ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় অভিযান চালাচ্ছে সন্ত্রাসী ইসরায়েল। এ অভিযানে একের পর এক ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আটক করেছে, তাদের ইসরায়েলের বন্দী কেন্দ্রে নির্বাসিত করেছে তারা। এরপর কারাগারে আটকে তাদের ওপর অমানুষিক নির্যাতন চালাচ্ছে সন্ত্রাসী ইসরায়েল।
গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে সন্ত্রাসী ইসরায়েলি বাহিনী ৭ অক্টোবর থেকে অন্তত ৩১০ ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীকে আটক করেছে। একটি বেসরকারি সংস্থা, হেলথকেয়ার ওয়ার্কার্স ওয়াচ-প্যালেস্টাইন, ২৫৯ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের আটকের নথিভুক্ত করেছে এবং ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষের নির্যাতন ও অন্যান্য নির্যাতনের বর্ণনা সহ ৩১ টি প্রমান সংগ্রহ করেছে। সংস্থাটি জানায়,স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের নির্বিচারে আটক ও দুর্ব্যবহার গাজায় স্বাস্থ্য সংকটকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে।
মুক্তিপ্রাপ্ত ডাক্তার, নার্স এবং প্যারামেডিকরা ইসরায়েলি সেনাদের হাতে বেধড়ক মারপিট, বৈদ্যুতিক শক, অমানবিক আচরণ, ধর্ষণসহ নানা ধরনের নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হওয়ার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরেছেন। তারা বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদকালে তাদের ঘুষি ও লাথি মারা হয়েছে। পেটানো হয়েছে লাঠি-রাইফেলের বাঁট ও ধাতব দ্রব্য শনাক্ত করার কাজে ব্যবহৃত যন্ত্র দিয়ে। তারা ইসরায়েলি বাহিনীর ধর্ষণ ও যৌন নিপীড়ন সহ বিভিন্ন নির্যাতনের কথাও জানিয়েছে।
মার্চ থেকে জুন ২০২৪ পর্যন্ত,আটজন ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের সাক্ষাৎকার নেয়া হয়েছে যাদেরকে ২০২৩ সালের নভেম্বর থেকে ডিসেম্বরের মধ্যে গাজা থেকে ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী আটক করেছিলো। তাদেরকে সাত দিন থেকে পাঁচ মাস পর্যন্ত কোনো চার্জ ছাড়াই আটকে রেখেছিল।
সেনাদের মারধরে পাঁজরের হাড় ভেঙে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন দুজন বন্দি। তাদের একজন দাবি করেছেন, তাকে হাঁটু দিয়ে বুকে আঘাত করা হয়েছেন। অন্যজন বলেছেন, তাকে লাথি দেওয়া হয়েছে এবং রাইফেল দিয়ে মারা হয়েছে। সাতজন বন্দি বলেছেন, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের শুধু ডায়াপার পরে থাকতে বাধ্য করা হয়। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার দাবি করেছেন তিনজন বন্দি।
একজন সার্জন বলেছিলেন যে ডিসেম্বরে গাজার বেইত লাহিয়ার কামাল আদওয়ান হাসপাতালে তাদের অবরোধের সময় ইসরায়েলি বাহিনী যখন তাকে আটক করেছিল তখন তিনি “স্ক্রাব এবং ক্রোক পরেছিলেন। তিনি বলেন, “আমরা নার্স এবং ডাক্তার সহ ৫০ জন স্বাস্থ্যসেবা কর্মী ছিলাম,যখন তারা আমাদের হাসপাতাল থেকে বের করে নিয়ে গিয়েছিল, তারা আমাদের পোশাক খুলে শুধু অন্তর্বাস পরে থাকতে বাধ্য করেছিলো।”
এর আগে ইসরায়েল জুলাইয়ের শুরুতে আটক কয়েক ডজন ফিলিস্তিনিকে মুক্তি দিয়েছে, যার মধ্যে আল-শিফা হাসপাতালের পরিচালক মুহাম্মদ আবু সালমিয়া রয়েছেন। তিনি বলেছিলেন, ফিলিস্তিনিরা কারাগারে প্রতিদিন নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। মুক্তির পর সালমিয়া এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘বেশ কিছু বন্দি জিজ্ঞাসাবাদকেন্দ্রে মারা গেছে এবং খাবার ও ওষুধ থেকে বঞ্চিত হয়েছে।’ তিনি বন্দিদের মারধরের কথাও জানিয়েছিলেন।
তথ্যসূত্র:
1. Israel tortured Palestinian healthcare workers in Gaza, say HRW
– https://tinyurl.com/md4a2tz7