরান্ড লাইন)
পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
৫৩২ সদস্যের ৭৮টি পরিবারকে স্পিন বোল্ডাক ও কান্দাহার থেকে হেলমান্দ, কাবুল ও কান্দাহার প্রদেশে স্থানান্তর করা হয়েছে। এই পরিবারগুলোকে ১ লাখ ২৬ হাজার আফগানি ধার হিসেবে দেওয়া হয়েছে।
সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি:
এই কমিটি ৪ হাজার শরণার্থীর জন্য খাদ্য সরবরাহ করেছে এবং উমারি ও শেরানদাম ক্যাম্পে ৮৬ হাজার লিটার পানির ব্যবস্থা করেছে।
স্বাস্থ্য বিষয়ক দল ২৬২ রোগীর চিকিৎসা দিয়েছে, ১,৯৫৪ জন শরণার্থীকে ভ্যাকসিন দিয়েছে, ৮৩৪ জন লোকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করেছেন, এবং ৭টি ম্যালেরিয়া ও করোনা স্যাম্পল নিয়ে গেছেন।
পাকতিকা (কল্পিত ডুরান্ড লাইন)
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
আজ (৩রা ডিসেম্বর) ডুরান্ড লাইনের আংগুর আদায় ৭ টি পরিবারের নিবন্ধন করা হয়েছে।
পরিবহন ও স্থানান্তর কমিটি:
২টি পরিবারকে আংগুর আদা থেকে শরণার্থী শিবিরে পাঠানো হয়েছে এবং পরে তাদের নিজ নিজ জেলা ও গ্রামে পাঠানো হয়েছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা কমিটি:
আংগুর আদার ২টি পরিবারকে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন এই কমিটি। প্রতিটি পরিবারকে ১০ হাজার আফগানি দেওয়া হয়েছে।
সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি:
আংগুর আদায় ২৫ জন শরণার্থীকে চিকিৎসা দিয়েছে এই কমিটি। এছাড়া ৬ জনকে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে, ৮৬ জনের খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া তাদের আবাসনের ব্যবস্থাসহ অন্যান্য প্রয়োজনীয় বিষয়াদির ব্যবস্থা করা হয়েছে।
যোগাযোগ ও তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক কর্মকর্তারা ৯টি সিম কার্ডও বিতরণ করেছেন সেখানে।
তথ্য ও জনসচেতনতা বিষয়ক কমিটি:
এই কমিটি ফিরে আসা শরণার্থীদেরকে তাদের সন্তানের ভবিষ্যৎ ও শিক্ষা ব্যবস্থা বিষয়ে তথ্য সরবরাহ ও পরামর্শ প্রদান করেছেন।
নিমরুজ:
নিবন্ধন, অনুমোদন ও অভ্যর্থনা কমিটি:
সিল্ক রোড দিয়ে দেশে ফেরা ২৩ পরিবারের ৬২ জন সদস্যের নিবন্ধন ও বায়োমেট্রিক সম্পন্ন করা হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় ১২১৭ জন ব্যক্তির নিবন্ধন করা হয়েছে। যাদের মধ্যে ১৮৪ জনের দায়িত্ব আইওএমের কাছে দেওয়া হয়েছে।
অস্থায়ী আবাসন কমিটি:
শরণার্থীদের জন্য তৈরি অস্থায়ী শিবিরে ১৪ পরিবারের ৫২ সদস্যের আবাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাদের দায়িত্বও আইওএমের কাছে দেওয়া হয়েছে।
অর্থ ব্যবস্থাপনা কমিটি:
নিমরুজে ৬ পরিবারকে ১০ হাজার আফগানি দিয়েছে এই কমিটি।
সেবা ও স্বাস্থ্য বিষয়ক কমিটি:
শরণার্থীদের মাঝে ২৬টি সিম কার্ড বিতরণ করা হয়েছে।
তথ্য ও জনসচেতনতা বিষয়ক কমিটি:
ফিরে আসা শরণার্থীদেরকে স্বাস্থ্য ও জনসচেতনতা বিষয়ক সেবা প্রদান করেছে এই কমিটি।
হেরাত
অর্থ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক কমিটি:
হেরাতে ৯টি পরিবারকে ১০ হাজার আফগানি দিয়েছে এই কমিটি।