উচ্চশিক্ষায় সুশাসনের দায়িত্বে থাকা ইউজিসির সাজ্জাদ নিজেই দুর্নীতিবাজ

0
119

দেশের উচ্চশিক্ষায় সুশাসন নিশ্চিতে কাজ করার কথা সরকারি প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি)। সরকারি এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী এই সংস্থায় একজন চেয়ারম্যান ও ৫ জন পূর্ণকালীন সদস্য রয়েছে। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর পদত্যাগ করেছে ইউজিসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ।

অন্যদিকে, হাসিনা সরকার পতনের পর ইউজিসির কয়েকজন সদস্য নিয়মিত অফিসে উপস্থিত থাকছে না। কোনো কোনো সদস্য এখন পর্যন্ত এক থেকে দুইদিন ইউজিসিতে এসেছে। ফলে ইউজিসির নিয়মিত কার্যক্রম বিঘ্নিত হচ্ছে বলে জানা গেছে।

নিয়মিত অফিসে অনুপস্থিত সদস্যের মধ্যে অন্যতম পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছে অধ্যাপক ড. সাজ্জাদ হোসেন। কমিশনের আইএমসিটি এবং রিসার্চ সাপোর্ট এন্ড পাবলিকেশন ডিভিশনের দায়িত্ব পালন করতো সে।

উচ্চশিক্ষায় সুশাসনের দায়িত্বে থেকে নিজেই নানা অপকর্মে জড়িয়েছে অধ্যাপক সাজ্জাদ। এ নিয়ে সব সময় আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকতো সে। এ কারণে সরকার পতনের পর সে অফিসে আসতে চাইলেও তাকে ইউজিসির কর্মকর্তাদের তোপের মুখে পড়তে হয়েছে। ফলে অফিসে আসতে পারেনি সে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সে ছুটি নিয়েছে বলে জানা গেছে।

২০১৯ সালের মাঝামাঝিতে প্রথমবারের মতো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সে ৪ বছরের জন্য ইউজিসির পূর্ণকালীন সদস্য হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিল। এরপর ২০২৩ সালে দ্বিতীয় মেয়াদে ফের দায়িত্ব পায়।

জানা যায়, অধ্যাপক সাজ্জাদের আগে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কেউ ইউজিসির সদস্য পদে নিযুক্ত হয়নি। সদস্য পদে নিযুক্ত হওয়ার পরে ‘অদম্য বাংলাদেশ’ নামে শেখ মুজিবুর রহমান এবং শেখ হাসিনাকে নিয়ে তার লেখা একটি বই বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বাধ্যতামূলক ক্রয়ের জন্য নোটিশ পাঠাতো সে। কয়েকটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টদের সূত্র দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছে দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাস।

অধ্যাপক সাজ্জাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে ইউজিসি কর্তৃক আয়োজিত বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগের গুণগান করে সময় কাটাতো সে। বিষয়টি নিয়ে এতদিন ক্ষুব্ধ থাকলেও ভয়ে কেউ মুখ খোলেননি।

জানা গেছে, ড. সাজ্জাদের বাড়ি চট্টগ্রাম হওয়াতে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ‍তোলে সে। পরে নওফেলের সুপারিশে তাকে ইউজিসির সদস্য হিসেবে নিয়োগ করা হয়। তবে ইউজিসির সদস্য হিসেবে ড. সাজ্জাদের যোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও পরপর দুই মেয়াদে সে নিয়োগ পায়।

এ প্রসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক দ্যা ডেইলি ক্যাম্পাসকে বলেন, ড. সাজ্জাদ বিএনপি-জামায়াতের সময়ও সুবিধা নিয়েছেন এরপর আওয়ামী লীগের সময়েও। শুধুমাত্র নওফেলের সুপারিশে তিনি ইউজিসিতে আসতে পেরেছেন। তার আর কোনো যোগ্যতা ছিল না। অথচ তার চেয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক জ্যেষ্ঠ অধ্যাপক এ পদে আসার মতো ছিলেন। তিনি এ পদে এসে সরকার ও আওয়ামী লীগের গুণগান ছাড়া কোনো কিছুই করতে পারেননি বলে মনে হয়েছে আমার। এমনকি আমি একটি অনুষ্ঠানে এটা নিয়ে প্রতিবাদও করেছিলাম।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইউজিসির একজন সিনিয়র কর্মকর্তা জানান, অধ্যাপক সাজ্জাদের যে যোগ্যতা সে অনুযায়ী তিনি সদস্য হওয়ার কথা না। বিশেষ সুপারিশে তিনি সদস্য হয়েছিলেন। এমনকি ইউজিসির বিভিন্ন কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে বিভিন্ন সময় খারাপ আচরণ করেছেন। অনেকের পদোন্নতি আটকে দিয়েছিলেন। ফলে সবাই তার উপর ক্ষুব্ধ।

২০২১ সালের শেষের দিকে শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদ্‌যাপন ও মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে ৪র্থ শিল্প বিপ্লবের ওপর একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন করে ইউজিসি। সেই সম্মেলন থেকে সে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। শুধু তাই নয়, নানা সময়ে বিভিন্ন অনুষ্ঠান আয়োজনের কথা বলে একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোটি কোটি টাকা স্পনসর আনতো সে।

ইউজিসির আরেক পূর্ণকালীন সদস্য অধ্যাপক ড. বিশ্বজিৎ চন্দ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগে দায়িত্ব পালন করতো। জানা যায়, ড. বিশ্বজিৎ চন্দের বাবা নারায়ণ চন্দ্র চন্দ আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দুই মেয়াদে মন্ত্রিত্ব পালন করে। প্রথমে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী এবং ২০২৪ সালে আওয়ামী লীগ পুনরায় সরকার গঠন করলে সে ভূমিমন্ত্রীর দায়িত্ব পায়।

জানা যায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক মূলত বাবার প্রভাবে ইউজিসির সদস্য হয়েছিল। ইউজিসিতে তার মেয়াদ শেষ হবে চলতি আগস্ট মাসে। ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে সে-ও বর্তমানে ছুটিতে আছে।


তথ্যসূত্র:
১. উচ্চশিক্ষায় সুশাসনের দায়িত্বে থেকে নিজেই নানা অপকর্মে জড়ান ড. সাজ্জাদ – https://tinyurl.com/ynwsthw4

মন্তব্য করুন

দয়া করে আপনার মন্তব্য করুন!
দয়া করে এখানে আপনার নাম লিখুন

পূর্ববর্তী নিবন্ধউত্তরপ্রদেশে গরুর গোশত রাখার মিথ্যা অভিযোগে পুলিশের অভিযানে ৫৫ বছর বয়সী মুসলিম মহিলার মৃত্যু
পরবর্তী নিবন্ধবার্ষিক প্রতিবেদন প্রদান করল ইমারাতে ইসলামিয়ার কৃষি ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়