মিয়ানমারের বৌদ্ধ মিলিশিয়া গোষ্ঠী “আরাকান আর্মি” রাখাইন রাজ্যে মুসলিম নিধনে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাচ্ছে। অঞ্চলটিতে গত সপ্তাহে মিলিশিয়া দলটির ড্রোন ও আর্টিলারি হামলায় কয়েক শতাধিক রোহিঙ্গা মুসলিম প্রাণ হারিয়েছেন বলে জানা গেছে।
স্থানীয় সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, মিয়ানমারের পশ্চিমাঞ্চলীয় রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্য করে গণহত্যা অব্যাহত রয়েছে। অঞ্চলটিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনী ও বৌদ্ধ সশস্ত্র গোষ্ঠীর (আরাকান আর্মি) হামলার মধ্যে আটকে পড়া রোহিঙ্গা মুসলমানরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। মিলিশিয়া গোষ্ঠীটি আরাকান আর্মির হামলার ফলে শত শত রোহিঙ্গা মুসলিম রাখাইনের মংডু শহরের কেন্দ্রস্থল ছেড়ে গ্রামীণ এলাকা ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী নাফ নদীর তীরে আশ্রয় নিয়েছেন।
কিন্তু এই গ্রামীণ এলাকাগুলোও নতুন করে রোহিঙ্গাদের জন্য অনিরাপদ হয়ে উঠেছে। গত ৫ আগস্ট থেকে মংডুর রোহিঙ্গা মুসলিমদের লক্ষ্য করে ব্যাপক ড্রোন ও আর্টিলারি হামলা চালাতে শুরু করে আরাকান আর্মি। এদিন নাফ নদীর তীরবর্তী এলাকায় বর্বরোচিত হামলায় অন্তত ২০০ রোহিঙ্গা মুসলিম নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন আরও অসংখ্য লোক। অঞ্চলটির অন্যান্য এলাকায়ও এদিন মিলিশিয়াদের চালানো হামলায় আরও কয়েক ডজন মুসলমান প্রাণ হারিয়েছেন।
এমনিভাবে গত ৭ আগস্ট বুধবার বিকালেও মংডুতে ভারী মিসাইল হামলা চালিয়েছে আরাকান আর্মি। এতে অন্তত ১০ জন নিহত এবং শতাধিক রোহিঙ্গা আহত হয়েছেন। মিলিশিয়াদের বর্বরোচিত এসকল হামলায় হতাহতের মধ্যে বড় একটি সংখ্যকই হচ্ছেন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা।
স্থানীয় একজন মানবাধিকার কর্মী এই অঞ্চলের ঘটনা সম্পর্কে সোশ্যাল মিডিয়াতে লিখেন: “মংডুর পরিস্থিতি এখন মারাত্মক বিপর্যয়ে পরিণত হয়েছে। অঞ্চলটির রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে ২০১৭ সালের পর বর্বরতা দ্বিতীয়বারের মতো তীব্র আকার ধারণ করেছে। সেখানকার লোকজন শহরের কেন্দ্র থেকে সম্পূর্ণভাবে বিতাড়িত হয়েছেন। এখন তারা মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে আটকা পড়েছেন।”
কিন্তু সীমান্ত এলাকাগুলোতেও তারা নিরাপদ নয়। কেননা মিয়ানমারের জান্তা ও আরাকান আর্মির সশস্ত্র সংঘর্ষে ড্রোন, আর্টিলারি ও ভারী অস্ত্রের আঘাতের সহজ লক্ষ্যবস্তু হয়ে উঠছেন রোহিঙ্গা মুসলিমরা। আর গোলাগুলির এসব বিকট শব্দে মাঝেমধ্যে বাংলাদেশের সীমান্ত এলাকাও কেঁপে উঠছে।
এমতাবস্থায় রোহিঙ্গা মুসলিমরা নতুন করে দেশ ছেড়ে পালানোর উপায় খুঁজতে নাফ নদীর তীরে একত্রিত হচ্ছেন। এদের অনেকেই নদী পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে ঢুকার চেষ্টা করছেন, এসময় নৌকা ডুবে নিহতের মতো ঘটনাও ঘটছে।
এরফলে গত মঙ্গলবার ও বুধবার বিকাল পর্যন্ত বাংলাদেশের টেকনাফের শাহপরী দ্বীপের নাফ নদীতে ভেসে আসা ৩৪ জন রোহিঙ্গা মুসলিমের মৃতদেহ পাওয়া গেছে। টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গনি জানান, উদ্ধার করা নিহতদের মধ্যে ১৫টি শিশু রয়েছে।
রাখাইনে যুদ্ধের মুখে পালাতে গিয়ে রোহিঙ্গাদের বহনকারী নৌকা ডুবির ঘটনায় প্রাণে রক্ষা পান রোহিঙ্গা নারী তবেদিলা বেগম। তিনি গণমাধ্যমকে জানান, “মিয়ানমারের আরাকান আর্মি ও সশস্ত্র বাহিনীর মধ্যে চলমান যুদ্ধে রাখাইনের মংডু শহর, ফয়েজি পাড়া ও আলী পাড়ায় ব্যাপক বোমা হামলা চলছে। এতে মানুষ মারা যাচ্ছেন। সেখানে সারি সারি মানুষের লাশ পড়ে আছে। তাই আমরা প্রাণে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছি।”
তিনি বলেন, “নৌকায় আমার দুই মেয়েসহ চার জন সদস্য ছিল। ছোট মেয়ে এবং এক নাতনির মৃতদেহ পাওয়া গেছে। বাকিদের খোঁজ মেলেনি এখনো। আমরা সবাই গুলির মুখে পড়ে এখানে পালিয়ে আসতে রওনা করেছিলাম।