দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসের ‘সেফ জোনে’ হিসেবে ঘোষণা দেওয়া আল-মাওয়াসি এলাকায় ভয়াবহ হামলা চালিয়েছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে ৯০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন প্রায় ৩০০ জন । আহতদের মধ্যে অনেকের অবস্থা গুরুতর। ১৩ জুলাই, শনিবার স্থানীয় মেডিকেল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
সেখানে তাঁবুতে আশ্রয় নেওয়া বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের লক্ষ্য করে যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। গাজা সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র জানিয়েছেন, যে জায়গাটিতে হামলা চালানো হয়েছে, এই স্থানটিকে ইসরায়েল আগে থেকেই ‘সেফ জোন’ হিসেবে ঘোষণা করেছিল।
প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন, শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে এফ-১৬ যুদ্ধবিমান থেকে ৯টির বেশি ভারী ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে বর্বর ইসরায়েলি বাহিনী। যেখানে হামলা চালানো হয়েছে তা দেখে মনে হচ্ছে ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
ওই এলাকার একটি ভিডিওতে দেখা যায়,ধোঁয়া ও ধুলায় ঢেকে গেছে আল-মাওয়াসি এলাকা। সেদিকে ছুটে যাচ্ছে কয়েকটি অ্যাম্বুলেন্স। প্রাণ বাঁচাতে সেখান থেকে ছুটে পালাচ্ছেন নারী, শিশুসহ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিরা। ধোয়াচ্ছন্ন ধ্বংসাবশেষ থেকে রক্তাক্ত অবস্থায় হতাহতদের স্ট্রেচারে করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। অনেকেই আবার ধংসস্তুপ সরিয়ে সেখান থেকে আহতদের উদ্ধারের চেষ্টা করছেন । আহতদের মধ্যে অনেক শিশু ও প্যারামেডিকরাও রয়েছে।
গাজার বেসামরিক প্রতিরক্ষা সংস্থার একজন মুখপাত্র আলজাজিরাকে বলেছেন, ‘নিরাপদ এলাকা’ হিসেবে মনোনীত অঞ্চলে ইসরায়েল যুদ্ধবিমান দিয়ে হামলা চালিয়েছে। বাস্তুহারাদের তাঁবু ও পানি পরিশোধন ইউনিটকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, এ হামলায় তাদের অগ্নিনির্বাপণ ও ও উদ্ধার বিভাগের উপপরিচালক নিহত এবং অন্য আট সদস্য আহত হয়েছেন। বেসামরিক প্রতিরক্ষা দল একটি আবাসিক ভবন থেকে লোকজনকে উদ্ধারের চেষ্টার সময় ইসরায়েলি বিমান আবারও ওই এলাকায় বোমাবর্ষণ করেছিল।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন, ওই এলাকায় একাধিক ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে হামলা চালানো হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে এক নারী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, সবাই মারা গেছে। আমার পরিবারে আর কেউ বেঁচে নেই। আমাদের সন্তানগুলোর শরীর টুকরা টুকরা হয়েছে। ওদের (ইসরায়েল) লজ্জা হওয়া উচিত।
যেখানে হামলা চালানো হয়েছে তার পাশেই থাকা কুয়েত ফিল্ড হাসপাতালের কিছু ভিডিওতে দেখা গেছে, সেখানে আহত অনেকেই মেঝেতে পড়ে আছেন। আহতদের চিকিৎসা করানো নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়েছিল।
কুয়েত ফিল্ড হাসপাতালের প্রধান সুহাইব আল-হামস খান ইউনিসের আল-মাওয়াসি শরণার্থী শিবিরে হামলাকে ‘একটি প্রকৃত গণহত্যা’ বলে অভিহিত করেছেন। ভয়াবহ ওই হামলার পর অ্যাম্বুলেন্স ও সিভিল ডিফেন্স টিমের সদস্যরা ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপর গুলি চালায় ইসরাইলি কোয়াডকপ্টার ড্রোন।”
গাজার মধ্যাঞ্চলে দেইর এল-বালাহ থেকে আলজাজিরার তারেক আবু আজউম জানান, হামলাটি ‘ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর সংঘটিত একটি নতুন গণহত্যা’। ওই এলাকায় ‘পাঁচটি বোমা ও পাঁচটি ক্ষেপণাস্ত্র’ দিয়ে আঘাত করা হয়েছে। আহতদের নাসের ও কুয়েত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি আরো বলেন, ‘যে এলাকাটিকে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে, সেখান থেকে যে দৃশ্যগুলো আসছে, তা অবিশ্বাস্যভাবে রক্তাক্ত ও বিধ্বংসী।’
নাসের হাসপাতালের একজন কর্মকর্তা আলজাজিরাকে বলেছেন, মেডিক্যাল টিমের আর কোনো আহত রোগী গ্রহণের ক্ষমতা ছিল না। বেসামরিক প্রতিরক্ষা দলগুলো আক্রমণের জায়গায় কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
আল-মাওয়াসি এলাকায় ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বারবার হামলা চালিয়েছে। মে মাসের শেষের দিকে একটি হামলায় বাস্তুচ্যুত পরিবারগুলোর তাঁবুতে আঘাত করার পর কমপক্ষে ২১ জন নিহত হয়। জর্দানের আম্মান থেকে আলজাজিরার হামদাহ সালহুত বলেন, ‘আমরা বারবার এমন এলাকায় আক্রমণ দেখেছি, যেখানে হাজার হাজার বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি রয়েছে। এটি এমন একটি কৌশল, যা সাধারণত ইসরায়েলি বাহিনী ব্যবহার করে। এটিকে অনেক বেসামরিককে হত্যার ন্যায্যতা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে।’
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, এ হামলার মধ্য দিয়ে ৭ অক্টোবর থেকে এখন পর্যন্ত গাজায় ইসরায়েলের আগ্রাসনে মোট ৩৮ হাজার ৫০০ জনের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন ৮৮ হাজার ৫২০ জন। এই হতাহত ব্যক্তিদের মধ্যে বেশির ভাগই নারী ও শিশু।
তথ্যসূত্র:
1.Israeli attack on al-Mawasi kills at least 90 people: What we know so far
– https://tinyurl.com/3v8nu55r
2. At least 90 Palestinians reported killed in Israeli strike targeting Hamas military chief
– https://tinyurl.com/jrtpx8hk