পশ্চিম আফ্রিকার দেশ মালিতে জান্তা বাহিনীর পাশাপাশি রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার বাহিনীকেও হামলার লক্ষ্যবস্তু বানাচ্ছে আল-কায়েদা সংশ্লিষ্ট প্রতিরোধ যোদ্ধারা। সম্প্রতি অঞ্চলটিতে প্রতিরোধ যোদ্ধাদের ৭টি আক্রমণের শিকার হয়েছে ভাড়াটে মিলিশিয়া দলটি, যার ৩টিতেই অন্তত ১১ ওয়াগনার সদস্য হতাহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রমতে, প্রতিরোধ বাহিনী ‘জেএনআইএম’ যোদ্ধারা গত ২ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার সেগু রাজ্যের জাবেলি শহরে একটি সফল অভিযান পরিচালনা করছেন। অভিযানটি এই অঞ্চলে রাশিয়ার ভাড়াটে ওয়াগনার মিলিশিয়াদের একটি কনভয় টার্গেট করে চালানো হয়েছিল। এতে ওয়াগনার বাহিনীর একটি গাড়ি সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায় এবং অন্য একটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এতে অন্তত ৪ ওয়াগনার সৈন্য নিহত সহ আরও কতক সৈন্য আহত হয়।
অপরদিকে প্রতিরোধ বাহিনীর সাথে যুক্ত আয-যাল্লাকা মিডিয়া এই অভিযানের পরে ওয়াগনার বাহিনীর ক্ষয়ক্ষতির কয়েকটি স্থির চিত্র প্রকাশ করে। এতে নিহত ওয়াগনার সদস্যদের মধ্যে অন্তত ২ জনের শরীরের খণ্ডিত অংশ দেখা যায়।
আয-যাল্লাকা সূত্রে আরও জানা যায়, একইদিন প্রতিরোধ যোদ্ধারা কৌলিকোরো রাজ্যেও একটি অভিযান পরিচালনা করেছেন। অভিযানটি এই রাজ্যের নারা গ্রামে মালিয়ান সেনাবাহিনী এবং ওয়াগনারের একটি যৌথ সামরিক কাফেলা লক্ষ্য করে চালানো হয়। এতে শত্রু বাহিনীর ১টি গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
অপরদিকে ৩ ফেব্রুয়ারি শনিবার, মোপ্তি রাজ্যে ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি অতর্কিত আক্রমণ চালান মুজাহিদগণ। রাজ্যটির বনি শহরে ভারী অস্ত্রে সজ্জিত কয়েক ডজন (জেএনআইএম) যোদ্ধা ওয়াগনার বাহিনীর একটি দলের বিরুদ্ধে এই অভিযানে অংশ নেন।
আয-যাল্লাকা সূত্র অনুযায়ী, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের অতর্কিত এই তীব্র অভিযানে ওয়াগনার বাহিনীর অন্তত ৩ সৈন্য নিহত হয়। বাকিরা আহত ও মনোবল ভেঙে গেলে ময়দান ছেড়ে পালিয়ে যায়। সেই সাথে মুজাহিদগণ ঘটনাস্থল থেকে ক্লাশিনকোভ এবং অন্যান্য অস্ত্র সহ বেশ কিছু গোলাবারুদ ভর্তি বাক্স জব্দ করেন।
এমনিভাবে গত ৯ ফেব্রুয়ারি শুক্রবার, কিদাল শহরের পূর্ব আমজিলাক এলাকায় ওয়াগনার ভাড়াটে বাহিনীর একটি অবস্থানে শক্তিশালী অপারেশন চালান মুজাহিদগণ। সূত্রমতে, মোটরসাইকেলে আরোহী ‘জেএনআইএম’-এর কয়েক ডজন যোদ্ধা এই অভিযানে অংশ নেন। ফলে এলাকাটিতে ওয়াগনার ও প্রতিরোধ যোদ্ধাদের মাঝে প্রায় এক ঘন্টা যাবৎ তীব্র লড়াই সংঘটিত হয়।
আয-যাল্লাকার তথ্য অনুযায়ী, প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে ওয়াগনার বাহিনীর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হতাহতের ঘটনা ঘটে এবং প্রচুর পরিমাণে বস্তুগত ক্ষয়ক্ষতি হয়। ফলে হতাহত ওয়াগনার সদস্যদের ঘটনাস্থল থেকে সরিয়ে নিতে ভাড়াটে বাহিনীর অন্য ইউনিটগুলো হস্তক্ষেপ করে।
এর একদিন পর অর্থাৎ গত ১০ ফেব্রুয়ারি শনিবার, সেগু রাজ্যের ডুগুভেরী এলাকায় ওয়াগনার বাহিনীর বিরুদ্ধে একটি সফল অভিযান চালান মুজাহিদগণ। অভিযানটি প্রথমে ওয়াগনার বাহিনীর গাড়ি লক্ষ্য করে আইইডি বিস্ফোরণের মাধ্যমে শুরু হয়, এরপর মুজাহিদগণ শত্রু সৈন্যদের উপর গুলি চালাতে শুরু করেন। ফলশ্রুতিতে ওয়াগনার বাহিনীর অন্তত ১ সৈন্য নিহত এবং আরও ৩ সৈন্য আহত হয়।
এদিন রাজ্যটির নোনা শহরে ওয়াগনার বাহিনীর একটি গাড়ি লক্ষ্য করে আইইডি বিস্ফোরণ ঘটান মুজাহিদগণ। এতে আরও কতক ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্য হতাহত হয়।
অপরদিকে গত ১৩ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার, ওয়াগনার ভাড়াটে সৈন্যরা মোপ্তি রাজ্যের বন্দজারা এলাকা অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করে। তখন ‘জেএনআইএম’ যোদ্ধাদের মুখোমুখি হয় ভাড়াটে দলটির সদস্যরা। ফলে এলাকাটিতে একটি তীব্র লড়াই সংঘটিত হয়। এসময় প্রতিরোধ যোদ্ধাদের তীব্র আক্রমণে বহু সংখ্যক ওয়াগনার সৈন্য হতাহত হয়। এসমস্ত হতাহত সৈন্যদের এলাকাটি থেকে সরিয়ে নিতে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স ও একটি হেলিকপ্টার হস্তক্ষেপ করেছিল। বাকি ওয়াগনার সৈন্যরা এলাকাটি থেকে পিছু হটতে বাধ্য হয়।