বার্ষিক কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন উপস্থাপন করল ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়

0
188
বার্ষিক কর্মসম্পাদন প্রতিবেদন উপস্থাপন করল ইমারতে ইসলামিয়া

গত ১৫ই আগস্ট ইমারতে ইসলামিয়া সরকার ক্ষমতা গ্রহণের ৩য় বছর পূর্ণ হল। সম্প্রতি আফগানিস্তানের সরকারি মিডিয়া ও তথ্য কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গত এক বছর অর্থাৎ ৩য় বছরের সম্পাদিত কার্যক্রম উপস্থাপন করেছেন সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ। বিগত বছরে মন্ত্রণালয়টির গৃহীত উদ্যোগসমূহের মধ্যে অন্যতম কয়েকটি হল দেশের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক প্রতিষ্ঠান ও জনবহুল স্থানসমূহে ব্যাপক ইসলামি দাওয়াত ও তালিম-তরবিয়ত কর্মসূচির আয়োজন, সরকারি চাকুরীজীবীদের সক্ষমতা বৃদ্ধি জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন, একাধিক সরকারি সংস্থার আইনি ও নিয়ন্ত্রণ কাঠামোর খসড়া প্রস্তুতি, সরকারের জারিকৃত ডিক্রি ও নির্দেশনাসমূহ সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা এই লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট দপ্তরসমূহে অডিট পরিচালনা ইত্যাদি।

সৎ কাজে আদেশ এবং অসৎ কাজে নিষেধ কর্মসূচি:

বিগত এক বছরে একাধিক প্রতিষ্ঠান ও জনবহুল স্থানসমূহে ব্যাপক ইসলামি দাওয়াত ও নসিহতমূলক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এই সকল প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে ২৭ হাজার ৫১৮টি সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা, ৪ লক্ষ ১৯ হাজার ৩৬৯টি মসজিদ, ৯৬ হাজার ৩৫৫টি শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান, ৬৮ হাজার ৯৭৯টি হোটেল-রেস্তোরা, ৩৯ হাজার ২১৮টি নাপিতের দোকান ও বাথহাউজ, ১৫ হাজার ৫৭৫টি স্পোর্টস ক্লাব এবং ৫০০টি দর্জির দোকান। এছাড়া বিগত এক বছরে মন্ত্রণালয়টির উদ্যোগে দেশব্যাপী ২হাজার ৪৬৯টি সভার আয়োজন করা হয়েছিল। সভা আয়োজনের উদ্দেশ্য ছিল অপরাধের বিস্তার, সামাজিক কুপ্রথা, ইসলামী আদর্শ পরিপন্থী মতবাদ নিয়ন্ত্রণ করা।

সরকারি প্রতিষ্ঠানসমূহে শরীয়াহ ভিত্তিক নিয়ম-নীতি সমুন্নতকরণ কর্মসূচি:

ইসলামী শরীয়াহ’র আলোকে ১১টি সরকারি সংস্থার নীতি ও কৌশলগত পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। তালেবান সরকারের জারিকৃত ডিক্রি ও নির্দেশনাসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে কিনা সেই লক্ষ্যে ৫৪টি সরকারি প্রতিষ্ঠানে তদারকি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাগণ। ৭ হাজার ২২ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও প্রশিক্ষকের সমন্বয়ে ১০৪টি সক্ষমতা বৃদ্ধি (ক্যাপাসিটি বিল্ডিং) প্রশিক্ষণ কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে, একই সাথে চাকুরীজীবীদের সরকারি নিয়ম-নীতি পালন সহজবোধ্য করতে কারিকুলাম প্রণয়ন করা হয়েছে। বলা বাহুল্য যে, ইসলামি অনুশাসনের সাথে সমন্বয় রেখেই চাকরি সংশ্লিষ্ট নিয়ম-নীতিসমূহ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এছাড়া মিডিয়া ও প্রচার কেন্দ্রসমূহ সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সংস্কার কর্মসূচি পরিচালনা করেছে উক্ত মন্ত্রণালয়। এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ মিডিয়ায় (অডিও, ভিডিও ও প্রিন্ট) এই কর্মসূচি বাস্তবায়িত হয়েছে আলহামদুলিল্লাহ।

অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তি কর্মসূচি:

নাগরিকদের অভিযোগ-আপত্তি গ্রহণ করতে আমিরুল মুমিনীনের অনুমোদিত বিনামূল্যে হটলাইন সেবা (নম্বর ১৯১) চালু করেছে উক্ত মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে গত এক বছরে ৯ হাজার ৮০৮টি অভিযোগ নিবন্ধিত হয়েছে। এই অভিযোগসমূহের মধ্যে ৫ হাজার ৪৮৬টি সফলভাবে সমাধান করেছে মন্ত্রণালয়টি। অভিযোগসমূহের আওতায় নারীর উত্তরাধিকার আইন নিশ্চিত করা, নারী ব্যবসা বন্ধ করা, হারাম বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করা, তাবিজ ও কালোযাদু অনুশীলন নির্মূল করা ইত্যাদি ক্ষেত্রে ব্যাপক অভিযান পরিচালনা করেছে এই প্রশাসন।

নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা:

ইসলামি শরীয়তে নারী সমাজের রয়েছে বিশেষ অধিকার ও মর্যাদা। ইমারতে ইসলামিয়া সরকার এই অধিকার সমুন্নত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। গত এক বছরে সর্বমোট ৭৮৯টি মামলার ক্ষেত্রে উত্তরাধিকার বঞ্চিত নারীদের তাদের ন্যায্য অধিকার নিশ্চিত করেছে এই সরকার। এছাড়া জোরপূর্বক বিবাহ সংক্রান্ত ৩৩৮টি ও নারী ক্রয়-বিক্রয় সংক্রান্ত ২৯৫টি অভিযোগ সুষ্ঠুভাবে সমাধান করা হয়েছে। নারী সহিংসতা বা হয়রানির স্বীকার হয়ে দায়েরকৃত ২হাজার ৬৩৮টি অভিযোগ প্রাথমিকভাবেই নিষ্পত্তি করেছে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়।
এর বিপরীত দৃশ্য আমরা দেখতে পাই বর্তমান পশ্চিমা দেশ ও ইসলাম বিবর্জিত সমাজে। যেখানে নারী প্রতিনিয়তই নানা হেনস্থার স্বীকার হচ্ছে, বঞ্চিত হচ্ছে তার প্রাপ্য অধিকার থেকেও।

অপরাধ নিয়ন্ত্রণ:

মদ, জুয়া, বাদ্যযন্ত্র, অশ্লীলতা, কালোযাদু এসব অপরাধ বর্তমানে প্রায় প্রতিটি দেশেই ব্যাপক রূপ ধারণ করেছে। ইসলাম বিবর্জিত দেশসমূহে এই সমস্যাগুলো সমাধানে কার্যকর কোন উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। কিন্তু ইমারতে ইসলামিয়া প্রশাসন প্রথম থেকেই এই অপরাধগুলো নির্মূলে অভিযান পরিচালনা করে এসেছে।

গত এক বছরে ২১ হাজার ৩২৮টি বাদ্যযন্ত্র ধ্বংস করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক পর্যায়ে ৩০ হাজার অনৈতিক চলচ্চিত্র নিষিদ্ধ ও নির্মূল করা হয়েছে, পাশাপাশি হুক্কা লাউঞ্জ ও জুয়ার প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ২৫ হাজার ৬৪৭টি ব্যক্তিগত কম্পিউটার থেকে অশ্লীল ফিল্ম অপসারণ করেছেন কর্মকর্তাগণ। এছাড়া ২৫টি মদের দোকান বন্ধ করা হয়েছে, একই সাথে ১৩ হাজার ২৫০টি মাদক ট্যাবলেটের ব্যবহার নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে। শিরকি তাবিজ প্রস্তুতকারী ৪৪৮ জন ও কালোযাদু অনুশীলনকারী ৫২৮জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বিভিন্ন অপরাধে জড়িত এক হাজারের অধিক ব্যক্তিকে বিচার বিভাগে প্রেরণ করেছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাগণ।

অন্যান্য কার্যক্রম:

মন্ত্রণালয়ের মধ্যস্থতায় গত এক বছরে ১হাজারের অধিক পারস্পরিক শত্রুতার সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে পরিবর্তিত হয়েছে। অনৈতিক কার্যকলাপে জড়িত ১৩ হাজার ৩৯১ জন ব্যক্তিকে সংশোধনের জন্য সাময়িক শাস্তি দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রায় ৩০০ জন নাবালক ব্যক্তিকে সরকারি পদ থেকে অপসারণ করেছে ইমারতে ইসলামিয়া সরকারের এই মন্ত্রণালয়।

উক্ত সংবাদ সম্মেলন চলতি বছরের পরিকল্পনাও তুলে ধরেছে তালেবান সরকারের সৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে অন্যতম হল বিভিন্ন সরকারি সংস্থা পরিচালনার জন্য গৃহীত আইনি ও নিয়ন্ত্রণ নথিসমূহ চূড়ান্ত করা, অনুমোদিত নীতিসমূহ হালনাগাদকরণ, সামরিক দপ্তরগুলোর মধ্যে দাওয়াতি কার্যক্রম আরও বেগবান করা, সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রশিক্ষণ কর্মসূচি সমৃদ্ধকরণ, জনগণের চিন্তা-চেতনায় দ্বীন ইসলামের প্রভাবকে আরও সমুন্নত করা ইত্যাদি।


তথ্যসূত্র:
1. Vice-Virtue Ministry Announces Major Strides in Women’s Rights
– https://tinyurl.com/bp9psjjv
2. Ministry of Vice and Virtue Presents Annual Performance Report
– https://tinyurl.com/4barn2fx

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধবন্যাদুর্গতদের সহায়তায় ৫০০ টন ত্রাণ নিয়ে প্রস্তুত আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশন
পরবর্তী নিবন্ধসৎ কাজে আদেশ ও অসৎ কাজে নিষেধ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি আইন অনুমোদন করেছেন আমিরুল মুমিনীন